দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত প্রায় ২ হাজার

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চীনের পর সবচেয়ে বেশি ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে ৫০৫ জন সংক্রমিত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭৬৬। দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪২২ জনই দায়েগু শহরে। দেশটিতে আরও একজন মারা যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ হয়েছে। গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের দোকানে দোকানে মাস্ক কিনতে দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন নাগরিকদের দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘ভ্রমণ পুনর্বিবেচনা’ করার আহ্বান জানিয়েছে। আসন্ন যৌথ সামরিক মহড়া স্থগিত করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া।

দক্ষিণ কোরিয়ার পর ইরান ও ইতালিতে সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন ও অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জনস হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির ভাষ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বে ৮২ হাজার ১০০ জন শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ২ হাজার ৮০০ জন। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে সংক্রমিত হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ জন এবং মারা গেছে অন্তত ৫০ জন। ৪৫টির বেশি দেশে ভাইরাসটির বিস্তার হয়েছে। সর্বশেষ সংক্রমণের বিস্তার ঘটা ৯টি দেশ হলো রোমানিয়া, আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, জর্জিয়া, গ্রিস, নরওয়ে, পাকিস্তান ও সুইজারল্যান্ড।

এশিয়ার দেশগুলোর পর সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব ঘটেছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। অন্তত ৪০০ জন সংক্রমিত হয়েছে। এ মহাদেশের অন্তত ১১টি দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে। দেশগুলোতে সংক্রমিত রোগী অনেকেই আবার ইতালিফেরত। ভাইরাসটি মোকাবিলায় ইউরোপের অনেক দেশই এখন জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভ্রমণে বিধিনিষেধসহ প্রায় এক লাখ লোককে কোয়ারেন্টাইনে রাখার কথা জানিয়েছে ইতালি।

>

চীনের গুয়াংডংয়ে করোনাভাইরাস
সংক্রমণ ও মৃত্যু দ্রুত বাড়ছে চীনের বাইরে
সাত দিনে অন্তত ২০টি নতুন দেশে শনাক্ত

গত বুধবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৫ জনই বিদেশ থেকে দেশ ফিরেছে। জাপানের ইউকোহামা বন্দরে নোঙর করে রাখা প্রমোদতরি ডায়মন্ড প্রিন্সেস বা চীনের উহান থেকে ফেরা।

চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে অতি দ্রুত। আক্রান্ত মানুষ ও দেশের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এর ওপর গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেছেন, যদি কোনো দেশ ভেবে নেয় যে তারা আক্রান্ত হবে না, তবে তা হবে এক ‘ভয়ানক ভুল’।

তবে চীনে আক্রান্ত মানুষ ও মৃত্যুর সংখ্যা কয়েক দিন ধরে একটু একটু করে কমছে। এটা কিছুটা আশার কথা হলেও গতকাল আরেক চিন্তার কথা শুনিয়েছে দেশটি। বিবিসির খবরে বলা হয়, চীনের গুয়াংডং প্রদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা মানুষের ১৪ শতাংশ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে জাপানে। ৪০ বছর বয়সী এক নারী প্রথমবার চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার তিন সপ্তাহ পর দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কাজেই দুই দেশের কর্তৃপক্ষই চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া লোকজনের ওপর নজর রাখছে।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গতকাল বলেছে, বুধবার ৪৩৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৭৮ হাজার ৪৯৭ হয়েছে। বুধবার মারা গেছে ২৯ জন। যেগুলোর প্রায় সবই ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশে। এতে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৪৪। স্বাস্থ্য কমিশন আরও জানায়, নতুন রোগীর মধ্যে ৪০৯ জনই হুবেই প্রদেশের এবং ৩ জন বাদে সবাই মারা গেছে এ প্রদেশে।

বুধবার প্রথম রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছে ব্রাজিল, পাকিস্তান, নরওয়ে, গ্রিস, রোমানিয়া ও আলজেরিয়া। বিগত সাত দিনে অন্তত ২০টি দেশে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া প্রায় সব মহাদেশেই রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ইরানের পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মজতাবা জলনুর এ ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও উপস্বাস্থ্যমন্ত্রীর সংক্রমিত হওয়ার কথা জানা গিয়েছিল। দেশটিতে মোট ১৪১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৬ হয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ২ মার্চ থেকে কয়েক সপ্তাহব্যাপী দেশের সব স্কুল বন্ধ রাখতে বলেছেন। আবে বলেন, শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে সরকার অগ্রাধিকার দেয়। জাপানে ১৮৯ জন সংক্রমিত হয়েছে। এ ছাড়া টোকিওর কাছাকাছি নোঙর করে রাখা প্রমোদতরিতে আক্রান্ত হয় আরও ৭০৫ জন। সুইজারল্যান্ডে ২ জন ও যুক্তরাজ্যে ১৫ জন সংক্রমিত হয়েছে। খবর রয়টার্স ও এএফপির।