বাংলাদেশি ছাত্রীকে ১৫ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ

কলকাতার পার্ক সার্কাসে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভে নারীরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতার পার্ক সার্কাসে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভে নারীরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে ১৫ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ‘সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছে ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। বলা হচ্ছে, মূলত সিএএবিরোধী ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার কারণেই তাঁকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ওই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর নাম আফসারা আনিকা মিম। তিনি বিশ্বভারতীর কলাভবনের অধীন ব্যাচেলর অব ডিজাইন বিষয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। বলা হচ্ছে, সম্প্রতি ওই শিক্ষার্থী সিএএবিরোধী (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন) কিছু ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাঁকে ব্যাপক ট্রোল করা হয়। এর পর পরই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আফসারা আনিকা মিমের বাড়ি বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায়। ২০১৮ সালের শেষ দিকে তিনি পড়াশোনার জন্য ভারত যান। গত ডিসেম্বরে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি র‌্যালিতে তিনি অংশ নিয়েছিলেন।

আউটলুক ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফসারা আনিকাকে ভারত ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে কলকাতার ফরেনারস রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস। এটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি দপ্তর। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আফসারাকে এই নোটিশ দেওয়া হয়। আফসারা আনিকার এক বন্ধু এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে আফসারা আনিকার মন্তব্য জানতে বার্তা সংস্থা পিটিআই যোগাযোগ করেছিল। হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া এক খুদে বার্তায় আফসারা বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করার মতো অবস্থায় আমি নেই।’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ভিসা পাওয়ার শর্তাবলি ভঙ্গ করেছেন আফসারা। তিনি ‘সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ যুক্ত ছিলেন। তবে আফসারা কী ধরনের সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, সেটি ওই নোটিশে স্পষ্ট করা হয়নি।

এদিকে আফসারা আনিকা মিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ডট ইন। তিনি বলেছেন, কোন দোষে এই ধরনের শাস্তি তাঁকে দেওয়া হলো, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। মিমের দাবি, স্রেফ কৌতুহলবশত তিনি সিএএবিরোধী বিক্ষোভের কিছু ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। মিম বলেন, ‘যখন আমি বুঝতে পারি যে, এ নিয়ে কিছু মানুষ আমাকে ট্রোল করছে, তখন তাৎক্ষণিকভাবে আমি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেট করি। আমি সত্যিই নির্দোষ।’

বিশ্বভারতীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ধারণা, আফসারা আনিকা মিমের বিরুদ্ধে কেউ একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিল। এরপরই এমন সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের অভিযোগ, এর মধ্য দিয়ে বিরুদ্ধ মতকে দমন করা হচ্ছে এবং ধ্বংস করা হচ্ছে মিমের ক্যারিয়ার।

অবশ্য কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশন কার্যালয়ের একটি সূত্র স্ক্রল ডট ইনকে জানিয়েছে, আফসারা আনিকা মিমকে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে এখনো তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানে না। তবে মিমের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছিল এবং এ ক্ষেত্রে ডেপুটি হাই কমিশন কার্যালয়ের তেমন কিছু করার নেই।

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) দেশজুড়ে যে অশান্তির জন্ম দিয়েছে, এতে দিল্লিতে মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ২৭-এ পৌঁছেছে। আহত দুই শতাধিক। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই রয়েছেন। বর্তমানে থমথমে হয়ে রয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিস্তীর্ণ এলাকা।