মুক্ত ফারুক আবদুল্লাহ বললেন, 'আমার বলার কোনো ভাষা নেই'

দীর্ঘ সাত মাস বন্দী থাকার পর শুক্রবার মুক্তি পেয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ। শুক্রবারই তাঁর মুক্তির নির্দেশ জারি করা হয়। ৮৩ বছরের এই লোকসভা সদস্যের মুক্তির আদেশে সই করেন জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের মুখ্য সচিব শালীন কাবরা।

মুক্তি পাওয়ার পর ফারুক আবদুল্লাহ বলেন, ‘আজ আমার বলার কোনো ভাষা নেই, আমার অনুভূতি, আমি মুক্ত...।’ তবে তিনি বলেন, সব নেতা মুক্ত না হলে এই মুক্তি পরিপূর্ণ হবে না। শ্রীনগরে নিজ বাসভবনের বাইরে তিনি এ কথা বলেন।

মুক্তির খবর পাওয়ামাত্র ফারুক আবদুল্লার মেয়ে সাফিয়া আবদুল্লাহ খান টুইট করেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘আমার বাবা আবার এক মুক্ত মানুষ।’

জম্মু-কাশ্মীর দ্বিখণ্ডিত হয় ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট। ওই দিনই ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করা হয়। ওই অনুচ্ছেদে এই রাজ্যকে বিশেষ কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। সেদিনই ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লাহ, তাঁর ছেলে ওমর ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দী করা হয়। তিনজনই ওই রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের সঙ্গে বন্দী করা হয় রাজ্যের বহু প্রথম সারির নেতাকে। হুরিয়ৎ কনফারেন্সের নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সময় ভারতীয় সংসদে ফারুকের বন্দিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তখন লোকসভায় বলেছিলেন, ফারুক আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় নিজ গৃহে অন্তরীণ রয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই মন্তব্য অসত্য প্রমাণিত হয় যখন পরে প্রশাসন স্বীকার করে, সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে জননিরাপত্তা আইনে আটক রাখা হয়েছে। কাশ্মীরের জঙ্গল থেকে কাঠ পাচার রুখতে ফারুকের বাবা শেখ আবদুল্লাহ ১৯৭৮ সালে ওই আইন চালু করেছিলেন। জননিরাপত্তা আইনে কোনো ব্যক্তিকে বিনা বিচারে দুই বছর পর্যন্ত আটক রাখা যেতে পারে।

মুক্তি পাওয়ার পর নিজ বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী মলি আবদুল্লাহ (বাঁয়ে) ও মেয়ে সাফিয়া আবদুল্লাহ (ডানে)। শ্রীনগর, ভারত, ১৩ মার্চ। ছবি: এএফপি
মুক্তি পাওয়ার পর নিজ বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী মলি আবদুল্লাহ (বাঁয়ে) ও মেয়ে সাফিয়া আবদুল্লাহ (ডানে)। শ্রীনগর, ভারত, ১৩ মার্চ। ছবি: এএফপি

ফারুক আবদুল্লাহকে ওই আইনে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর। প্রথমে তিন মাসের জন্য, পরে মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও তিন মাস। দ্বিতীয়বারের মেয়াদ শুক্রবারই শেষ হয়। সেদিনেই তাঁর মুক্তিদানের সিদ্ধান্তে সই করা হয়। এই আইনে ধৃত ওমর, মেহবুবাসহ অন্যদের কবে মুক্তি দেওয়া হবে, তা জানানো হয়নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি গত বুধবার রাজ্যসভায় জানিয়েছিলেন, কাশ্মীরে ৪৫১ জন এখনো বন্দী। তাঁদের মধ্যে জননিরাপত্তা আইনে বন্দীর সংখ্যা ৩৯৬।
ফারুক আবদুল্লাহ তিনবার জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। কেন্দ্রেও মন্ত্রী হয়েছেন। পাঁচবার তিনি সাংসদও হন। বর্তমান লোকসভারও তিনি সদস্য। কাশ্মীরের রাজনীতিতে তিনি বরাবরই ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত। তাঁকে আটক করায় স্বাভাবিকভাবেই সংসদে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। সরকার থেকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর দেওয়া হয়নি। তাঁর মুক্তি চেয়ে সম্প্রতি আটটি রাজনৈতিক দলের নেতারা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন।

কাশ্মীরে এর আগে যাঁদেরই মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের দিয়ে বন্ডে সই করানো হয়েছে। তাতে লেখা, ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে শামিল হব না। ফারুক আবদুল্লাহকে ওই ধরনের শর্তাধীন মুক্তি দেওয়া হয়েছে কি না জানা যায়নি। মুক্ত হওয়ার পর তিনি সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে যোগ দেবেন কি না, তা–ও জানা যায়নি। জানা যায়নি তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থা কেমন, তা–ও। জননিরাপত্তা আইনে বন্দী এক ব্যক্তি সম্প্রতি আগ্রা জেলে মারা গেছেন।

বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাহারের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, কাশ্মীরের যাবতীয় দুরবস্থার জন্য দায়ী তিনটি পরিবার। নাম না করলেও বুঝতে দেরি হয়নি, প্রধানমন্ত্রী তিন পরিবার বলতে আবদুল্লাহ, মুফতি ও গান্ধীদের বোঝাতে চেয়েছেন। তাঁর সংকল্প ছিল ওই তিন পরিবারের কবল থেকে উপত্যকার রাজনীতিকে মুক্ত করা। বিভিন্ন দলের পদত্যাগী ও বিতাড়িত নেতাদের জড়ো করে কেন্দ্রীয় উদ্যোগে ওই রাজ্যে সম্প্রতি গঠিত হয়েছে নতুন এক রাজনৈতিক দল। জম্মু-কাশ্মীর আপনি পার্টি। ফারুককে মুক্তি দেওয়া হলেও কেন্দ্র চায় রাজ্য রাজনীতিতে ওই তিন পরিবারের প্রভাব খর্ব করে নতুন ধারার জন্ম দিতে।