দিল্লিতে উন্নয়ন, নাকি হিন্দু জাতীয়তাবাদ - বেছে নেওয়ার ভোট শুরু

ভারতের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিতে ভোটারদের সারি। ছবি: এএফপি
ভারতের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিতে ভোটারদের সারি। ছবি: এএফপি

শুরু হলো ভারতের দিল্লি বিধানসভার ভোট। এই ভোট ঠিক করে দেবে দিল্লিবাসী আরও একবারের জন্য রাজ্যের দায়িত্ব আম আদমি পার্টির (এএপি) হাতে তুলে দেবে, নাকি দীর্ঘ ২১ বছর পর দিল্লি দখল করবে বিজেপি। আপাতদৃষ্টিতে লড়াই ক্ষুরধার।

দিল্লিতে এবার যেমন শীত পড়েছে, গত ১০০ বছরের ঠান্ডার ইতিহাসকে তা ম্লান করে দিয়েছে। আজ শনিবার সকালও ছিল কিছুটা কুয়াশাচ্ছন্ন, ঠান্ডাও। সকাল আটটায় ভোট শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে কুয়াশা কেটে সূর্য ওঠে। হয়তো সে কারণেই ১০টা পর্যন্ত ভোটের হার আগেরবারের তুলনায় ছিল ২ শতাংশ কম। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরুর দুই ঘণ্টায় ভোটের হার যেখানে ছিল ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, এবার তা ৩ শতাংশের কিছু বেশি। তবুও মাঘ মাসের শীত উপেক্ষা করে ঝকঝকে রোদ্দুরের আমেজ নিয়ে সকাল সকালই বুথে হাজির হন সাধারণ মানুষের সঙ্গে রাজনীতির অতি চেনা মুখেরা।

মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সকালের প্রাত্যহিক পূজা সেরে সপরিবারে ভোট দিয়ে আসেন। সাতসকালেই ভোট দেন সস্ত্রীক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ভোট দিতে আসেন মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে। কিছু পরে ভোট দেন ছেলে রাহুল গান্ধীও। ভোট দেন সস্ত্রীক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ভোট দেওয়ার পর বলেন, ‘আমি অনুরোধ করছি, যিনি যাকেই সমর্থন করুন না কেন ভোট অবশ্যই দিন। এই অধিকার প্রয়োগ করুন, বিশেষত নারীরা।’

এবারের ভোট ১৫ দিন আগপর্যন্তও ছিল একতরফা। আচমকাই নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভকে হাতিয়ার করে বিজেপি গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে এবং আপাত নির্জীব একমুখী নির্বাচনকে হিন্দু জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মেরুকরণে ভর দিয়ে চনমনে করে দেয়। বিজেপির ছকে আম আদমি পার্টি অবশ্য পা দেয়নি। তারা প্রচারের শেষ দিন পর্যন্ত এই নির্বাচনকে সরকারের কাজের নিরিখে দেখার আবেদন জানিয়ে এসেছে। কাজেই এই ভোট হয়ে দাঁড়িয়েছে উন্নয়ন বনাম হিন্দু জাতীয়তাবাদের লড়াই। শাহিনবাগের বিক্ষোভ হয়ে দাঁড়িয়েছে কার্যত বিজেপির নির্বাচনী ‘প্রতীক’। আর সেই কারণেই সঞ্চারিত হয়েছে আগ্রহের।

আগ্রহ কংগ্রেসকে নিয়েও। ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দিল্লি ছিল কংগ্রেসের দখলে। শীলা দীক্ষিত ছিলেন এই রাজধানী-রাজ্যের অবিসংবাদিত মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তারপর থেকে আম আদমি পার্টি যত মাথা তুলেছে, ততই পিছিয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস। ২০১৩ সালের ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় কংগ্রেসের সমর্থনে কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সরকার চালিয়েছিলেন মাত্র ৪৯ দিন। তারপর এক বছরের রাষ্ট্রপতি শাসনের পর ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেজরিওয়ালের দল ৭০টির মধ্যে ৬৭ আসন জিতে ক্ষমতায় আসে। সেই ভোটে বাকি তিনটি আসন বিজেপি পেলেও কংগ্রেসের ঝুলি ছিল শূন্য। এবার সেই কংগ্রেস কতটা লড়াইয়ে থাকবে, প্রশ্ন সেটাই। টানা এক মাসের নির্বাচনী প্রচারে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা প্রচার করেন মাত্র এক দিন। সোনিয়া অসুস্থতার কারণে এক দিনও নয়। আগেরবারের পাওয়া প্রায় ১০ শতাংশ ভোট এবার আরও কমলে তাতে আম আদমি পার্টিরই সুবিধা। কংগ্রেস ভোট বাড়ালে লাভ হবে বিজেপির।

এই ভোট কংগ্রেস ও বিজেপি লড়ছে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাউকে খাড়া না করে। আম আদমি পার্টির পক্ষে তা সুবিধাজনক। ভোট গ্রহণ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। তার পরেই শুরু হবে বিভিন্ন চ্যানেলে বুথফেরত সমীক্ষার (এক্সিট পোল) ফল। ফল গণনা ১১ ফেব্রুয়ারি।