করোনায় টোকিও লকডাউন হতে পারে

টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া এবং জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলার আহ্বান জানালেও খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। ২৮ মার্চ, টোকিও। ছবি: এএফপি
টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া এবং জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলার আহ্বান জানালেও খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। ২৮ মার্চ, টোকিও। ছবি: এএফপি

জাপানের রাজধানী টোকিওতে গত তিন দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ কারণে জাপান সরকার ও টোকিও নগর প্রশাসন রাজধানী লকডাউন করার আভাস দিয়েছে।

টোকিও এবং আশপাশের এলাকাগুলোয় আজ শনিবার সপ্তাহান্তের ছুটি শুরু হয়েছে ধীর-স্থিরভাবে। পথে মানুষের ভিড় তেমন একটা নেই। টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার গতকাল শুক্রবার বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যেতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বাধ্য হয়েই নগরবাসী ঘরেই সময় কাটাচ্ছেন।

টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকে গতকাল শুক্রবার সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জাপানের রাজধানী লকডাউন করে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তবে পরিস্থিতি যেন আতঙ্কের পর্যায়ে না পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে সুপারমার্কেট ও কনভেনিয়েন্স স্টোর খোলা রাখা এবং খাদ্যসামগ্রীর নিয়মিত চালান পরিবহনের পথ উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আজ শনি ও কাল রোববারের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে জাপান সরকার।

আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ডাকা অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি কী বক্তব্য দেবেন, তা শোনার অপেক্ষায় সবাই। বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রচলিত আইনের একটি সংশোধনী প্রধানমন্ত্রীকে জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা দেওয়ায় করোনাভাইরাস সামাল দিতে সেই পথে তিনি এগোবেন কি না, এর সুস্পষ্ট আভাস হয়তো আজ সন্ধ্যার সংবাদ সম্মেলনে পাওয়া যাবে।

টোকিওতে গত বুধবার থেকে শুরু করে তিন দিন ছিল সংকটময় সময়। এর ঠিক আগে যখন মনে করা হচ্ছিল করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় সাফল্য দেখাচ্ছে জাপান, ঠিক তখনই এ আঘাত আসে। পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের শহর টোকিওর নগরজীবন যে সত্যিকার অর্থে বিপদগ্রস্ত করে তুলতে পারে, সেই আশঙ্কাকে এখন আর অলীক ভাবনা মনে করা হচ্ছে না। নতুন সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফিক হিসাবে গত বুধবার শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবার আরও নতুন করে ৪৭ জনের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবর দেওয়া হয়েছে। পরদিন শুক্রবার আরও ৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এই হিসাব প্রকাশ হওয়ার পর গভর্নর কোইকে গতকাল সন্ধ্যায় লকডাউনের ইঙ্গিত দেন। গতকালের হিসাব নিয়ে জাপানের রাজধানীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণে শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ২৯০, যা জাপানের ৪৭টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে পরবর্তী করণীয় নিয়ে মন্ত্রিসভার পাশাপাশি সরকারের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে পরামর্শ অব্যাহত রেখেছেন। অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য বেসরকারি মালিকানাধীন ভবন ও সম্পত্তি সাময়িকভাবে অধিগ্রহণের ক্ষমতাও প্রধানমন্ত্রীকে দেবে।

টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া এবং জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন নগরবাসীর প্রতি। তবে সেই আহ্বানে তেমন সাড়া মেলেনি। এ কারণে মেট্রোপলিটন সরকার এখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে আরও একধাপ এগিয়ে লকডাউন ঘোষণার মধ্যে দিয়ে জনগণকে ঘরে আবদ্ধ রাখার চিন্তা করছে।