ঘণ্টা বাজিয়ে চিকিৎসাকর্মীদের শ্রদ্ধা জানাল ভারত

দেশের জন্য যাঁরা জীবন বাজি রেখে যাঁরা করোনা মোকাবিলা করছেন, জনতা কারফিউয়ের সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে কাঁসর, ঘণ্টা, থালা, বাসন বাজিয়ে ও হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানায় ভারতবাসী। মুম্বাই, ২২ মার্চ। ছবি: রয়টার্স
দেশের জন্য যাঁরা জীবন বাজি রেখে যাঁরা করোনা মোকাবিলা করছেন, জনতা কারফিউয়ের সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে কাঁসর, ঘণ্টা, থালা, বাসন বাজিয়ে ও হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানায় ভারতবাসী। মুম্বাই, ২২ মার্চ। ছবি: রয়টার্স

জনতা কারফিউয়ের ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে। আজ রোববার সারা দেশ দল, মত, জাত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যেভাবে তাঁর ডাকে ১৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউয়ে শামিল হতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিল তা অভূতপূর্ব। কোনো বিপর্যয়ের মোকাবিলায় ভারতবাসীকে এভাবে এক জোট হতে আগে দেখা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, রোববার বিকেল ঠিক পাঁচটায় গোটা দেশের মানুষ যেন যে যাঁর বাড়ির ছাদ, বারান্দা অথবা চৌহদ্দিতে এসে কাঁসর, ঘণ্টা, থালা, বাসন বাজান। হাততালি দেন। দেশের জন্য যাঁরা জীবন বাজি রেখে করোনার মোকাবিলা করছেন, ওটা হবে তাঁদের প্রতি জনতার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে রোববার বিকেল পাঁচটায় গোটা দেশ মুখরিত হয়ে উঠল। দেশের মানুষের এইভাবে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন আগে দেখা যায়নি।

এটা যদি বিপর্যয় মোকাবিলার ইতিবাচক দিক হয়ে থাকে, তা হলে দুশ্চিন্তার হলো একদিনেই ভারতে করোনাক্রান্ত আরও তিন জনের মৃত্যু। এই তিন মৃত্যু নিয়ে এখনো পর্যন্ত দেশে করোনার মোট বলি হলেন ৭ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪১। এঁরা ছাড়া ২৬ জন আক্রান্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

করোনার মোকাবিলায় যুদ্ধকালীন তৎপরতা দেখা দিলেও ভারতীয় সংসদের অধিবেশন বন্ধ করা হয়নি। বিরোধীদের প্রবল দাবির মুখে আজ সোমবার সম্ভবত সংসদ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতে চলেছে।

জনতা কারফিউয়ের সাফল্যের রেশ থাকতে থাকতেই করোনার মোকাবিলায় রোববার রাত বারোটা থেকে সারা দেশে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দূর পাল্লার সব ট্রেনের পাশাপাশি সারা দেশের সব রাজ্যে লোকাল ট্রেন চলাচলও বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে মেট্রোও। এই সঙ্গে রাজধানী দিল্লির সর্বত্র রোববার রাত থেকেই জারি করা হলো ১৪৪ ধারা। এই ধারায় ৪ জনের বেশি যে কোনো সমাবেশ নিষিদ্ধ। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, প্রয়োজনে এই ধরনের কারফিউ ফের জারি করা হতে পারে।

দেশের জন্য যাঁরা জীবন বাজি রেখে যাঁরা করোনা মোকাবিলা করছেন, হাততালি দিয়ে তাঁদের অভিনন্দন জানায় ভারতবাসী। হায়দরাবাদ, ২২ মার্চ। ছবি: এএফপি
দেশের জন্য যাঁরা জীবন বাজি রেখে যাঁরা করোনা মোকাবিলা করছেন, হাততালি দিয়ে তাঁদের অভিনন্দন জানায় ভারতবাসী। হায়দরাবাদ, ২২ মার্চ। ছবি: এএফপি

শুধু একদিনের জন্য জনতা কারফিউ নয়, দেশের মোট ৭৫টি জেলা ৩১ মার্চ পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই জেলাগুলো থেকে কেউ এই কদিন বাইরে যেতে পারবেন না। কেউ ঢুকতেও পারবেন না। চালু থাকবে শুধু অত্যাবশ্যক পণ্য পরিষেবা। ভিন রাজ্যে বসবাসকারী মানুষজনের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে-বাসে চেপে বাড়ি ফিরবেন না। তাতে নিজের তো বটেই, পরিবারকেও ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে। মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের বিভিন্ন শহরে কাজের সন্ধানে যাওয়া উত্তর ও পূর্ব ভারতের মানুষজনকে কয়েকটা দিন অপেক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ওই রাজ্যগুলো থেকে কদিন ধরে বিশেষ ট্রেন চালানো হয়েছে। রোববার রাত থেকে সব বন্ধ।

পাঞ্জাব সরকার আগেই আন্তরাজ্য বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। এবার রাজস্থানও সেই ঘোষণা করল। এই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে প্রায় প্রতিটি রাজ্যই। গুজরাটের চার বড় শহর আহমেদাবাদ, সুরাট, বরোদা ও রাজকোট সম্পূর্ণভাবে ‘লকডাউন’ করে দেওয়া হয়েছে। বিহার, ওড়িশা, কর্ণাটক সরকারও রাজ্যে আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছে। রোববার রাত থেকে লকডাউন করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সবকটা শহর। যে সব শহর লকডাউন হচ্ছে, সেখানকার মানুষজন সোমবার বিকেল পর্যন্ত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহে সময় পাবেন। প্রতিটি রাজ্য সরকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে মজুতদারদের। সর্বত্র মুদিখানা, ওষুধ ও দুধ ছাড়া সব দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো রাজ্যে জেলবন্দিদের সঙ্গে পরিবারের সাক্ষাৎও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিপর্যয়ের মোকাবিলায় এই ধরনের সাবধানতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন গরিবেরা। দিন আনি দিন খাই মানুষজনের জন্য বিভিন্ন রাজ্য সরকার নানা ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। যেমন, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী গরিবদের জন্য ১ হাজার টাকা করে সাহায্য দেবেন বলেছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বিনা পয়সায় রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা ২ টাকা কেজি দরে চাল ও ১ টাকা কেজি দরে গম পাচ্ছেন, তাঁদের বিনা পয়সায় তা সরবরাহ করা হবে। বিভিন্ন রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হচ্ছে। জরুরি নয় এমন অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।