কলকাতার কারাগারে বন্দী-কারারক্ষী সংঘর্ষ, নিহত ১

কলকাতার দমদমের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীদের সঙ্গে কারারক্ষীদের সংঘর্ষ চলে আজ। ছবি: ভাঙ্কর মুখার্জি
কলকাতার দমদমের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীদের সঙ্গে কারারক্ষীদের সংঘর্ষ চলে আজ। ছবি: ভাঙ্কর মুখার্জি

কলকাতার দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীদের সঙ্গে কারারক্ষীদের সংঘর্ষে আজ শনিবার একজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে আদালত বন্ধ ও বন্দীদের সঙ্গে পরিবারের সাক্ষাৎ বন্ধের জেরে আজকের সংঘর্ষ হয়।

করোনার জেরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন আদালত জরুরি পরিষেবা ছাড়া ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। স্থগিত রাখা হয়েছে বন্দীদের জামিনের আবেদনও। অন্যদিকে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

আদালত কার্যত বন্ধ থাকায় এবং কারাগারে বিচারাধীন বন্দীদের সঙ্গে পরিবার–পরিজনদের দেখা–সাক্ষাৎ ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিচারাধীন বন্দীরা। তাঁরা দাবি তোলেন, তাঁদের সঙ্গে তাঁদের পরিবার–পরিজনদের দেখা–সাক্ষাতের সুযোগ করে দিতে হবে, জামিনের প্রার্থনা শুনতে হবে এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের মতো তাঁদের প্যারোলে মুক্তি দিতে হবে। এসব দাবি নিয়ে আজ সকালে কলকাতার দমদমের কেন্দ্রীয় কারাগারের বিচারাধীন বন্দীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা কারাগারের মধ্যেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এ সময় কারাগারের কারারক্ষীরা এই বিক্ষোভ থামাতে গেলে তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন কারারক্ষীরা। একপর্যায়ে কারারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। কারারক্ষীরাও বন্দীদের লাঠিপেটা শুরু করেন। এতে আরও ক্ষোভে ফেটে পড়েন বন্দীরা। একপর্যায়ে বিচারাধীন বন্দীরা কারাগারের গ্যাস সিলিন্ডার এনে তা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন কারাগারে। কারাগারের গাড়িও ভাঙচুর করেন। বন্দীরা এ সময় মই এনে দেয়াল টপকে পালানোরও উদ্যোগ নেন। পুলিশ এসেও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।

আজকের সংঘর্ষে একজন বিচারাধীন বন্দী মারা যান। বন্দীরা দাবি করেছেন, পুলিশের গুলিতে ওই বিচারাধীন বন্দী মারা যান। তাঁরা আরও দাবি করেছেন, এই সংঘর্ষে আরও পাঁচ বন্দী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুরুতর আহত ৯ জনকে আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই সংঘর্ষে জেল সুপারসহ আটজন কারারক্ষীও আহত হয়েছেন। বন্দীরা একপর্যায়ে কারারক্ষীদের ওপর পাথরও বর্ষণ করে। সংঘর্ষের সময় বন্দীরা দা–কুড়ালও ব্যবহার করেন। এই ঘটনায় কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে দমদম কেন্দ্রীয় কারাগার।

এ ঘটনা শুনে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু এবং খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দ্রুত ছুটে যান কারাগারে। পাশাপাশি ছুটে আসেন বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মাসহ সিআইডি ও র‌্যাফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত চলতে থাকে বন্দী বনাম কারারক্ষীদের সংঘর্ষ। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।