চীনে করোনায় আক্রান্ত ১০০০০ মৃতদেহ পোড়ানোর অভিযোগ

চীনের উহান শহরের বাতাসে উচ্চমাত্রার সালফার ডাই-অক্সাইডের ব্যাপক উপস্থিতির খবর পাওয়ার পরই ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ছবি: উইন্ডি ডটকম
চীনের উহান শহরের বাতাসে উচ্চমাত্রার সালফার ডাই-অক্সাইডের ব্যাপক উপস্থিতির খবর পাওয়ার পরই ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ছবি: উইন্ডি ডটকম

বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। গত বছরের শেষ দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। এতে ১ হাজার ৪৮৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে চীন। আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৬৫ হাজারের মতো। চীনের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের ২৫ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। করোনাভাইরাসে চীনের বাইরে তিনজন মারা গেছে। তবে কয়েক হাজার ব্যক্তির মৃতদেহ চীন জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট উইন্ডি ডটকমের ছবির বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল ও দ্য এক্সপ্রেস ডট কম এ খবর প্রকাশ করেছে।

স্যাটেলাইট ইমেজ দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১০ হাজার ব্যক্তির মৃতদেহ জ্বালিয়ে দিয়েছে দেশটি। বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের মধ্যে উহান শহরে উচ্চমাত্রার সালফার ডাই-অক্সাইডের (SO2) ব্যাপক উপস্থিতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর এতে সেখানকার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার আভাস মিলছে। উহান শহর থেকেই করোনাভাইরাসের বিস্তার হয়।

সম্প্রতি উহান শহরের স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশিত হয়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাতাসে সালফার ডাই–অক্সাইডের মাত্রা এত তীব্র যে ওই এলাকাগুলো আলাদা করে চিহ্নিত করা যাচ্ছে। ওই অঞ্চলে বাতাসে সালফার ডাই–অক্সাইডের মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১ হাজার ৩৫০ মাইক্রোগ্রাম পার কিউবিক মিটার (g/m3)। প্রতি ঘনমিটারে ৮০০–এর বেশি সালফার ডাই–অক্সাইড থাকলে তা যথেষ্ট ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার সময় এই সালফার ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া মেডিকেল বর্জ্য ভস্মীভূত করলেও সালফার ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। চীনের উহান শহরে এ ধরনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, উহানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার সময় সালফার ডাই-অক্সাইড উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া মেডিকেল বর্জ্য ভস্মীভূত করলেও সালফার ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। ছবি: টুইটার
মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার সময় সালফার ডাই-অক্সাইড উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া মেডিকেল বর্জ্য ভস্মীভূত করলেও সালফার ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। ছবি: টুইটার

উহান ছাড়াও চীনের চোংকিয়াং এলাকার বাতাসের সালফার ডাই–অক্সাইডের মাত্রা বেশি। উহানের পর দক্ষিণ চীনের এ এলাকা সবচেয়ে করোনায় আক্রান্ত। এখানে প্রতি ঘনমিটারে বাতাসে সালফার ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০০।

ওই অঞ্চলে বাতাসে সালফার ডাই–অক্সাইডের মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১ হাজার ৩৫০ মাইক্রোগ্রাম পার কিউবিক মিটার (g/m3)। প্রতি ঘনমিটারে ৮০–এর বেশি সালফার ডাই–অক্সাইড থাকলে তা যথেষ্ট ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়।

ইউরোপের কোনো অঞ্চলে বাতাসে ১৫ মিনিট ধরে সালফার ডাই–অক্সাইডের মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৫৩৩ মাইক্রোগ্রাম পার কিউবিক মিটার হয়, তবে তা উচ্চ হার বলে ধরা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বাতাসে সালফার ডাই–অক্সাইডের মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৫০০ মাইক্রোগ্রাম পার কিউবিক মিটার হলেই তা বেশি।

আর এসব ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মানচিত্র পর্যালোচনা করে ব্যবহারকারীদের দাবি, উহানের কোনো এক জায়গায় মরদেহগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মূলত বড় জমায়েত এড়ানোর জন্য অল্পসংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে এসব দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এরপরই চীন নিজেদের দেশে হওয়া মহামারির খবর লুকাতে মরদেহ জ্বালিয়ে দিচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

তবে এসব ব্যাপারে চীনের মুখে কুলুপ। দেশটির স্বাস্থ্য কমিশন বলেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ মারা গেলে যথাসম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যেই মরদেহগুলোর সৎকার করা হচ্ছে। না হলে সেখান থেকে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে।

সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো করোনাভাইরাস নতুন হওয়ায় এখনো কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। এর প্রতিষেধক তৈরি করতে দেড় বছর সময় লাগবে। এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার আপাত উপায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা।