করোনাভাইরাস ছড়ানোর ধরন উদ্বেগজনক: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

আগেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে পরিষ্কার যোগসূত্র না থাকা রোগী বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজন মারা যাওয়ার ঘটনার পরপর ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুসের কাছ থেকে এ মন্তব্য এল। এ নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চারজনের মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটল।

ইরানের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটির সব শহরেই এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত ২৬টি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১ হাজার ১৫২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং ৮ জন মারা গেছেন।

গতকাল শুক্রবার ইতালিতে ৭৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

ইরানের পাশাপাশি লেবানন সে দেশে ৪৫ বছর বয়সী এক নারীর ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস শনাক্ত করেছেন। এর বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, ইসরায়েলেও এ রোগী পাওয়া গেছে। কানাডা বলছে, তাদের যে নয়জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন, এর মধ্যে একজন সম্প্রতি ইরান থেকে ফিরেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং সে-কিউন বলেন, তাঁর দেশ জরুরি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১০০ রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং দুজন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ২০৪ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে দিয়েগু ও চেংদো শহরকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। দিয়েগু শহরের রাস্তা এখন এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।

দেশটিতে তিনজন সেনাসদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় সব সেনা স্থাপনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ডব্লিউএইচওর প্রধান বলেছেন, চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম। তবে যে প্যাটার্ন বা ধরনে এ রোগের সংক্রমণ ঘটছে, তা উদ্বেগজনক।

কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা বা চীন সফর না করেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ইরানে নতুন করে সংক্রমণ ঘটা ও মৃত্যুর ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক।

তবে টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেন, চীনসহ অন্যান্য দেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর এখনো সুযোগ রয়েছে। সম্ভাব্য মহামারি ঠেকাতে সব দেশকে আরও বেশি প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি মনে করে, যেসব দেশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বল, সেখানে এ রোগের বিস্তার নিয়ে তাঁরা উদ্বেগে রয়েছেন।

এর আগে গত জানুয়ারিতে ডব্লিউএইচওর পক্ষ থেকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পেছনে কারণ হিসেবে ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এবং এটি এখন শুধু চীনের উদ্বেগের বিষয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

ডব্লিউএইচও বিগত দশকে পাঁচটি আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল। ২০০৯ সালে এইচওয়ান সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের জন্য, ২০১৩ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার প্রাদুর্ভাব, ২০১৪ সালে পোলিও, ২০১৬ সালে জিকা ভাইরাস এবং ২০১৯ সালে আবারও কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে ইবোলার প্রাদুর্ভাবের জন্য।