তৃণমূলের নারী বিধায়কের অশ্লীল মন্তব্যে উত্তপ্ত বিধানসভা

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা ভবন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা ভবন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

তৃণমূলের এক নারী বিধায়কের একটি অশ্লীল মন্তব্য ঘিরে গতকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

অধিবেশনে সরকার ও বিরোধীদলীয় বিধায়কদের মধ্যে তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। শেষ পর্যন্ত বিধানসভা অধিবেশনে হাতজোড় করে ক্ষমা চান ওই নারী বিধায়ক।

ঘটনার পর সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য ও সাবেক সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘তৃণমূল এখন বিরোধী মতকে শায়েস্তা করতে ধর্ষণকে হাতিয়ার করছে।’

ঘটনার সূত্রপাত গতকাল সকালের অধিবেশনে। এদিন রাজ্য বিধানসভায় বাজেটের ওপর আলোচনা চলছিল। আলোচনা করছিলেন বর্ধমানের মেমারির তৃণমূলের নারী বিধায়ক নার্গিস বেগম। তাঁর আলোচনার মাঝে রাজ্যের মন্ত্রী অসীমা পাত্র নারী বিধায়ক নার্গিস বেগমকে কী যেন বলতে থাকেন। এ সময় সিপিএমের বর্ধমানের জামুড়িয়ার নারী বিধায়ক জাহানারা খান বলে ওঠেন, বাজেটে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নজর দেওয়া হয়নি।

জাহানারা খানের এই মন্তব্য শুনে রেগে ওঠেন নার্গিস বেগম। তখন তিনি একটি অশ্লীল মন্তব্য করেন। এই মন্তব্যের পরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভার অধিবেশন।

এই ঘটনার আগে সকালে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিধায়কদের বলেছিলেন, সব বিধায়কের সংযত বাক্যবিনিময় ও আচরণ করতে হবে।

কিন্তু অধিবেশন শুরুর পর অশ্লীল মন্তব্যে বিধানসভার পরিবেশ ক্ষুণ্ন হয়।

ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান সিপিএম নারী বিধায়ক জাহানারা খান। একপর্যায়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। বিচার চান স্পিকারের কাছে। বলেন, ‘যাঁদের যেমন সংস্কৃতি, তাঁদের তেমন ভাষা।’

নার্গিস বেগমের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পৌরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁরা এক বাক্যে বলেন, এই মন্তব্য তাঁরা মানছেন না। এটা অবাঞ্ছিত।

বিকেলের অধিবেশনে সিপিএমের পরিষদীয় দলের নেতা বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেন। অশ্লীল মন্তব্য করা নারী বিধায়কের শাস্তি দাবি করেন। বলেন, এতে বিধানসভার সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। অবিলম্বে ওই নারী বিধায়কের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এমন কিছু ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা যদি সঠিকভাবে কথা বলতে না পারি, তবে কিসের জনপ্রতিনিধি? সভায় এমন শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। আমি বিধায়ক নার্গিস বেগমকে ডেকে বলেছি, এমন কথা দল অনুমোদন করে না। তাই ওই মন্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চান।’

এর পরেই বিধায়ক নার্গিস বেগম তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে হাতজোড় করে ক্ষমা চান। তারপর স্পিকার অধিবেশনের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেন নার্গিস বেগমের মন্তব্য।