তবু ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ভারত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে না, ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনা প্রবল, তবু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে ভারত প্রস্তুত। কাল সোমবার, স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে ট্রাম্প দুই দিনের সফরে ভারতে আসছেন। সঙ্গে আসছেন মেয়ে ইভাঙ্কা ও জামাতা জারেড কুশনার, যাঁরা প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাও।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের এটাই প্রথম ভারত সফর। সফর শুরু হচ্ছে গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির খাসতালুকের দিনরাত তাই এক হয়ে গেছে। এলাহি বন্দোবস্ত করেছে রাজ্য সরকার। গোটা রাজ্যেএই মুহূর্তে সফর ছাড়া আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভোল বদলে গেছে আহমেদাবাদের। যে পথ ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবরমতি আশ্রম হয়ে মোটেরায় যাবেন বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করতে, সেই অঞ্চলগুলো সেজেগুজে ঝকঝকে–তকতকে। ঘুচে গেছে যাবতীয় মালিন্য। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে আয়োজিত ‘হাউডি মোদির’ জাঁকজমককে টেক্কা দিতে ভারতের মোদি সরকার প্রস্তুত। এক লাখ মানুষকে তাই আজ জড়ো করা হবে মোটেরায়, ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে। বড় পরীক্ষার মুখে গুজরাটের বিজয় রুপানির সরকার। পরীক্ষা মোদিরও।

ট্রাম্পের কাছে মোদি ‘বন্ধু’। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি এভাবেই সম্বোধন করেছেন। সফর নিয়ে উজ্জীবিত তিনিও। একটা ভিডিও ক্লিপ তিনি শেয়ার করেছেন, যেখানে ভারতীয় সিনেমা ‘বাহুবলী ২’–এর অভিনেতার মুখে তাঁর মুখ বসিয়ে লেখা হয়েছে, ‘ভারতীয় বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য আর তর সইছে না।’ এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী মোদি রোববার টুইট করে বলেন, ‘ভারত আপনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। কাল তিনি আমাদের সঙ্গে মিলিত হবেন। আমরা সম্মানিত বোধ করছি।’

আহমেদাবাদেই ট্রাম্পকে স্বাগত জানাবেন মোদি। সুসজ্জিত স্বাগত তোরণ, মোদি–ট্রাম্পের পেল্লাই সব কাট আউট, অগুন্তি হোর্ডিং, দেয়াল লিখন ও ফুলের বাহারে নতুন সাজে সেজে উঠেছে আমেদাবাদ। কিন্তু তারই মাঝে রোববার ঘটে যায় অবাঞ্ছিত বিপত্তি। মোটেরায় দুটি স্বাগত তোরণ ভেঙে পড়ে, যা পেরিয়ে ট্রাম্পের স্টেডিয়ামে ঢোকার কথা। হঠাৎ এই বিপত্তি নিরাপত্তারক্ষীদের সচকিত করে তোলে। প্রতিটি তোরণ নতুনভাবে পরীক্ষা শুরু হয়। সচকিত ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তাব্যবস্থাও।

ত্রিস্তরীয় এই নিরাপত্তার প্রথম বলয়টি একান্তই মার্কিন নিরাপত্তারক্ষীদের দখলে। সেখানে কোনো ভারতীয়ের স্থান নেই। দ্বিতীয় বলয় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের (এসপিজি)। তাদের সঙ্গে থাকবে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) কম্যান্ডোরা। তৃতীয় বলয়ের দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের। এরা ছাড়া অগুন্তি সাদাপোশাকের পুলিশ থাকবে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে।

আহমেদাবাদে ট্রাম্প থাকবেন মাত্রই কয়েক ঘণ্টা। সেখান থেকে মোদি ফিরে যাবেন দিল্লি, ট্রাম্প যাবেন আগ্রায় তাজমহল দর্শনে। সোমবার রাতেই তাঁরা দিল্লি ফিরবেন। মঙ্গলবার দুই নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, মোদির ভাষায় যা ‘ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুতাকে আরও সুদৃঢ় করে তুলবে।’

দ্বিতীয় দফার ভোটে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ২৪ লাখ ‘ভারতীয়র’ সমর্থন ট্রাম্পের কাছে অতিগুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ বলেই গত বছর হিউস্টনে ‘হাউডি মেদি’ অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং এবার ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠান দিয়ে ভারত সফর শুরু করছেন। কিন্তু মার্কিন স্বার্থে তাঁর কাছে একই রকম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বিষয়গুলো। ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যঘাটতি ভারতের পক্ষে। মার্কিন মুলুক থেকে ভারতের আমদানি ৩৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। তুলনায় ভারত রপ্তানি করে ৫২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এই অসাম্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অখুশি। তিনি চান ভারতে রপ্তানি বাড়াতে। সে জন্য শুল্ক কমানোর ওপর বারবার তিনি জোর দিয়ে আসছেন। সেই অখুশি না কাটায় বাণিজ্য চুক্তি ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দিয়ে দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইঠিজারকে দেশে রেখে ট্রাম্প ভারত সফর করছেন।

ভারতে মার্কিন রপ্তানির সিংহভাগই প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম। গত ১০ বছরে এই রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এই সফরে প্রতিরক্ষা–সংক্রান্ত বিষয়ে অবশ্যই কিছুটা অগ্রগতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ট্রাম্পের চাহিদা মেনে ভারত তার দুগ্ধ ও কৃষিবাজার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উন্মুক্ত করবে কি না, কিংবা আপেল, আখরোট, বাদাম ও হারলে ডেভিডসন বাইকের ওপর শুল্ক আরও হ্রাস করবে কি না, তা অনুমানসাপেক্ষ। ট্রাম্প ও মোদি ‘বন্ধু’ হলেও ‘দেশ ও জাতির স্বার্থে’ কে কতটা নমনীয় হন, এই সফর সেই ইঙ্গিত দেবে।