করোনার বিস্তার রোধে সুযোগ তৈরি হয়েছে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

করোনাভাইরাস বড় ধরনের বৈশ্বিক সংকট হয়ে ওঠা ঠেকাতে সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস অ্যাডহানম গ্রেব্রেইয়েসুস বলেছেন, ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীনের নেওয়া পদক্ষেপ এর বিস্তার রোধে জোরালো ভূমিকা রেখেছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে চীন বিশ্বব্যাপী কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে চীনের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশংসাসূচক মন্তব্য এল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের কাছ থেকে।

আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে অনুষ্ঠিত এক কারিগরি ব্রিফিংয়ে টেড্রস প্রাদুর্ভাবের স্থান হুবেই প্রদেশের উহান শহরে চীনের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। প্রাদুর্ভাবের পর চীন কোটি অধিবাসীর প্রদেশটিকে অবরুদ্ধ করে দেয় এবং সেখানে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

টেড্রস বলেন, ‘ঘটনাস্থল, ভাইরাসের উৎসে চীনের উচ্চপর্যায়ের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে সেখানে কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর আরও বিস্তার রোধে ও এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চলুন এই সুযোগকে কাজে লাগাই।’ উন্নত দেশগুলো ডেটা বিনিময়ে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এর মাত্র এক দিন আগে চীনের শীর্ষ নেতারা করোনাভাইরাস নিয়ে দেশটির ‘দুর্বলতা ও ঘাটতির’ কথা স্বীকার করেন। চীনের শাসক দলের পলিটব্যুরো স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা এই স্বীকারোক্তি দেন। কমিটি চীনের জরুরি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নত করার আহ্বান জানায় এবং অবৈধ বন্য প্রাণীর বাজারের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের নির্দেশ দেয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। প্রাদুর্ভাবের শুরুতে ঘটনার ভয়াবহতা কমিয়ে প্রকাশ করা এবং ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ ছিল চীনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

চীনের উহান শহরে পথচারীরা মাস্ক পরে চলাচল করছে। ছবি: এএফপি
চীনের উহান শহরে পথচারীরা মাস্ক পরে চলাচল করছে। ছবি: এএফপি

টেড্রস চীনে ভ্রমণ ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করতে বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, ইতিমধ্যে ২২টি দেশ আনুষ্ঠানিক এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তিনি স্বল্প সময়ের জন্য পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বিষয়টি নিয়মিত পর্যালোচনার আহ্বান জানান।
জেনেভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত চেন জু বলেছেন, কিছু নিষেধাজ্ঞা জাতিসংঘের পরামর্শের বিরুদ্ধে চলে গেছে। দেশগুলোকে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া না দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে শুধু গতকাল মঙ্গলবারই করোনাভাইরাসে নতুন করে চার হাজার আক্রান্ত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯০। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়।

চীনে এখন ২৪ হাজার ৩০০ জনের বেশি করোনোভাইরাসে আক্রান্ত। চীনের বাইরে ফিলিপাইন ও হংকংয়ে দুজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এই পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের (এনএইচসি) তথ্য অনুসারে, মৃত ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং এর ৭৫ শতাংশ ব্যক্তির হৃদ্‌রোগ এবং ডায়াবেটিস ছিল আগে থেকেই। করোনাভাইরাস থেকে শ্বাসতন্ত্রে বড় ধরনের সংক্রমণ হয়। অসুস্থতা শুরু হয় জ্বর নিয়ে। পরে শুকনা কাশি হয়। করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন বলে মনে করা হচ্ছে, যেমন মানুষ জ্বর থেকে সুস্থ হয়।