করোনাভাইরাসে লাতিন আমেরিকায়ও চলছে লকডাউন

কলম্বিয়ার বোগাতায় লকডাউনে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে। ছবি: এএফপি
কলম্বিয়ার বোগাতায় লকডাউনে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে। ছবি: এএফপি

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গতকাল বুধবার থেকে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। আরও বেশি লকডাউন, সীমান্ত বন্ধ ও দরিদ্র অঞ্চলে সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৭ হাজার ৪০০ পার হয়ে গেছে। মারা গেছে ১২৩ জন। এ পরিস্থিতিতে বলিভিয়া ও কলম্বিয়া পুরোপুরি লকডাউন করে দিয়েছে। চিলি এপ্রিল মাসের শেষ পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর পরিস্থিতি জেনে নিন:

বলিভিয়া: গতকাল মধ্যরাত থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বলিভিয়া তাদের সীমান্ত বন্ধ রাখার পাশাপাশি কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট জিনাইন আনেজ ‘পরিচ্ছন্নতার জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার লকডাউনের আদেশ দেওয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা উপেক্ষা করা হচ্ছিল বলে এবারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা এসেছে। কঠোর পদক্ষেপ নিতে রাস্তায় পুলিশ ও সেনা টহল শুরু হচ্ছে। এতে সীমান্ত অতিক্রম বা মানুষের বাইরে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

কলম্বিয়া: গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে দেশটিতে তিন সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইভান ডুকু বলেন, ‘বাড়িতে থাকুন। ভাইরাস ছড়ানো প্রতিরোধ করুন এবং জীবন বাঁচান।’ ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটির ৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ লকডাউন থাকবেন। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ৫০০ রোগী পাওয়া গেছে। গত রোববার থেকে দেশটির রাজধানী বোগোতায় মেয়রের আদেশে লকডাউন হয়ে রয়েছে।

চিলি: আজ বৃহস্পতিবার রাত থেকে চিলির সান্তিয়াগোর ১৩ লাখ মানুষকে লকডাউনের আওতায় আনা হচ্ছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তাদের লকডাউনে থাকতে হচ্ছে। দেশটির কর্মকর্তারা জানান, মে মাস পর্যন্ত দেশটির স্কুল বন্ধ থাকবে। প্রথম করোনার রোগী পাওয়ার পরপরই ১৬ মার্চ থেকে ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।

দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেসি মানালিচ বলেন, লকডাউন এলাকাগুলোয় সংক্রমিত রোগীদের ঘনত্ব ও মানুষের চলাচলে রোগ বেশি ছড়াতে পারে। তাই মানুষকে ঘরের মধ্যেই থাকতে হবে। চিলিতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১ হাজার ১০০ রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং ৩ জন মারা গেছেন।

পানামা: ফ্লু উপসর্গের ৪২ রোগী থাকলেও পানামা হল্যান্ড আমেরিকা ক্রুজ লাইন পরিচালিত জানদাম জাহাজটিকে তাদের খালের ওপর দিয়ে যেতে দেওয়ার কথা বলেছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী রোজারিও টার্নার। জাহাজটিতে ১ হাজার ৮০০ যাত্রী রয়েছে। ৭ মার্চ বুয়েনস এইরেস থেকে যাত্রা শুরু করে এটি সান আন্তোনিওর উদ্দেশে যাচ্ছে।

পানামা নিয়ম করেছে, পানামাতে আসা প্রতিটি জাহাজকে অসুস্থ মানুষের তালিকা দিতে হবে। যদি কারও শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে, তবে তাঁকে নামতে দেওয়া হবে না। পানামাতে এখন পর্যন্ত ৫৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

হন্ডুরাস: দেশটিতে সেনাসদস্যরা লকডাউনে থাকা লোকজনকে খাবার সরবরাহ শুরু করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট অরল্যান্ডো হার্নান্দেজ বলেছেন, মানুষকে ঘরে রাখতে দেশটির ৮০ হাজার মানুষকে খাবার সরবরাহ করা হবে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৩৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ব্রাজিল: ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো সতর্ক করেছেন, সাও পাওলো ও রিও ডি জেনিরোর গভর্নরেরা যদি শাটডাউন অবস্থা তুলে না নেন, তবে মারাত্মক বিশৃঙ্খল পরিস্থিত সৃষ্টি হবে। সুপারমার্কেট লুট শুরু হয়ে যাবে। দেশটির জনবহুল দুটি অঙ্গরাজ্যে স্কুল ও ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলো কিছুই উৎপাদন করছে না। কর্মীদের বেতন দিচ্ছে না। যদি অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, তবে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। আমরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। যদি সুপারমার্কেট লুট শুরু হয়, তবে আমাদের বিশৃঙ্খলা ও ভাইরাস দুটো সমস্যা প্রকট হয়ে উঠবে।’

মেক্সিকো: মেক্সিকোর বৃহত্তম ব্যাংক বিবিভিএ পূর্বাভাস দিয়েছে, করোনভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এ বছর অর্থনীতি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পাবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশ মেক্সিকো থেকে পণ্য আমদানি করে, তাদের কাছে রপ্তানি কমে যেতে পারে। ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব বেড়ে গেলে মেক্সিকোর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও কমে যাবে। বারক্লেইস ও ক্রেডিট সুসির মতো ব্যাংকগুলোও দেশটির অর্থনীতি ২ থেকে ৪ শতাংশ কমে যাওয়ার কথা বলেছেন।

উরুগুয়ে: উরুগুয়েতেও আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ২১৭ জন রোগী পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য শ্রমিক আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকেরা আন্দোলন চালাচ্ছেন দেশটিতে।