করোনা মোকাবিলায় ৪ দেশের 'ম্যাজিক'

কোভিড-১৯ সারা বিশ্বকে থমকে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০-এর শীর্ষ নেতারা গত বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের এক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতার প্রশংসা করেছেন। এই চার দেশের শীর্ষ নেতার বক্তৃতা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

সি চিন পিং।
সি চিন পিং।


চীন: প্রথম দিন থেকেই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ
সি চিন পিং, প্রেসিডেন্ট, চীন
কোভিড–১৯-এর সংক্রমণ আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। দুঃসাধ্য পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে গিয়ে চীনের সরকার ও জনগণ ঘাবড়ায়নি। ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম দিন থেকেই আমরা জনগণের জীবন ও তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিয়েছি। আত্মবিশ্বাস, ঐক্যকে সুসংহত করা, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিরোধ ও রোগ নিরাময় এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সারা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে খোলামনে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছি।

আমাদের লড়াইটা ছিল সংক্রামকের বিরুদ্ধে জনযুদ্ধ। আমাদের অনেক বেশি সংগ্রাম এবং যথেষ্ট ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সংক্রামকের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের সবচেয়ে কঠিন সময়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের অনেক সদস্যের সাহায্য–সহযোগিতা পেয়েছে চীন। চীনের জনগণ সব সময় এটা মনে রাখবে।

আমরা যখন কথা বলছি, তখন কোভিড–১৯–এর সংক্রমণ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। এ জন্য আমি চারটি প্রস্তাব করছি।

প্রথমত, কোভিড–১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। এ জন্য তথ্য বিনিময়, ওষুধ, ভ্যাকসিন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও আন্তসীমান্ত সংক্রমণ কমাতে যত দ্রুত সম্ভব জি–২০ স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের একটি বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব করছি। জনস্বাস্থ্যব্যবস্থা নাজুক—উন্নয়নশীল এমন দেশগুলোকে প্রস্তুতি জোরদার এবং সাড়াদানে সহায়তার জন্য জি–২০–এর সদস্যদেশগুলোকে যৌথভাবে সাহায্য করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমর্থনে তথ্য বিনিময় এবং নীতিমালা ও কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য জি–২০ কোভিড সহায়তা উদ্যোগের প্রস্তাব করছি। মানবতার কল্যাণে ভালো অভিজ্ঞতাগুলো বিনিময়ের পাশাপাশি যৌথ গবেষণা পরিচালনা এবং ওষুধ ও ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহযোগিতার জন্য চীন তৈরি আছে। যে দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান হারে সংক্রমণ বাড়ছে, সেসব দেশে সহযোগিতা দিতেও প্রস্তুত রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক স্তরে সংক্রমণের নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার স্বার্থে আমাদের সাড়াদানের পদক্ষেপ হতে হবে সমন্বিত। সংক্রমণের নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার জন্য বিশ্ব আগে কখনো দেখেনি—এমন একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। সংক্রমণের নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা, আন্তসীমান্ত সংক্রমণ কমানো এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বৈশ্বিক প্রয়াসের নেতৃত্ব দিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সমর্থন করেছে চীন। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমর্থনে সমন্বিত, নিয়মতান্ত্রিক ও কার্যকর প্রটোকলগুলোর বিকাশে জি-২০ দেশগুলোকে সংক্রমণ প্রতিরোধবিষয়ক তথ্যগুলো বিনিময় বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

চতুর্থত, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির নীতিগুলোতে সমন্বয় বাড়ানোর প্রয়োজন। সংক্রামক ব্যাধির কারণে বিশ্বজুড়ে উৎপাদন ও চাহিদা বিঘ্নিত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি যাতে মন্দার মধ্যে পড়ে না যায়, সে জন্য দেশগুলোকে সামষ্টিক নীতির বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে আমাদের শক্তিশালী ও কার্যকর আর্থিক ও মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের বৈশ্বিক উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধশিল্পের উপাদান, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, সংক্রামক ব্যাধিনিরোধক ওষুধ এবং অন্যান্য সরবরাহ চীন আরও বাড়াবে।

জি–২০–কে একটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে হবে এবং সংক্রামকবিরোধী সামষ্টিক নীতির সমন্বয়ের জন্য দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হবে। এখন ক্রান্তিকাল চলছে। আমাদের সবাইকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে এবং পদক্ষেপ নিতে হবে দ্রুত। আমি নিশ্চিত, পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইতে আমাদের জয় হবে।

