বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ধস

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। কারণ করোনাভাইরাস। বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এবং বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনার প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে। বলা হচ্ছে, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর এই প্রথম এত মারাত্মক দরপতন দেখল বৈশ্বিক শেয়ারবাজার।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক সূচকে ৭ শতাংশের বেশি দরপতন দেখা গেছে। অন্যদিকে, লন্ডনের শেয়ারবাজারে প্রায় ৮ শতাংশ দরপতন হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতি ‘চূড়ান্ত খারাপ’ অবস্থায় রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান সব স্টক এক্সচেঞ্জে গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় সকাল থেকেই শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। একসময় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যে ১৫ মিনিটের জন্য শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ রাখতে হয়। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ প্রায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যপতন হয়। নাসদাকে দরপতন প্রায় ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। ইউরোপেও প্রধান প্রধান শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা যায়। ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনে ৭ শতাংশের বেশি দরপতন দেখা গেছে।

এর আগে এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোয়ও দরপতন দেখা যায়। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচকে ৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স ২০০-এ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ দরপতন দেখা গেছে। চীন ও হংকংয়েও একই ধরন দেখা গেছে।

এমআইটির স্লোন স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু লো বিবিসিকে বলেছেন, ‘বিশ্ববাজারে বর্তমানে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভালোর দিকে না গিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।’

অন্যদিকে, স্বর্ণের দাম গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। একপর্যায়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭০০ ডলারে উঠে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত অনিশ্চিত সময়ে স্বর্ণ মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।

বৈশ্বিক তেলের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গতকাল বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম কমে গেছে। এর মূল কারণ হলো সৌদি আরব ও রাশিয়ার মধ্যকার বিরোধ। বর্তমান পরিস্থিতিতে তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় রাশিয়াকে তেলের উৎপাদন কমিয়ে আনার অনুরোধ করেছিল রপ্তানিকারকেরা। কিন্তু রাশিয়া সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব বলে দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে বাজার ধরে রাখতে তারাও উৎপাদন কমাবে না।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, তেলের বাজারে নেতৃত্ব ধরে রাখতেই এমন ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। এমন পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক তেলের বাজার আরও অস্থিতিশীল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইতালিসহ ১০০টিরও বেশি দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। গবেষণার তথ্য অনুসারে, করোনাভাইরাস বয়স্ক ব্যক্তি এবং আগে থেকেই অসুস্থ—এমন ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে প্রায় ৩ হাজার ৮০০-রও বেশি মানুষ। এর বেশির ভাগই চীনের। সেখানে এখন আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমে এসেছে।