ট্রাম্প ভারতে আসছেন তাই...

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আসছেন, ভারতে তাই সাজ সাজ রব। আহমেদাবাদ ও আগ্রার সাজুগুজুতে খরচ হচ্ছে ১৩০ কোটি রুপি। এই সফর, যার সরকারি নাম ‘নমস্তে ট্রাম্প’, তা চিরস্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টার অন্ত নেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। তাঁর নির্দেশ, গত বছর মার্কিন মুলুকের ‘হাউডি মোদি’র মতোই ঝকমকে হয়ে ওঠে যেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সস্ত্রীক এই প্রথম ভারত সফর। আপ্যায়ন দেখে তাঁদের চোখ যেন ধাঁধিয়ে যায়।

ট্রাম্প আসছেন আগামী সোমবার। এই সফর যে চোখ ধাঁধাবে, সে কথা এই কিছুদিন আগে ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছিলেন। বিস্মিত হয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরের বিমানবন্দর থেকে মোটেরা স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথের দুই ধারে ৭০ লাখ মানুষ নাকি তাঁকে অভিবাদন জানাবেন। সংখ্যাটা তখনই অবিশ্বাস্য লেগেছিল। কিন্তু সরকারিভাবে কেউই তা খণ্ডন করেননি। সফর শুরুর আগে সরকারি ভাষ্যে ৭০ লাখ নেমে এসেছে এক লাখে। সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো মোদির রাজ্যে জাঁকজমকে খামতি রাখা হচ্ছে না।

বিমানবন্দর থেকে মহাত্মা গান্ধীর সবরমতি আশ্রম ঘুরে শহরতলির মোটেরা স্টেডিয়াম ২২ কিলোমিটার। এই যাত্রাপথ নতুনভাবে তৈরিই শুধু করা হয়নি, রাস্তার দুই ধারে যেখানে যেখানে ঘিঞ্জি বস্তি আছে, সব সাফসুতোর করা হয়েছে। আবর্জনায় যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চোখ না আটকায়, সে জন্য মোট ৪০০ মিটার দীর্ঘ সাত ফুট উঁচু দেয়াল তোলা হয়েছে। ২০ বছরের বেশি সরকারি জমিতে বসবাস করা মোট ৪৭টি পরিবার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্যত্র। দীর্ঘ এই যাত্রাপথে গড়ে ওঠা অগুনতি পান-বিড়ি ও চায়ের দোকান হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সফর শেষে তাঁরা ফের ফিরে আসবেন কি না, অজানা।

ট্রাম্প গুজরাটে থাকবেন মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। এ সময় রাস্তাঘাটে ঘুরঘুর করা কোনো কুকুর বা গরু যাতে তাঁর নজরে না আসে, সে জন্য প্রশাসনের রাতের ঘুম ছুটে গেছে। সাত দিন ধরে শুরু হয়েছে কুকুর-গরু ধরা। শহরের বাইরে শেল্টার হোম তৈরি করে তাদের রাখা হচ্ছে। ১৯৯১ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে বসেছিল ‘আর্থ সামিট’ বা ‘ধরিত্রী সম্মেলন’। ১৬৮টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা সেই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। নিরাপত্তার কারণে সে সময় রিওর সব পথশিশুকে আটকে রাখা হয়েছিল এক দ্বীপে। আহমেদাবাদে সে সমস্যা নেই। তবে রাস্তার কুকুর ও ছেড়ে দেওয়া গরু ট্রাম্প-দম্পতির চক্ষুশূল হোক, প্রশাসন তা চায় না।

আহমেদাবাদ শহরের অদূরে নতুনভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে মোটেরা স্টেডিয়াম। দর্শকসংখ্যার নিরিখে এ স্টেডিয়াম পৃথিবীর বৃহত্তম। আসন সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ স্টেডিয়াম উদ্বোধন করবেন। সংবর্ধনার মূল অনুষ্ঠান হবে ওখানেই। জাঁকজমকে ভরা সে অনুষ্ঠান তো বটেই, ২২ কিলোমিটার পথের দুই ধারে ২৮ জায়গায় আয়োজন করা হচ্ছে নাচগানের আসরের। সারা রাজ্যের আনাচকানাচ থেকে জড়ো করা হচ্ছে শিল্পীদের। তাঁদের আসা-যাওয়ার জন্য রাখা হচ্ছে ২ হাজার ২০০ সরকারি বাস। এই দীর্ঘ পথে দুই ধারের ঘরবাড়ি-দেয়াল-ফুটপাত সাজানো হয়েছে নতুন করে। সফর শুরুর দুই দিন আগে থেকে ধোয়ার কথা দীর্ঘ এই যাত্রাপথ। ফাঁকা দেয়ালে আঁকা হচ্ছে হরেক রকম ছবি। বিষয়বস্তু সরকারের নানান জনমুখী প্রকল্প ও দুই দেশের বন্ধুতার কথা। অন্তত এক লাখ বড় গাছ লাগানো হয়েছে ওই যাত্রাপথের দুই ধারে। সেই সঙ্গে বসানো হয়েছে অগুনতি ফুলের টব। ট্রাম্পের সফরের আগে–পিছে ৬০টির মতো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিমান হয় বাতিল করা হয়েছে, নয়তো পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বরোদা ও সুরাটে। বাতিল উড়ালগুলোর টিকিটের দাম ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিমান সংস্থাগুলোকে।

আহমেদাবাদ থেকে আগ্রা হয়ে ট্রাম্প যাবেন দিল্লি। আগ্রাতেও সাজ সাজ রব। তাজমহল সাফসুতরো হচ্ছে। ফোয়ারাগুলো সারানো হচ্ছে। কয়েক শ কর্মী নিযুক্ত সেই কাজে। তাজমহলের ঠিক পেছনে প্রবাহিত যমুনা। যমুনার দূষণ ধীরে ধীরে গ্রাস করছে তাজমহলকেও। সে জন্য সরকারের চেষ্টার অন্ত নেই। যমুনার দূষণ ও দুর্গন্ধ কমাতে নতুন করে ছাড়া হয়েছে ৫০০ কিউসেক পানি। আগ্রা বিমানবন্দর থেকে তাজমহল পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তা জায়গায় জায়গায় চওড়া করা হচ্ছে। আহমেদাবাদের ধাঁচে এই শহরেও অতিথিদের মনোরঞ্জন করবেন আগ্রা-মথুরা-বৃন্দাবনের শিল্পীরা।

এই বিপুল খরচ ও অভিনব আপ্যায়ন সত্ত্বেও বহু আকাঙ্ক্ষিত বাণিজ্যচুক্তি এই সফরে সই হচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও অপেক্ষা করতে চান।