চীনের হুবেই প্রদেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল হচ্ছে

চীনের অবরুদ্ধ হুবেই প্রদেশের উহান শহরের জনশূন্য রাস্তা। ছবি: এএফপি
চীনের অবরুদ্ধ হুবেই প্রদেশের উহান শহরের জনশূন্য রাস্তা। ছবি: এএফপি

চীনে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ছোবলে বিপর্যস্ত হুবেই প্রদেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় সেখানে সুস্থ লোকজনকে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। হুবেই প্রদেশ একটি ‘হেলথ কোড’ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে সেখানের বাসিন্দারা কম ও মাঝারি ঝুঁকি রয়েছে, এমন জায়গায় চলাচল শুরু করতে পারবে।

বিদেশি ও বিদেশফেরত চীনা নাগরিকদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস আবার ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে বলেও সতর্ক করেছে চীন।

আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, প্রাদেশিক সরকার জানিয়েছে, বাসিন্দাদের রঙিন স্বাস্থ্য কোডের মোবাইল অ্যাপ দেওয়া হবে। সবুজ রঙের কোড পাওয়া ব্যক্তিরা প্রদেশের ভেতরে মাঝারি ও কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভ্রমণ করতে পারবেন। করোনাভাইরাসের ভয়াবহ শিকার হুবেই প্রদেশকে গত জানুয়ারি মাস থেকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়।

করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯–এ লন্ডভন্ড উহান শহরে আজ মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো পরিদর্শনে যান চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ভয়াবহ এই ভাইরাস গত বছরের ডিসেম্বরে উহান শহর থেকে ছড়ায় বলে মনে করা হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহ থেকে চীনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসছে। বেইজিং এটাকে তাদের নেওয়া বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের সাফল্য বলে মনে করছে। ভাইরাসটি এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর হারের দিক দিয়ে এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ইরান, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়া।

সি চিন পিংয়ের পরিদর্শনের খবরে চীনের শেয়ারবাজার সূচক কিছুটা ওপরে উঠেছে।

প্রেসিডেন্টের উহান পরিদর্শনের বিষয়ে রেনমিন ইউনিভার্সিটি অব বেইজিংয়ের অধ্যাপক ঝ্যাং মিং বলেন, এটা নিশ্চিত যে সি চিন পিং উহানে আগে পরিদর্শনে যেতে পারেননি ভাইরাসটির সংস্পর্শে আসার ঝুঁকির কারণে। কারণ, শুরুতে তা খুব ভয়াবহভাবে ছড়াচ্ছিল। এখন তিনি যে বীজ বুনেছিলেন, তার ফসল তুলতে গেছেন। তাঁর সেখানে যাওয়ার মানেই হচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না (সি চিন পিংয়ের দল) ভাইরাসটির বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার ঘোষণা দিতে পারে দ্রুত।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে যথাযথভাবে সাড়া না দেওয়া নিয়ে চীন ঘরে-বাইরে তুমুল সমালোচনার শিকার হয়। তবে পরে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে হুবেই প্রদেশের উহান শহর অবরুদ্ধ করে দেওয়াসহ নানা কঠোর পদক্ষেপ ভাইরাসটি ঠেকাতে ভূমিকা রেখেছে।

চীনের স্বাস্থ্য কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার ১৯ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জন উহানের, একজন বেইজিংয়ের, অন্যজন গুয়াংডংয়ের। এই দুজন বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। এ ছাড়া তৃতীয় দিনের মতো হুবেই প্রদেশের বাইরে নতুন কেউ আক্রান্ত হয়নি। এর আগের দিন রোববার আক্রান্ত হয়েছিল ৪০ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্ত হয়েছে ৮০ হাজার ৭৫৪ জন। মারা গেছে ৩ হাজার ১৩৬ জন।

চীন সতর্ক করেছে যে বিদেশি এবং ইরান ও ইতালির মতো আক্রান্ত দেশগুলো থেকে দেশে ফেরা চীনা নাগরিকদের মাধ্যমে ভাইরাসটি আবার ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। বেইজিংয়ে নতুন করে আক্রান্ত ব্যক্তি ব্রিটেন ও গুয়াংডংয়ের আক্রান্ত ব্যক্তি স্পেন থেকে এসেছিলেন। গতকাল পর্যন্ত এই রকম বিদেশ থেকে চীনে ফেরা আক্রান্ত ব্যক্তির মোট সংখ্যা ৬৯–এ পৌঁছেছে।

প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৮৯৭ জন হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। সদ্য হাসপাতাল থেকে ফেরা ব্যক্তিদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে (রোগ সংক্রমণের শঙ্কায় পৃথক রাখা) থাকতে হবে। রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় উহানে অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা ১৪টি হাসপাতালের মধ্যে ১২টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ বাকি দুটিও বন্ধ করে দেওয়ার কথা।