করোনা ঠেকাতে স্পেন-ফ্রান্সে বিশেষ বিধিনিষেধ

স্পেনে খাবার দোকানসহ প্রয়োজনীয় সেবা খোলা রাখা হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
স্পেনে খাবার দোকানসহ প্রয়োজনীয় সেবা খোলা রাখা হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

ইতালির পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত আরও দুটি বড় দেশ স্পেন ও ফ্রান্স করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে জরুরি বিধিনিষেধ জারি করেছে। স্পেনে জরুরি জিনিস ও ওষুধপত্র কেনাকাটা ছাড়া লোকজনের বাড়ির বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যানচেজের স্ত্রী বেগোনা গোমেজের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফ্রান্সে রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, ক্যাফে এবং বেশির ভাগ দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের হানায় ইতালির পর এখন স্পেনের পরিস্থিতি সবচেয়ে গুরুতর। সেখানে ১৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফ্রান্সে মারা গেছে ৯১ জন। ইতালিতে এক হাজার ৪৪০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার থেকে ইতালির বেশির ভাগ এলাকা অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) চীনের পর ইউরোপকে এখন করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির কেন্দ্রস্থল বলে জানিয়েছে। এর আগে গত ১১ মার্চ ডব্লিউএইচও করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি বা প্যানডেমিক ঘোষণা করে। সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসাস দেশগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া, সংহতি রাখা এবং সামাজিকতা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২১ জন হয়েছে। ২০০ জনের বেশি বিজ্ঞানী কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছেন।

গতকাল শনিবার রাতে স্পেন সরকার নিশ্চিত করেছে, প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যানচেজের স্ত্রী বেগোনা গোমেজের করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর স্ত্রী রাজধানী মাদ্রিদে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেই রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যানচেজের স্ত্রী বেগোনা গোমেজের করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। ছবি: রয়টার্স
প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যানচেজের স্ত্রী বেগোনা গোমেজের করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। ছবি: রয়টার্স

স্পেনে চার কোটি ৬৭ লাখ মানুষের বাস। সেখানে ছয় হাজার ৩০০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৮০০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই রাজধানীর।

জরুরি অবস্থার আওতায় প্রধানমন্ত্রী স্যানচেজ নাগরিকদের জরুরি জিনিস ও ওষুধ কেনাকাটা বা কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন। সব জাদুঘর, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, খেলাধুলার ভেন্যু বন্ধ থাকবে। রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফেগুলো শুধু বাড়িতে খাবার দিয়ে আসতে পারবে। তবে ব্যাংক এবং পেট্রল স্টেশনগুলোর মতো জরুরি সেবা চালু থাকবে। ইতিমধ্যে দেশজুড়ে স্কুলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী স্পেনবাসীদের ঐক্য ধরে রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্পেন সরকার এই সংকট মোকাবিলায় সাধ্যের সবটুকু করবে।

দেশটিতে জারি করা জরুরি অবস্থা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত। পার্লামেন্ট প্রয়োজন মনে করলে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও বাড়াতে পারে। ১৯৭৫ সালে স্পেন গণতন্ত্রে প্রবেশের পর এটা দ্বিতীয় জরুরি অবস্থা জারির ঘটনা। এর আগে ২০১০ সালে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের ধর্মঘটের কারণে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।

ফ্রান্সে আইফেল টাওয়ার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ছবি: এএফপি
ফ্রান্সে আইফেল টাওয়ার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ছবি: এএফপি

ফ্রান্সে চার হাজার ৪০০ জনের বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। দেশটির জনসংখ্যা ছয় কোটি ৩৫ লাখ। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ ফিলিপ বলেছেন, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

ফ্রান্সে কিছু ব্যবসার পাশাপাশি রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, সিনেমা এবং নাইটক্লাব বন্ধ রাখার ঘোষণা কার্যকর করা হয়েছে। তবে খাবারের দোকান, ব্যাংক, টোবাকো দোকান এবং পেট্রল স্টেশনের জন্য এ ঘোষণা প্রযোজ্য না।

প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ লোকজনকে বাইরে কম যেতে বলেছেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।