ট্রাম্প-মেলানিয়া ভারত আসবেন এয়ারফোর্সে, চড়বেন দ্য বিস্টে

২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি দুদিনের সফরে ভারতে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মেলানিয়া ট্রাম্প। ফাইল ছবি
২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি দুদিনের সফরে ভারতে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মেলানিয়া ট্রাম্প। ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২৪ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের জন্য দেশটিতে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। হাতে আর মাত্র একটা দিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সস্ত্রীক প্রথমবারের মতো ভারত সফরে আসছেন। সফরসূচি অনুযায়ী কাল সোমবার গুজরাট বিমানবন্দরে নামবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এয়ারফোর্স ওয়ান। সেখান থেকে সরাসরি নিজের বিশেষ গাড়িতে করে গুজরাটের সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল স্টেডিয়ামে যাবেন ট্রাম্প ও মেলানিয়া।

এ সফরের অন্যান্য আলোচনার মধ্য ট্রাম্পকে বহনকারী উড়োজাহাজ ও বিশেষ গাড়ি আলোচনা অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে ভারতে চলে এসেছে ট্রাম্পের বিশেষ গাড়ি। কারণ, গাড়িটির সামনের দিকে আছে কাঁদানে গ্যাস ও গ্রেনেড লাঞ্চার ছোড়ার ব্যবস্থা। গাড়িটি যেকোনো জায়গায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় পারদর্শী এই গাড়ি।

ট্রাম্প ও মেলানিয়া বোয়িং ৭৪৭-২০০বি সিরিজের বিশেষ বিমানে ভারতে আসছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এ বিমান পরিচিত ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’ নামে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এটিতে চড়েন। তাই অন্য পাঁচটি বিমান থেকে এয়ারফোর্স ওয়ান যে ধারে-ভারে এগিয়ে, তা বলাই যায়। হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, বৈশিষ্ট্য ও পরিষেবার দিক থেকে এই বিমানের জুড়ি মেলা ভার।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, বৈশিষ্ট্যের এয়ারফোর্স ওয়ানে চড়ে ভারত আসছেন ট্রাম্প। ছবি: হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, বৈশিষ্ট্যের এয়ারফোর্স ওয়ানে চড়ে ভারত আসছেন ট্রাম্প। ছবি: হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট

এয়ারফোর্স ওয়ানের ইতিহাস

১৯৬২ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি প্রেসিডেন্টের জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি যুদ্ধবিমানে প্রথম ওঠেন। তবে সেই বিমানের সঙ্গে আজকের এয়ারফোর্স ওয়ানের অনেক পার্থক্য রয়েছে। জন এফ কেনেডির পরে আরও নানা যুদ্ধবিমান মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে। তবে বর্তমান এয়ারফোর্স ওয়ান প্রথম প্রকাশ্যে আসে ১৯৯০ সালে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের আমলে। ১৯৬২ সালে বোয়িং ৭০৭-এর একটি আধুনিক সংস্করণ ব্যবহার করা হতো। এখন বোয়িং ৭৪৭-২০০বি সিরিজ ব্যবহার করা হয়। পরে আরও বেশ কিছু আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈশিষ্ট্যসংবলিত বিমানে উঠেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা।

কী আছে এয়ারফোর্স ওয়ানে
এ বিমানের বিশেষত্ব হলো, এটি মাঝ আকাশেই জ্বালানি ভরে নিতে পারে। যেকোনো জায়গায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে এয়ারফোর্স ওয়ান। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় পারদর্শী এই বিমান। এর অত্যাধুনিক ও নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থার কারণে কোনোও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এয়ারফোর্স ওয়ানই মোবাইল কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এর সুরক্ষাব্যবস্থাও অত্যাধুনিক মানের। ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রশ্মি থেকে সহজেই রক্ষা পাবে বিমানটি। এ ছাড়া আকাশপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে সুরক্ষিত রাখতে একগুচ্ছ ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি উন্নত মানের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এয়ারফোর্স ওয়ানের মধ্যেই অত্যাধুনিক সরঞ্জাম মজুত থাকে।

বোয়িং ৭৪৭-২০০বি সিরিজের এয়ারফোর্স ওয়ানে ফ্লোর এরিয়া প্রায় চার হাজার বর্গফুট। প্রেসিডেন্টের থাকার জন্য সম্পূর্ণ পৃথক একটি স্যুইট রয়েছে। আছে বড় অফিস, কনফারেন্স কক্ষ, প্রসাধন কক্ষসহ একাধিক পরিষেবা। ছবি: হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট
বোয়িং ৭৪৭-২০০বি সিরিজের এয়ারফোর্স ওয়ানে ফ্লোর এরিয়া প্রায় চার হাজার বর্গফুট। প্রেসিডেন্টের থাকার জন্য সম্পূর্ণ পৃথক একটি স্যুইট রয়েছে। আছে বড় অফিস, কনফারেন্স কক্ষ, প্রসাধন কক্ষসহ একাধিক পরিষেবা। ছবি: হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট

