কত টাকায় নিজেকে বেচলেন, কেজরিওয়ালকে অনুরাগ

অনুরাগ কাশ্যপ ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ছবি: টুইটার
অনুরাগ কাশ্যপ ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ছবি: টুইটার

ভারতের বামপন্থী নেতা কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমতি দেওয়ায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সমালোচনা করেছেন বলিউড পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ। তিনি বলেছেন, ‘আপনি এবং আপনার দল তো উধাও। বলুন, কত টাকায় নিজেকে বিক্রি করলেন?’

দিল্লির দাঙ্গা ও কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদনের পর এই তির ছুড়লেন অনুরাগ কাশ্যপ। কেজরিওয়াল ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির সমালোচনা করলেন তিনি।

কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা চালানোর সবুজ সংকেত দেয় কেজরিওয়াল সরকার। পরোক্ষভাবে গেরুয়া শিবিরের পাশে দাঁড়িয়েই কি কেজরিওয়ালের এমন সিদ্ধান্ত—এ প্রশ্নে সরগরম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। কানহাইয়া কুমার নিজেও আম আদমি পার্টির সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা চালানোর অনুমোদনের জন্য। দ্রুত মামলা শেষ করার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন কেজরিওয়াল সরকারকে। কানহাইয়ার বিরুদ্ধে মামলা চালানোর জন্য অনুমতি দেওয়ায় চটেছেন অনুরাগ কাশ্যপ।

দেশদ্রোহের মামলা চালানোর জন্য অনুমতি দেওয়ায় ধন্যবাদ। দিল্লি পুলিশ এবং সরকারি কৌঁসুলিদের কাছে আবেদন, এবার এই মামলাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হোক। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে এর শুনানি হোক। টিভি চ্যানেলে ‘আপনার আদালত’ না বসিয়ে আইনের আদালতে এর দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক। সত্যমেব জয়তে! কানহাইয়ার এই মন্তব্যকেই শেয়ার করে অনুরাগ কাশ্যপ দুশেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। তিনি লিখেছেন, ‘অরবিন্দ কেজরিওয়াল মশায়, আপনাকে কী বলা যায় বলুন তো! “মেরুদণ্ডহীন” শব্দটাও আপনার জন্য প্রশংসনীয় হবে। আপনি এবং আপনার দল তো উধাও। তারপর বলুন, কত টাকায় নিজেকে বিক্রি করলেন?’

অনুরাগ কাশ্যপ বরাবরই বিজেপি সরকারের সমালোচনায় মুখর। কোনো রকম রাখঢাক না করেই নরেন্দ্র মোদিকে একাধিকবার বাক্যবাণে বিঁধেছেন কাশ্যপ। দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ক্ষমা চাইতেও বলেছিলেন। তবে টুইটে আম আদমি পার্টি প্রসাশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এবার সরাসরি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সমালোচনা করলেন তিনি। ভর্ৎসনা করে বললেন, ‘নিজেকে কত টাকায় বিক্রি করেছেন?’

২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) ক্যাম্পাসে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে সাবেক ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছিল। দিল্লি সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল মামলাটি। এটি গতিশীল করতে গত সপ্তাহে দিল্লির পুলিশ মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারকে চিঠি দেওয়ার পরই মামলা চালানোর অনুমতি মেলে। এর আগে দিল্লি পুলিশকে আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে দিল্লি পুলিশ যেন কেজরিওয়াল সরকারকে স্মরণ করে দেয়। মামলাটি ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে ঝুলে ছিল।

দিল্লির বিজেপি প্রধান মনোজ তিওয়ারি দিল্লি সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মামলাপ্রক্রিয়া চলমান রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তকে আমার স্বাগত জানাই। আমরা চাই আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক।’

২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ছিল কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী নেতা আফজাল গুরুর ফাঁসি কার্যকরের চার বছর। ওই দিন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সভা আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সভা থেকে রাষ্ট্রদ্রোহ স্লোগানের অভিযোগ ওঠে। সেই সভার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছাত্রনেতা উমর খালিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য। পরে এই ৩ সাবেক ছাত্রসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পুলিশ, যা এত দিন স্থবির হয়ে পড়েছিল। তথ্যসূত্র: টুইটার ও এনডিটিভি