করোনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীন দোষাদোষী

সি চিন পিং ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স ফাইল ছবি
সি চিন পিং ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের বিরুদ্ধে বদনাম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসকে ‘চাইনিজ ভাইরাস’ বলে মন্তব্য করলে চীনের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

গতকাল সোমবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এক টুইটে বলেন, ‘চাইনিজ ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত এয়ারলাইনসসহ অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির পাশে শক্তভাবে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্র।’

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনেরা করোনা মহামারিকে এত দিন ‘চাইনিজ করোনাভাইরাস’ বলে কটাক্ষ করে আসছিলেন। তবে ট্রাম্পের টুইটে প্রথমবারের মতো একে ‘চাইনিজ ভাইরাস’ বলে উল্লেখ করা হয়।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন অনেকেই। বলছেন, এটা বর্ণবাদী। এটা এশিয়ান-আমেরিকান সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত।

যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে মারাত্মক করোনায় আক্রান্ত নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল দ্য ব্লাসিও বলেন, ‘আমাদের এশিয়ান-আমেরিকা সম্প্রদায়ের মানুষ ইতিমধ্যে ভুগছে। তাদের প্রতি আর বেশি গোঁড়ামি দেখানোর প্রয়োজন নেই।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে বেশি মৃত্যুর ঘোষণা আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার কথার লড়াই শুরু হয়েছে।

করোনাভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দোষ দিয়ে চীনারা আনুষ্ঠানিকভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি চটে গিয়ে শীর্ষ চীনা কর্মকর্তা ইয়াং জিয়েচিকে ফোন করে এসব বন্ধ করতে বলেছেন।

পম্পেও বলেন, ‘এখন ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানোর সময় নয়। এখন সবজাতিকে একত্রে এই হুমকি মোকাবিলা করার সময়।’

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট গত শুক্রবার চীনা রাষ্ট্রদূত কুই তিয়ানকিকে সমন জারি করে বলেছে, বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করা হচ্ছে, যা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ছে।

গত সপ্তাহে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান টুইট করে বলেন, উহানে নয়, করোনাভাইরাস মহামারির সূত্রপাত যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেখান থেকেই প্রথম রোগীটি চীনে এসেছিল।

ঝাও টুইট করে বলেন, ‘উহানে মহামারি আনতে পারে মার্কিন সেনাবাহিনী। স্বচ্ছ হও। তোমাদের তথ্য জনসমক্ষে প্রচার করো। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমরা ব্যাখ্যা দাবি করি।’

বিজ্ঞানীরা সন্দেহ করছেন, ভাইরাসটি প্রথম মানুষের শরীরে চীনের উহানের একটি মাংসের বাজার থেকে এসেছিল, যেখানে বিষাক্ত প্রাণীর মাংস বিক্রি করা হয়ে থাকে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আপত্তি সত্ত্বেও পম্পেও নিজে সার্স-সিওভি-৩ নামের ভাইরাসটিকে অনেকবার ‘উহান ভাইরাস’ বলেছেন।

ইয়াংকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর সতর্ক করা হচ্ছে যে চীনের বদনাম করার যেকোনো পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাবে। কিছু মার্কিন রাজনীতিবিদ বারবার চীনের মহামারি প্রতিরোধের প্রচেষ্টাকে খাটো করে দেশকে কলঙ্ক দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা চীনা নাগরিকদের ক্ষোভ তৈরি করছে।

করোনা মহামারি ঠেকাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গৃহীত পদক্ষেপ ইতিমধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে। অন্যদিকে, চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনেকটাই কমে এসেছে। দেশটিতে আজ মঙ্গলবার মাত্র একজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে বিদেশ থেকে আসা ২০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চীন ছাড়া অন্য দেশগুলোয় এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার বেশি। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। ১৪৫টি দেশে ১ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ জনের বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।