বিদেশ থেকে ফিরে দুর্গতদের মাঝে রাহুল

রাহুল গান্ধী । ফাইল ছবি
রাহুল গান্ধী । ফাইল ছবি

ভারতের উত্তর–পূর্ব দিল্লির দাঙ্গাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ালেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। দাঙ্গার সময় তিনি বিদেশে ছিলেন। বুধবার সংসদীয় অধিবেশন মুলতবি হয়ে যাওয়ার পর দলীয় সদস্যদের নিয়ে বাসে চেপে তিনি উত্তর–পূর্ব দিল্লি যান। তাঁর সঙ্গী হন অধীর চৌধুরী, গৌরব গগৈ, কে সি বেনুগোপাল, কুমারী শৈলজা, রণদীপ সিং সুরযেওয়ালা, কে সুরেশ, মুকুল ওয়াসনিকসহ বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা।

দলীয় নেতাদের সঙ্গে রাহুল প্রথমে যান ব্রিজপুরীর একটি পুড়ে যাওয়া স্কুলে। ওই স্কুলে দুষ্কৃতকারীরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। কংগ্রেস প্রতিনিধিরা চাঁদবাগেও যান। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গামন্দির ঘুরে দেখেন। সব এলাকার দাঙ্গাপীড়িতদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের প্রয়োজনের কথা শোনেন। ত্রাণসামগ্রী ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে কি না খোঁজ নেন। কংগ্রেস নেতাদের ঘিরে প্রচুর মানুষ তাদের দুর্দশার কথা জানায়।

ব্রিজপুরীর পোড়া স্কুল দেখার পর রাহুল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে। হিংসা ও ঘৃণার রাজনীতি তা ধ্বংস করতে চাইছে। এতে দেশ ও ভারতমাতার কোনো উপকার হচ্ছে না। বরং পৃথিবীর কাছে ভারতের মাথা হেঁট করে দিয়েছে।

দিল্লি দাঙ্গায় এখন পর্যন্ত ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। বেশ কয়েকজন এখনো নিখোঁজ। কোনো দলের কোনো নেতা এখনো উপদ্রুত এলাকায় যাননি।

দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ খোলেননি। প্রধানমন্ত্রী শুধু সবাইকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিজেপির পক্ষ থেকে আজও শোক প্রকাশ করা হয়নি। কেউ বিন্দুমাত্র দুঃখ প্রকাশও করেনি। ত্রাণের ঘোষণাও কেন্দ্রের পক্ষে করা হয়নি। কোনো নেতা দুর্গত ব্যক্তিদের পাশে গিয়ে দাঁড়াননি। কেউ উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করেননি। সেই নিরিখে রাহুল ও দলের অন্য নেতারাই প্রথম, যাঁরা অকুস্থল ঘুরে দেখলেন।

দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার দাবি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু বুধবারও মেনে নেননি। ফলে টানা তৃতীয় দিন সংসদ পুরোপুরি অচল থাকল। মঙ্গলবার ওম বিড়লা জানান, রঙের উৎসব দোলের (উত্তর ভারতে যা হোলি) পর সরকার এ নিয়ে আলোচনা করবে। কিন্তু বিরোধীরা তাতে রাজি হয়নি। অনড় সরকারপক্ষও। মোদি ও শাহ সংসদ ভবনে গেলেও গত তিন দিনে তাঁদের কেউই লোকসভা বা রাজ্যসভায় ঢোকেননি। এত বড় ঘটনা ঘটে গেলেও সরকারের পক্ষে এখনো কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় বৃহস্পতি ও শুক্রবারও সংসদ অচল থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার দোল। তারপর বোঝা যাবে সংসদ সচল হবে কি না।

সরকারের যুক্তি, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার সময়। এ সময় এমন কিছু করা ঠিক নয়, যাতে উত্তেজনা ছড়ায়। সরকারের এই যুক্তিই দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে জানিয়েছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। বিজেপির চার নেতার ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ ভাষণ দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছে বলে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল। পুলিশকে বলা হয়েছিল ওই নেতাদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে। এফআইআর করতে। বিচারপতি মুরলীধরের ওই নির্দেশ খারিজ করে দেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ধীরুভাই নারাণভাই প্যাটেল। বিচারপতি মুরলিধরকে পাঞ্জাব–হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলিও করে দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি দিল্লি পুলিশকে ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে এক মাস সময় দেন। মামলা পিছিয়ে দেন দেড় মাস।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে বুধবার হাইকোর্টের আগের নির্দেশ খারিজ করে দেন। ‘হেট স্পিচ’সহ দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে যত মামলা হয়েছে, শুক্রবার সব শোনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বোবদে বলেন, ‘এত দীর্ঘ বিরতি অযৌক্তিক ও অন্যায্য। হাইকোর্টের দায়িত্বও আমরা হাতে নিতে চাই না।’

বিজেপি নেতাদের বিভিন্ন ভাষণ দাঙ্গায় সরাসরি উসকানি দিয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। ওই সব ভাষণকেই ‘হেট স্পিচ’ বলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, সাংসদ পরবেশ সিং ভার্মা, সাবেক বিধায়ক কপিল মিশ্রদের বিদ্বেষমূলক ভাষণ পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ করে তুলেছে বলে মামলাকারীদের অভিযোগ। তাঁদের আরজি, দিল্লি পুলিশকে ওই নেতাদের বিরুদ্ধে নিজে থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হোক।