করোনা আতঙ্কে থমকে গেছে জার্মানি

জার্মানির চিরচেনা চেহারা হঠাৎ পাল্টে গেছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে বাস-ট্রাম খালি, দোকানপাট বন্ধ, রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর খাঁ খাঁ করছে। যেন এক রাতেই ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। করোনাভাইরাস কাজপাগল জার্মানদের লাগাম হঠাৎ করেই টেনে ধরেছে।

একই অবস্থা জার্মানির সীমান্তঘেঁষা মধ্য ইউরোপের অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও হল্যান্ডে। সোমবার জার্মানির রাজধানীতে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জার্মানজুড়ে স্বল্প পরিসরে জরুরি অবস্থা জারির পর আজ মঙ্গলবার জার্মানির ছোট–বড় সব শহরের সামাজিক জীবনযাত্রা থমকে গেছে।

চ্যান্সেলর গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জার্মান জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে করোনাভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ ঠেকাতে বেশ কিছু বিধি জারি করেছেন, যা স্বল্প পরিসরের জরুরি অবস্থা বলে বিবেচিত হচ্ছে।

নতুন বিধি অনুযায়ী জার্মানির ১৬ রাজ্যে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সুপার মার্কেট, ওষুধের দোকান, স্যানিটারিজ, পেট্রলপাম্প, ব্যাংক, ডাকঘর ইত্যাদি ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ রাখতে হবে। হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রেস্টুরেন্টগুলো থেকে অন্যত্র খাদ্য ডেলিভারি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া সব বার, ক্লাব, থিয়েটার, চিড়িয়াখানা, পাবলিক সুইমিংপুল, শিশুদের খেলার স্থান, খেলার মাঠ এবং পতিতালয় বন্ধ রাখতে হবে। জার্মানিতে সব ধরনের অবকাশ যাপন ও অন্য দেশে অবকাশ ভ্রমণ আপাতত বন্ধ ঘোষিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জার্মানিজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৬৩৬। আর এই ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন ২০ জন। ক্রমান্বয়ে সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি জার্মানিতে আতঙ্ক তৈরি করেছে। জার্মানির মধ্য পশ্চিম সীমান্তের নর্থ রাইন ভেস্টফালেন রাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭৪৪।

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বিদেশে অবস্থানরত জার্মানির নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। নিজের দেশের নাগরিকদের ফেরত আনতে জার্মানি সরকার ৫০ কোটি ইউরো ব্যয় করবে। জার্মানির বিমান সংস্থা লুফৎথানসা তাদের সুপরিসর কার্গো বিমান দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহন করে বিভিন্ন শহরে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জার্মানির সংক্রামক রোগ বিষয়ের গবেষণা কেন্দ্র রবার্ট কক ইনস্টিটিউট আজ জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের রেশ আগামী দুই বছর পর্যন্ত থাকতে পারে।