মৃদু উপসর্গেও বিপদ

করোনাভাইরাস
করোনাভাইরাস

ইউরোপে করোনাভাইরাস মহামারি দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির গুরুতর লক্ষণ দেখা না গেলেও সংক্রমিত ব্যক্তিরা এটি সহজেই ছড়াতে পারে। করোনাভাইরাসের প্রথম উপসর্গ টের পেতে ৫ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তাই যাঁদের করোনাভাইরাস একেবারে প্রাথমিক ধাপে, তাঁদেরও কোনো জনসমাগমস্থলে যাওয়া উচিত নয়। এতে তাঁরা অন্যদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেন।

নেদারল্যান্ডসের রটারড্যামের ইরেসমাস মেডিকেল সেন্টারে ভাইরাসবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মেরিওন কোওপম্যানস বলেন, ‘এই সংক্রমণে আমরা ওপরের শ্বাসনালিতে অত্যন্ত উচ্চমাত্রার ভাইরাস দেখতে পাই। বিশেষ করে নাক ও গলায় প্রচুর ভাইরাস থাকে। ভাইরাসের উচ্চ মাত্রার অর্থ তা অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। যে মুহূর্তে আপনি হাঁচি শুরু করেন, আপনার কাশি শুরু হয়।’

কোওপম্যানস বলেন, রোগের এই উদীয়মান চিত্রটি কেন ভাইরাসটি এত তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়েছে, তা বোঝাতে সহায়তা করতে পারে। চীন থেকে করা গবেষণা দেখায় যে প্রথম লক্ষণগুলো প্রকাশে ৫ বা ১০ দিন সময় লাগতে পারে। এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে যাঁরা থাকেন, তাঁরা সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে প্রকাশ্যে চলতে থাকেন। এমনকি লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করলে এগুলো ঠান্ডা আর ফ্লুর মতোই অস্পষ্ট হতে পারে। চীন থেকে পাওয়া অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ কেউ কখনো লক্ষণ কিছুই টের পায় না। এ কারণেই নীতিটিকে কেস সন্ধান ও সংক্রমিত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।

কোওপম্যানস বলেছেন, নেদারল্যান্ডসে রোগের ওপর নজরদারি চালানোর চেষ্টা করার সময় তাঁর এ উপলব্ধি হয়েছে। অন্যান্য অনেক দেশের মতো নেদারল্যান্ডসে শুধু বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস আছে, এমন রোগীদের পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু যখন কয়েকটি শনাক্তবিহীন ঘটনা দেশের মধ্যে ঘটে গেল, তখন তাঁর দল পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ফেলল। তাঁরা তখন স্বাস্থ্যকর্মীদের পরীক্ষা করা শুরু করলেন। অনেকেই এ সময় মৃদু অসুস্থ এবং অত্যন্ত সংক্রামক ছিলেন।

নেদারল্যান্ডসের ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘মানুষ মৃদু উপসর্গের কথা বলতে পারেন, কেবল কাশি বা গলাব্যথা করতে পারে। কিন্তু তাঁদের কাছে প্রচুর ভাইরাস থাকতে পারে।’

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট অ্যালফ্রেডো গারজিনো-ডেমো বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের বৈশিষ্ট্যগুলো অন্য ভাইরাসের মতো বলেই তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক রোগের নির্দিষ্ট সময় থাকে। লক্ষণ না থাকলেও তা ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। তবে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক হতে পারে।’

ফ্রান্সের গণস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ইনসার্মের পরিচালক মেরি-পল কিনি বলেন, অনেক দেশ চরম সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ব্যবস্থা নেওয়ার পথে কেন হাঁটছে, এটি তার ব্যাখ্যা হতে পারে। এটি সাধারণ জনগণের বিস্তৃত পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে।

মেরি সতর্ক করে বলেন, কঠোর সামাজিক দূরত্বের ব্যবস্থাগুলো আলগা করা হলে সাধারণ জনগণের ওপর বিস্তৃত নজরদারি এই রোগের পরবর্তী তরঙ্গগুলো নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।

অ্যালফ্রেডো গারজিনো-ডেমোর মতে, ভাইরাসটি পুনরায় সংক্রমণ করে কি না, বিষয়টি এখনো পর্যালোচনা করা হয়নি। তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানে যা জানা গেছে তা আশাব্যঞ্জক।

কোওপম্যানসের মতে, মৃদু সংক্রমণ হয়তো পুনরায় ঘটতে পারে, তবে অধিকাংশ ব্যক্তিকে প্রথমে কঠিন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই যেতে হবে। তবে করোনাভাইরাসের মিউটেটের (পরিবর্তন ঘটা) বিষয়ে তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেছেন। এটি খুব বেশি পরিবর্তন ঘটে না, যাতে অনেক বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। তাই এ নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা নেই।

গারজিনো-ডেমো আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, মানুষের জন্য এখনো উদারতা আছে। সবাই এ ভাইরাসকে দূরে সরাতে পরিশ্রম করছে। আমরা এ যুদ্ধে জিততে যাচ্ছি।’ তথ্যসূত্র: এনপিআর