ফৌজদারি মামলা থাকা দলীয় প্রার্থীর তথ্য ওয়েবসাইটে দিতে হবে: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি সংগৃহীত
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি সংগৃহীত

ভারতের নির্বাচনকে অপরাধীমুক্ত করতে নয়া দাওয়াই দিলেন সুপ্রিম কোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার দেশের সব স্বীকৃত রাজনৈতিক দলকে তাঁরা নির্দেশ দিয়েছেন, দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অপরাধের রেকর্ড দলের ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও খবরের কাগজে বিস্তৃতভাবে জানাতে হবে। নির্বাচনে প্রশ্নবিদ্ধ প্রার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সর্বোচ্চ আদালত এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হলেন।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর এফ নরিম্যান ও বিচারপতি রবীন্দ্র ভাট এই নির্দেশ দিয়ে জানান, চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাইয়ের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশন ও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টকে প্রার্থীদের সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে সবকিছু জানাতে হবে। তাঁরা বলেন, অপরাধী প্রার্থীদের চিহ্নিত করতেই হবে। জয়ের সম্ভাবনা প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একমাত্র বিবেচ্য হতে পারে না। প্রার্থী বাছতে হবে গুণাগুণ বিচার করে।

বিচারপতিরা জানান, কোনো রাজনৈতিক দল এই নির্দেশ না মানলে তা আদালত অবমাননা বলে গ্রাহ্য হবে।

নির্বাচনকে অপরাধীমুক্ত করে তুলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সার্বিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বেশ কিছু বছর ধরেই অনুভূত হচ্ছে। পেশি ও অর্থ শক্তি যাতে নির্বাচনে জেতার একমাত্র মাপকাঠি না হয়, সে জন্য নির্বাচন কমিশন ও সুপ্রিম কোর্ট অনেক দিন ধরেই সচেষ্ট। কিন্তু তা সত্ত্বেও অপরাধীদের প্রার্থী করা ঠেকানো যাচ্ছে না। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, গুরুতর অভিযোগ আছে, এমন অপরাধীদের প্রার্থী না করতে আইন করতে হবে। কিন্তু সেই আইন আজও হয়নি।

বিজেপির নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় সরকারি নিস্পৃহতার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে এক জনস্বার্থ মামলা করেন। আবেদনে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে সরকারি তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনে অপরাধীদের অংশগ্রহণ দিন দিন কীভাবে বেড়ে যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টকে তা জানিয়েছে। কমিশনের হিসেবে ২০০৪ সালে লোকসভা ভোটে ২৪ শতাংশ সাংসদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের মামলা ছিল। ২০০৯ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশ। ২০১৪ সালে হয় ৩৪ শতাংশ। গত বছর ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে অপরাধী সাংসদের হার ৪৩ শতাংশ। আবেদনকারীর আরজি, সুপ্রিম কোর্টকে এই সরকারি নিষ্ক্রিয়তাকে আদালত অবমাননা বলেই গণ্য করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার আরও জানিয়েছেন, প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারার উল্লেখ করাই যথেষ্ট নয়। অপরাধের অভিযোগের চরিত্র কেমন তা-ও জানাতে হবে। এর অর্থ, কোনো ধরনের অপরাধের জন্য কোন ধারায় মামলা চলছে, যেমন খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, ডাকাতি, তহবিল তছরুপ বা অর্থ-নারী পাচার, দলীয় ওয়েবসাইট, খবরের কাগজ কিংবা সামাজিক মাধ্যমে তা বিস্তারিত জানাতে হবে। এর অন্যথায় কী হবে, সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য তা জানাননি।

সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর প্রযোজ্য। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এই নির্দেশের আওতায় এখনো পড়ছেন না।