কলকাতায় দ্বিতীয় মেট্রোরেলের উদ্বোধন, আমন্ত্রণ পাননি মমতা

ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোরেল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোরেল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কলকাতাবাসীর দীর্ঘপ্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের দ্বিতীয় লাইনের উদ্বোধন হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল রেল উদ্বোধন করবেন। রেলপথের নাম ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোরেল। এটি কলকাতায় মেট্রোরেলের দ্বিতীয় প্রকল্প। তবে কলকাতা মেট্রোরেলের দ্বিতীয় প্রকল্পের উদ্বোধন হলেও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই আমন্ত্রণ না পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি নেতারা বলছেন, এটি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।

ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমন্ত্রণ না পেলেও পেয়েছেন স্থানীয় সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, স্থানীয় বিধায়ক সুজিত বসু এবং বিধাননগর পৌর করপোরেশনের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। আমন্ত্রণ পাননি রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাই এ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো প্রতিনিধি, শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ, বিধায়ক এবং মন্ত্রীরা।

এর আগে মেট্রোরেলের প্রথম লাইনের প্রকল্প দমদম থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত চালু হয়েছিল ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর। সেই রেলপথ এখন দুদিক থেকে আরও বর্ধিত করা হয়েছে। তবে সেই পথ মাটির নিচ থেকে যায়নি, ওপর থেকে গেছে। দমদম থেকে এ লাইন সম্প্রসারিত হয়েছে নোয়াপাড়া পর্যন্ত। আর টালিগঞ্জ থেকে সম্প্রসারিত হয়েছে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত। এ রেলপথের দূরত্ব এখন ২৭ দশমিক ২২ কিলোমিটার। এই রেলপথে ২৪টি স্টেশন আছে। এর মধ্যে ১৫টি মাটির নিচ থেকে গেছে আর বাকিগুলো মাটির ওপর থেকে।

মেট্রো প্রকল্পের দ্বিতীয় লাইনের আজ বিকেলে উদ্বোধন হচ্ছে। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। কলকাতার সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ স্টেশনে হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই আমন্ত্রণ না পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায় বলেছেন, এ তো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। ২০০৯ সালে যখন টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া বাজার পর্যন্ত মেট্রোরেলের সম্প্রসারণকাজের উদ্বোধন করা হয়, তখন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুষ্ঠানেও সেদিন মমতা আমন্ত্রণ জানাননি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। এবার সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হলো। সেদিনের মেট্রোরেলের সেই অনুষ্ঠানে অবশ্য উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী প্রমুখ।

প্রথম ধাপে সল্টলেক সেক্টর–৫ থেকে এ ট্রেন চালু হবে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত ৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এতে থাকছে ৬টি স্টেশন। রয়েছে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক এসি কোচ। তবে ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর লাইন গেছে মাটির ওপর দিয়ে। স্টেশনগুলো হলো করুণাময়ী, সেন্ট্রাল পার্ক, সিটি সেন্টার, বেঙ্গল কেমিক্যাল এবং সল্টলেক স্টেডিয়াম। এরপরে দ্বিতীয় ধাপের ট্রেন চালানো হবে এ পথের বাকি অংশের ফুলবাগান, শিয়ালদহ, এসপ্ল্যানেড, মহাকরণ, হুগলী রিভার, হাওড়া স্টেশন হয়ে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত। সব মিলিয়ে এই দ্বিতীয় মেট্রোরেল ইস্ট–ওয়েস্টের দূরত্ব হবে ১৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার।

তবে এই পথের দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে হাওড়ার হুগলী নদীর তলদেশ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত রেললাইন। হুগলী নদীর তলদেশে ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে মেট্রোটানেল।

কখন, কোথা থেকে চলবে
ইস্ট–ওয়েস্ট এ মেট্রোলাইনে আগামীকাল শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হবে নিয়মিত ট্রেন চলাচল। ২০ মিনিট পরপর পর ছাড়বে এই ট্রেন। ভাড়া প্রথম ২ কিলোমিটারে ৫ রুপি এবং এর পরে হবে ১০ রুপি। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই ট্রেন। তবে রোববার চলবে দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।