মাস্ক কেউ ব্যবহার করছে, কেউ করছে না

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে বিভিন্ন দেশে মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে বিভিন্ন দেশে মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

হংকং, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল, জাপানের টোকিওর মতো শহরে এখন যদি রাস্তায় কেউ মুখে মাস্ক না পরে বের হন, তাঁকে অবশ্যই বাঁকা চাহনি সহ্য করতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরু থেকে এই পরিস্থিতি এসব শহরে। এমনকি মাস্ক না পরা একজন ব্যক্তিকে অনেকে সামাজিকভাবে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন।

তবে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেশি, এমন অনেক দেশে কিন্তু বিষয়টি এমনভাবে দেখা হচ্ছে না। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিডনি বা সিঙ্গাপুরে কেউ চাইলেই মাস্ক না পরে খোলামুখে নিসংকোচে ঘুরে বেড়াতে পারেন। এখন যখন করোনাভাইরাস একটা ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে, তখন মাস্ক নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কি বদলাচ্ছে?

আসলে সরকারের আদেশ, বিশ্লেষকদের উপদেশ, কোনো কিছুর ওপরই এটা নির্ভর করে না। এটি পুরোপুরি সংস্কৃতির ব্যাপার। করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, শুধু দুই ধরনের মানুষের জন্য মাস্ক পরা আবশ্যক। এক, যাঁরা অসুস্থ ও যাঁদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিয়েছে। দুই, যাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের দেখাশোনা করছেন। এর বাইরে কারও জন্য মাস্ক পরার খুব বেশি প্রয়োজন নেই। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এশিয়ায় মাস্ককে অন্যতম সুরক্ষা মনে করার কারণ
মাস্ক সুরক্ষা দেয়, এমন ধারণা আছে মানুষের। তবে বিষয়টি এত সরল নয়। বিশেষ করে বর্তমান কোভিড-১৯ ভাইরাসের সময়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে, কোভিড-১৯ রোগের ভাইরাসটি মানুষের মুখ থেকে বের হওয়া ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। যা বাতাসে ভাসে না। এ ক্ষেত্রে মাস্ক পরা ভালো, তবে মাস্ক পরলেই সুরক্ষিত থাকা যাবে এমনটা বলা যায় না। মাস্ক সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটা মিথ্যা বিশ্বাস তৈরি করেছে।

এশিয়ার একটা বড় অংশে মনে করা হচ্ছে, মাস্ক ব্যবহার করাটাই একটা নিয়ম। চীন, হংকং, জাপান, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানে মনে করে, যে কেউ এই ভাইরাস বহন করতে পারে। এমনকি একজন সুস্থ ব্যক্তিও। তাই মাস্ক পরা সবার দায়িত্ব—এর মাধ্যমে ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে একাত্ম পোষণ করা হয় বলে মনে করে তারা। কোনো কোনো দেশের সরকার তার মানুষকে মাস্ক পরতে বলছে। এমনকি চীনের কোথাও কোথাও মাস্ক না পরলে গ্রেপ্তার করা হয়। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন মনে করে, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত যথেষ্টসংখ্যক মানুষকে পরীক্ষা করা হয়নি। আক্রান্ত মানুষের সঠিক সংখ্যা বের হয়নি।

এ জন্য অন্যদের থেকে বাঁচতে এসব দেশের অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেন। অবশ্য হংকংয়ে মাস্কের ব্যবহার তাদের সংস্কৃতিরই একটা অংশ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বহু আগে থেকে তারা এটা ব্যবহার করে আসছে। এমনকি এটি একটি ফ্যাশনও। হংকংয়ের রাস্তার ধারে অনেক দোকানে বহু আগে থেকেই বিক্রি হয় ‘হ্যালো কিটি’ মাস্ক। পূর্ব এশিয়ার অনেক মানুষ আগে অসুস্থ হলেই মাস্ক পরতেন। এ সব দেশে খোলা রাস্তায় কফ ফেলা বা হাঁচি দেওয়া অভদ্রতা। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন এটির প্রকোপে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে হংকং। বহু মানুষ মারা যায়। এরপর থেকে এখানের মাস্ক পরাটা সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে গেছে।

তবে এশিয়ার সব জায়গায় যে মাস্ক পরতে দেখা যায়, তা নয়। সিঙ্গাপুর সরকার নির্দেশ দিয়েছে সবাইকে মাস্ক না পরতে, যাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা যথেষ্ট মাস্ক পান।

যে ভাইরাসে পাল্টে যায় পরিস্থিতি
মূলত ভাইরাস থেকে বাঁচতেই এখন সব দেশে মাস্ক পরার বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে হংকং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডোনাল্ড লো বলেন, ‘মাস্ক পরাটা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। মূল বিষয় হলো মুখে হাত না দেওয়া, ভিড়ের মধ্যে না যাওয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।’

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মহামারি বিশেষজ্ঞ বেঞ্জামিন কওলিনং বলেন, ‘আমরা এটা বলতে পারছি না যে মাস্কের দরকার নেই। কিছু তো উপকার হচ্ছেই। এ কারণেই এটা স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হচ্ছে।’ যদি সবাই মাস্ক পরে, তাহলে তা একটু হলেও সাহায্য করে বলে মনে করছেন তিনি।

বর্তমান পরিস্থিতির নেতিবাচক দিক হচ্ছে, যাদের প্রয়োজন তারাই হয়তো এগুলো পাচ্ছেন না। অন্যদিকে সুস্থ মানুষ বেশ কিছু মাস্ক জোগাড় করে বসে আছেন। জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে মাস্কের ভয়াবহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এমন সময় আসতে পারে, একটা মাস্ক পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে, যা অস্বাস্থ্যকর। আবার ঘরে সেলাই করে বানানো মাস্ক আসলে তেমন উপকারি নয়।