বৃষ্টির অপেক্ষায় ৩২ দিন

প্রশান্ত মহাসাগরে ফ্রান্সের নিউ ক্যালেডোনিয়া দ্বীপের একটি সৈকত।  ছবি: এএফপি
প্রশান্ত মহাসাগরে ফ্রান্সের নিউ ক্যালেডোনিয়া দ্বীপের একটি সৈকত। ছবি: এএফপি

চারদিকে কেবল সীমাহীন সমুদ্র। কোথাও কোনো ঠাঁই নেই। এর মধ্যেই ভাসছিলেন তাঁরা চারজন। খাবার বলতে কেবল ছিল নারকেল। অসীম জলরাশির মধ্যে থেকেও পানের কোনো পানি ছিল না তাঁদের কাছে। চাতক পাখির মতো কেবল বৃষ্টির অপেক্ষা করতে হয়েছে। এভাবেই কেটে যায় ৩২টি দিন। অবশেষে কূলের দেখা পান তাঁরা।

স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত কানাডীয় লেখক ইয়ান মার্টেলের ম্যান বুকার পুরস্কার জয়ী লাইফ অব পাই উপন্যাসের ঘটনাবলির সঙ্গে অনেকেই হয়তো মিল খুঁজে পাবেন এ ঘটনার। বাস্তব জীবনের এই রুদ্ধশ্বাস ঘটনার চরিত্র চারজনকে ২৩ জানুয়ারি প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ দিকের ছোট ছোট দ্বীপবেষ্টিত ফ্রান্সের নিউ ক্যালেডোনিয়া থেকে উদ্ধার করা হয়। তাঁদের মধ্যে দুজন পুরুষ, এক নারী ও এক কিশোর রয়েছে। সবাই পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁদের নিজ দেশ পাপুয়া নিউগিনির কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঘটনার শুরু গত ২২ ডিসেম্বর। পাপুয়া নিউগিনির ১২ জনের একটি দল ছোট একটি নৌকায় চেপে অসীম সাগরে নামেন। তাঁদের মধ্যে একটি শিশুও ছিল। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, পাপুয়া নিউগিনি থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের কারটারেটস আইল্যান্ডসে গিয়ে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় উৎসব বড়দিন উদ্যাপন করা। কিন্তু তা আর হয়নি। উত্তাল সাগরে বড়দিনের আগেই ডুবে যায় নৌকাটি। স্রোতের টানে ভেসে যান এর কয়েকজন আরোহী।

শেষ পর্যন্ত টিকে যাওয়া চারজনের একজন ডোমিনিক স্টোলি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নৌকাডুবির পর তাঁরা কয়েকজন মিলে নৌকাটি আবার সোজা করেন। কিন্তু তীব্র স্রোত তাঁদের সুদূরে টেনে নিয়ে যায়। এ সময় মারা পড়েন আরও কয়েকজন। তিনি বলেন, ‘লাশগুলো ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার ছিল না। এক দম্পতি তাঁদের শিশুসন্তান রেখেই মারা যান। শিশুটি এরপর আমার কাছে ছিল। কিন্তু ওকেও বাঁচানো যায়নি।’

স্টোলি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, মাছ ধরার বেশ কিছু নৌকা পাশ দিয়ে গেলেও তাঁদের লক্ষ করেনি। ভেসে ভেসে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার সমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন তাঁরা। অবশেষে ২৩ জানুয়ারি তাঁদের উদ্ধার করা হয়।