এনআরসি নিয়ে মোদি চুপ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি

সারা দেশের জন্য নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি তৈরির সংকল্প থেকে বিজেপি কি তাহলে সরে আসছে? প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠল কারণ, আজ বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিরোধীদের বিস্তর প্রশ্ন সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এনআরসি নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না। অথচ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করলেন বিস্তারিত। সেই সঙ্গে জানালেন, সিএএর মাধ্যমে তাঁর সরকার সাংবিধানিক দায়িত্বই পালন করেছে।

যুগ্ম সংসদীয় অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাবের জবাবি ভাষণ দিতে উঠে মোদি নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। এই আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যে আন্দোলন চলছে, বিশেষ করে দিল্লির শাহিনবাগে, মোদি সে বিষয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, সিএএকে বিরোধীরা সংবিধানবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক বলে বর্ণনা করছে। কিন্তু নাগরিকত্ব আইনের এই সংশোধন পুরোপুরি সাংবিধানিক দাবি মেনেই তৈরি। এই প্রসঙ্গে তিনি দেশভাগের পর পাকিস্তানের তৎকালীন নেতাদের অভিজ্ঞতার উল্লেখ করেন।

সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানি নেতা যোগেন মণ্ডল ও ভূপেন দত্ত কী বলেছিলেন, তা জানান। টেনে আনেন জওহরলাল নেহরুর কথাও। বলেন, দেশভাগের পর আসামের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলুইকে চিঠি লিখে নেহরু বলেছিলেন, হিন্দু শরণার্থী ও মুসলমান অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে পার্থক্যটা অনুধাবন করতে হবে। মোদি বলেন, দেশভাগের অসম্পূর্ণ কর্তব্য শেষ করতেই তাঁরা সিএএ এনেছেন। এটাই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্য সরব। আন্দোলনও অব্যাহত। কোনো কোনো রাজ্য এই আইন বলবৎ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই রাজ্যগুলোকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিতে ছাড়েননি। কংগ্রেসশাসিত রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই রাজ্যগুলোর জনতা আইন বলবৎ করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে সামাল দেওয়া যাবে তো?

প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর ভাষণে একাধিকবার বলেন, সিএএ নিয়ে দেশের ১৩০ কোটি মানুষের কোনো চিন্তা থাকা উচিত নয়। কারণ, এই আইনে কোনো ভারতীয়র নাগরিকত্ব কাড়া হবে না। দেওয়া হবে তাঁদের, যাঁরা প্রতিবেশী তিন দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু। যাঁরা অত্যাচারিত হয়ে ভারতে চলে এসেছেন।

বিরোধীরা তবু সরব, কারণ তাঁরা সিএএ এবং এনআরসিকে পৃথকভাবে দেখতে চাইছেন না। গত বছর জুন মাসে রাষ্ট্রপতি সংসদের যৌথ অধিবেশনে তাঁর ভাষণে সিএএ ও এনআরসির উল্লেখ করে বলেছিলেন, তাঁর সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই দুটি বলবৎ করবে। নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পেশ করার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, প্রথমে আসবে সিএএ, তারপর এনআরসি। সংসদে তিনি এ কথাও বলেছিলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে সারা দেশে এনআরসি চালু হবেই। কিন্তু প্রবল বিরোধিতার মুখে এরপর সরকার ক্রমে পিছিয়ে আসতে থাকে।

প্রথমে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় জানান, এনআরসি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। এরপর বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণেও এনআরসির কোনো উল্লেখ ছিল না। গত মঙ্গলবার সংসদে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইও এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে জানান, এখনই সারা দেশে এনআরসি করার কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। সিএএ নিয়ে কথা বলার সময় বৃহস্পতিবার বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীকে বারবার এনআরসি নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন। কিন্তু একবারের জন্যও প্রধানমন্ত্রী এনআরসি প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি। সংসদ ভবনের গুঞ্জন, সিএএ সফল করতে অনড় বিজেপি এখনই এনআরসি নিয়ে নতুন বিতর্কে জড়াতে রাজি নয়। তারা বরং অপেক্ষা করবে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে কাশ্মীর প্রসঙ্গও বিস্তারে আলোচনা করেন। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারকে তিনি সাংবিধানিক কর্তব্য বলে বর্ণনা করেন। বলেন, কাশ্মীরে ভারতীয় সংবিধান চালু করাটা তাঁদের কর্তব্য ছিল।

মোদি বলেন, ফারুক আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতি বা ওমর আবদুল্লাদের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দিলে কাশ্মীর ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হবে, কাশ্মীরে ভারতের পতাকা তোলার লোক পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, কাশ্মীর কিন্তু ভারতেই আছে। সারা দেশের সঙ্গে সেখানেও উন্নয়ন অব্যাহত।

কাশ্মীরের তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ছয় মাস ধরে বন্দী। তিনজনের মধ্যে ৮৩ বছরের ফারুক আবদুল্লাহ লোকসভার নির্বাচিত সদস্য। তাঁরা কবে মুক্তি পাবেন বা পেতে পারেন, সে নিয়ে চাপিচাপি সত্ত্বেও মোদি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।