প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে রাজ্যসভায় আনার তোড়জোড় কেন?

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

বিরোধীরা যতই ‘পরিবারতন্ত্রের’ বিরুদ্ধে সরব হোক, কংগ্রেসে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসার দাবি জোরালো হয়ে উঠছে। রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের পর এবার মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতৃত্বও প্রিয়াঙ্কাকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসার দাবি তুলল।

কংগ্রেস নেতৃত্ব ওই দাবি মানবে কি না, অতি দ্রুত তা ঠিক করতে হবে। কারণ, এই বছরের এপ্রিলে রাজ্যসভায় ৫৫টি আসন খালি হচ্ছে। সেগুলোর কোনো একটা থেকে প্রিয়াঙ্কাকে জিতিয়ে আনতে হলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাড়াতাড়ি।

রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে অশোক গেহলট ও ভূপেশ বাঘেল সম্প্রতি সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে তাঁদের রাজ্য থেকে প্রিয়াঙ্কাকে রাজ্যসভায় আনার প্রস্তাব দেন। এবার মধ্যপ্রদেশ থেকেও সেই দাবি উঠল। মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ গত শুক্রবার সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করে বলেন, দলের স্বার্থে তাঁর রাজ্য থেকে প্রিয়াঙ্কাকে রাজ্যসভার সদস্য করা উচিত। সোনিয়া এ বিষয়ে এখনো মুখ খোলেননি। সরকারিভাবে মন্তব্য জানায়নি কংগ্রেসও।

এপ্রিল মাসে রাজ্যসভায় যে ৫৫ আসন খালি হচ্ছে (একজন রাষ্ট্রপতি মনোনীত), সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো রয়েছে কংগ্রেসশাসিত রাজ্যে। রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে খালি হচ্ছে তিনটি করে ছয়টি আসন। ছত্তিশগড়ে খালি হবে দুটি। এ ছাড়া মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খন্ডেও সাতটি আসন খালি হচ্ছে। এগুলোর যেকোনো একটা থেকে প্রিয়াঙ্কাকে জিতিয়ে আনা শুধু সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। চাপ বেড়েই চলেছে। সোনিয়া রাজি হলেই দলগত সিদ্ধান্ত।

গত বছর লোকসভা ভোটের আগে প্রিয়াঙ্কা আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে যোগ দেন। দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্ব পান। সেই থেকে তিনি দলের কাজে নিয়মিত উত্তর প্রদেশ সফর করছেন।

হঠাৎ প্রিয়াঙ্কাকে রাজ্যসভার সদস্য করার দাবি এভাবে জোরালো হয়ে উঠছে কেন? প্রশ্নটা উঠছে কারণ, দিল্লির লোদি এস্টেটের যে সরকারি বাংলোয় তাঁর বাস, তা খালি করে দেওয়ার জন্য প্রিয়াঙ্কাকে বিজেপি সরকার নোটিশ পাঠিয়েছে। ১৯৯৭ সাল থেকে ওই বাংলোয় প্রিয়াঙ্কা বসবাস করছেন। ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) গঠিত হয়। রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর সেই আইন অনুযায়ী তাঁর পরিবার ওই আইনের আওতায় আসেন। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসে সেই ব্যবস্থায় পরিবর্তন করেন। সোনিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য এসপিজি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে তাঁদের জন্য জেড ক্যাটাগরি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। সেই থেকে প্রিয়াঙ্কাকে লোদি এস্টেটের সরকারি বাসভবন ছেড়ে দেওয়ার জন্য সরকার চাপ দিয়ে আসছে। কারণ, আইন অনুযায়ী একমাত্র এসপিজি নিরাপত্তায় থাকা ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারি বাসভবনে বসবাসের যোগ্য। সোনিয়া ও রাহুলকেও সরকারি নিবাস ছাড়তে বলা হতো। কিন্তু দুজনেই সাংসদ বলে তা করা যাচ্ছে না। প্রিয়াঙ্কা সাংসদ হয়ে গেলে তাঁকে ওই বাংলো ছাড়তে বলা কঠিন হবে। প্রিয়াঙ্কাকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসার জন্য কংগ্রেসিদের তাই এত তৎপরতা।

কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা এই সম্ভাবনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু বলেছেন, কে রাজ্যসভায় প্রার্থী হবেন, তা সোনিয়া গান্ধীর ওপর নির্ভর করছে। তা ছাড়া প্রিয়াঙ্কার নিজেরও ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রশ্ন রয়েছে।