মোদি-শাহকে দিয়ে সব সময় উতরানো যাবে না: আরএসএস

নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। ছবি: এএফপি
নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। ছবি: এএফপি

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির পর ভারতের কেন্দ্রীয় শাসকদল নিয়ে শুরু হয়েছে নানামাত্রিক আলোচনা। দেশটির অন্যতম ডানপন্থী ও উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) বলছে, নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটির ক্যারিশমায় সব সময় ভোট বৈতরণি পার হতে পারবে না বিজেপি। এ জন্য দলটির তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং নির্বাচনী প্রচার জোরদার করতে হবে।

আরএসএস-কে বলা হয়ে থাকে বিজেপির আঁতুড়ঘর। আরএসএসের কল্যাণেই জন্ম হয়েছে বিজেপির। দলটির আদর্শিক পরামর্শদাতা এই সংগঠন। তবে আরএসএসের অধীনে একটি নয়, আছে আরও অনেকগুলো সংগঠন। আলাদা আলাদা ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করে এসব সংগঠন। এদের সামগ্রিকভাবে বলা হয় সংঘ পরিবার। বলা হয়ে থাকে, বিজেপি সরকারকে আদতে চালাচ্ছে এই আরএসএস ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলো। দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এসব সংগঠনের প্রত্যক্ষ পরামর্শে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লির বিধানসভায় শোচনীয় পরাজয়ের পর আরএসএস তা বিশ্লেষণ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সংগঠনটির এক মুখপত্রে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বিজেপি তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচার জোরদার হয়েছে শেষের দিকে এসে। এই দুটি কারণেই নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির।

দিল্লি বিধাসভার নির্বাচনে মোটে ৮টি আসনে জিতেছে বিজেপি। অন্যদিকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (এএপি) পেয়েছে ৬২টি আসন। এই বিধানসভার মূল আসন ৭০টি।

আরএসএস বলছে, নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ সব সময় দলকে জেতাতে সাহায্য করতে পারবেন না। তাই দিল্লি অঞ্চলে বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে এবং দলটিকে আঞ্চলিক বাস্তবতার নিরিখে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

এদিকে এমন পরিস্থিতিতেই নতুন মন্তব্য করে আলোচনায় এসেছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। দলীয় একটি অনুষ্ঠানে কর্মীদের ‘জাতীয়তাবাদ’ শব্দটি এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মোহন ভাগবত বলেছেন, ‘জাতীয়তাবাদ (ন্যাশনালিজম) শব্দটি ব্যবহার করবেন না। জাতি (নেশন) বললে চলবে। জাতীয় (ন্যাশনাল) বললে চলবে। জাতীয়তা (ন্যাশনালিটি) বললেও চলবে। কিন্তু, জাতীয়তাবাদ বলবেন না। কারণ, জাতীয়তাবাদ জুড়ে রয়েছে হিটলারের সঙ্গে, নাৎসিবাদের সঙ্গে।’

একই সঙ্গে ভারতের সব অশান্তির মূলে ‘মৌলবাদ’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আরএসএস প্রধান। তিনি বলেছেন, ‘মৌলবাদের জন্যই দেশে এমন অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভারতের নীতি কখনই দাসত্ব গ্রহণ করা বা দাস তৈরি করার পক্ষে নয়। প্রত্যেককে জুড়ে এক করে রাখার গুণ আছে ভারতের।’

মোহন ভাগবত আরও বলেন, ‘ভারতের সংস্কৃতি হলো হিন্দু সংস্কৃতি। বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও দেশের প্রতিটি নাগরিক একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।’ ভারতকে পৃথিবীতে নেতৃত্বের স্থানে নিয়ে যাওয়া আরএসএস-এর উদ্দেশ্য বলেও দাবি করেছেন তিনি।