ভেতরের সুযোগ-সুবিধা

এয়ারফোর্স ওয়ানে ফ্লোর এরিয়া প্রায় চার হাজার বর্গফুট। এর তিনটি আলাদা ভাগ রয়েছে। প্রেসিডেন্টের থাকার জন্য সম্পূর্ণ পৃথক একটি স্যুইট রয়েছে। তাতে আছে বিরাট একটি অফিস, কনফারেন্স কক্ষ, প্রসাধনকক্ষসহ একাধিক পরিষেবা। এ ছাড়া অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচারকক্ষসহ একটি মেডিকেল স্যুইটও আছে আপৎকালীন সমস্যার জন্য। সব সময় এখানে একজন চিকিৎসক থাকেন। বিমানের হেঁশেলটিও বেশ বড়। রান্নাঘরেই ১০০ জনকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যায়। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যেসব কর্মচারী থাকেন, তাঁদের জন্য কোয়ার্টারও রয়েছে এয়ারফোর্স ওয়ানের মধ্যে।

প্রেসিডেনশিয়াল এয়ারলিফ্ট গ্রুপ
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা একটি বিভাগ রয়েছে। তার নাম প্রেসিডেনশিয়াল এয়ারলিফ্ট গ্রুপ। হোয়াইট হাউসের মিলিটারি অফিসের অধীনে এই বিভাগ কাজ করে সর্বক্ষণ। ১৯৪৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্টের ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের নির্দেশে এই গ্রুপ তৈরি করা হয়।

ট্রাম্পের দ্য বিস্ট
একাধারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের গাড়িটি হাইটেক, অন্যদিকে অবশ্যই বিলাসীও। ট্রাম্পের এই গাড়ি ‘দ্য বিস্ট’ নামে পরিচিত। হাইটেক এবং বিলাসবহুল গাড়িটি তৈরি করেছে ক্যাডিল্যাক। ক্যাটাগরি আর্মার্ড লিমোজিন। ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা এবং বিলাসিতার কথা ভেবেই গাড়িটি তৈরি করা হয়। এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অফিশিয়াল গাড়ি ছিল ‘ক্যাডিল্যাক ওয়ান’।

ট্রাম্প ‘দ্য বিস্ট’ নামে পরিচিত এই গাড়িটিতে চড়েই ঘুরবেন ভারত। ছবি: টুইটার
ট্রাম্প ‘দ্য বিস্ট’ নামে পরিচিত এই গাড়িটিতে চড়েই ঘুরবেন ভারত। ছবি: টুইটার

প্রেসিডেন্টের গাড়ির ইতিহাস

১৯১০ সালে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্টের অফিশিয়াল গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হারবার্ট হুভারের আমলে প্রেসিডেন্টের সরকারি গাড়ি হিসেবে প্রথমবার ক্যাডিল্যাক যুক্ত হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাড়ির বৈশিষ্ট্য হলো গাড়ির জানালায় কাচ ও পলি কার্বোনেটের পাঁচটি স্তর আছে। শুধু তা–ই নয়, মিস্টার প্রেসিডেন্টের প্রতিরক্ষা এবং সুরক্ষার কথা ভাবা হয়েছে গুরুত্ব দিয়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সুরক্ষার সব বন্দোবস্ত আছে দ্য বিস্টে। এমনকি এই গাড়িতে প্রেসিডেন্টের জন্য সর্বক্ষণ রক্তের ব্যাগও মজুত থাকে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের গাড়ি থেকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ার ব্যবস্থাও আছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের গাড়ি থেকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ার ব্যবস্থাও আছে।

দ্য বিস্টে আছে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ার ব্যবস্থা 

অত্যাধুনিক এই গাড়িকে সুরক্ষিত করতে ৫ ইঞ্চি পুরু ধাতব বর্ম থাকে। এই ধাতব বর্ম তৈরির ক্ষেত্রে ইস্পাত, টাইটানিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিকস ব্যবহার করা হয়। দ্য বিস্টের সামনের দিকে আছে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গ্রেনেড লাঞ্চার ছোড়ার ব্যবস্থা এবং নাইট ভিশন ক্যামেরা।

এ তো গেল গাড়ি নিয়ে কথা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাড়ির চালক কিন্তু কোনো অংশে কম নন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আরও নানা ইউনিক ফিচার আছে দ্য বিস্টে। যে কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অফিশিয়াল গাড়ি হিসেবে এটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

আসছেন ইভাঙ্কা-কুশনার
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আসতে পারেন মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জামাই জ্যারেড কুশনার। ৩৮ বছরের ইভাঙ্কা এবং ৩৯ বছরের কুশনের দুজনেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ উপদেষ্টা। কাল আহমেদাবাদে পৌঁছানোর পর রোড শো করবেন ট্রাম্প। সেখান থেকে নবনির্মিত সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল স্টেডিয়ামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন নরেন্দ্র মোদি ও ট্রাম্প। সেখান থেকে আগ্রায় উড়ে যাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবার। তাজমহল দর্শন শেষে রাতেই দিল্লি যাবেন তাঁরা। ট্রাম্পের ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তি হতে পারে। তথ্যসূত্র : হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট, ইকোনমিক টাইমস ও এনডিটিভি