মুন জায়ে।
মুন জায়ে।


দক্ষিণ কোরিয়া: ব্যাপক হারে পরীক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছি
মুন জায়ে, প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ কোরিয়া
কোভিড–১৯ বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য বড় হুমকি তৈরির পাশাপাশি বিশ্বের অর্থনীতিতে অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। জি–২০ দেশের নেতৃত্বের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে আমরা এখনকার সংকট কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী।

দুই মাস ধরে দক্ষিণ কোরিয়া ছিল কোভিড–১৯ চ্যালেঞ্জের কেন্দ্রবিন্দুতে। যদিও পূর্বপ্রস্তুতি ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে দ্রুত স্থিতিশীল করেছে। কোভিড–১৯–এর সংক্রমণের শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার উদারতা, স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নীতি মেনেই পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাপক হারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সংক্রমণ কীভাবে দ্রুত ছড়াতে পারে, তার ভিত্তিতে আমরা নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করেছি। ভাইরাসে সংক্রমিত লোকজন এবং ঘনিষ্ঠভাবে তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের বিচ্ছিন্ন করে সবার বিদেশভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। আমরা মনে করি, সংক্রমণের বিস্তার রোধ এবং প্রাণহানি কমানোর 

ক্ষেত্রে এগুলো ছিল সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ। এসব পদক্ষেপ নিতে গিয়ে যেসব সৃজনশীল ব্যবস্থা হাতের কাছে ছিল, তার সবই ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন একেবারে যথাযথভাবে রোগ নির্ণয় করবে—এমন রাসায়নিক পদার্থ শুরুতেই তৈরি করা হয়েছে। দ্রুত এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা আর সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বিপুল সংখ্যায় পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) থাকা ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখতে এবং নিজেই নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা যাতে করতে পারেন, সে জন্য অ্যাপস ব্যবহার করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মেনে লোকজন ও পণ্যের আন্তসীমান্ত চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ কমালেও কোয়ারেন্টিনের সুফল নিশ্চিত করতে সীমান্তে লোকজনের চলাচলের ওপর বিশেষ ব্যবস্থা চালু করেছি। ভ্রমণের ওপর আমরা পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করিনি। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমিত দেশ থেকে যাঁরাই এসেছেন, ব্যাপকভাবে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছি। তাঁরা যে দেশের নাগরিকই হন, তাঁরা যাতে সংক্রমণ না ছড়ান, সেটা নিশ্চিত করতে এটা করা হয়েছে। প্রতিদিন কতজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলো এবং নতুন করে কতজন আক্রান্ত হয়েছেন—সে সম্পর্কে প্রতিদিন তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

কোভিড–১৯–এর মধ্য দিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করার স্বার্থে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বয় জোরদারের স্বার্থে তিন দফা প্রস্তাব করছি।

প্রথমত, জি–২০ ভুক্ত সবগুলো দেশ রোগের সংক্রমণ রোধে সব ধরনের ক্লিনিক্যাল ডেটা ও কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন উৎপাদনে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি যেসব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল, তাদের অবশ্যই আমাদের সাহায্য করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের অবশ্যই সামষ্টিক অর্থনীতির সবগুলো নীতি গ্রহণের পাশাপাশি বৈশ্বিক আর্থিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে হবে। সেই সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশ ও দরিদ্র দেশগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য যুক্ত থাকতে হবে।

তৃতীয়ত, বিশ্ব অর্থনীতিতে কোভিড–১৯–এর নেতিবাচক প্রভাব কমাতে দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক লেনদেন অব্যাহত রাখতে হবে।

লি সিয়েন লুং।
লি সিয়েন লুং।


সিঙ্গাপুর: জীবন বাঁচাতে সবার রসদ এক করতে হবে
লি সিয়েন লুং, প্রধানমন্ত্রী, সিঙ্গাপুর
বিশ্ব এই শতকে কোভিড-১৯-এর মতো একটি ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। পৃথিবীর ৭৮০ কোটি মানুষের সবার স্বাস্থ্যের জন্য এটি ঝুঁকি তৈরি করেছে। আর অর্থনীতিতে এর প্রভাব মহামন্দার মতো হতে পারে। তাই এর একটি বৈশ্বিক সমাধান প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য আমি তিনটি প্রস্তাব দিচ্ছি।

প্রথমত, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সন্দেহভাজন রোগীদের চিহ্নিত করে তাদের কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করা, সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। এই পদক্ষেপগুলো সংক্রমণের হারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ কমিয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যাও কমিয়ে দিয়েছে। যদিও নিজেদের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে এই সাফল্য পেলেও অন্য দেশ থেকে নতুন সংক্রমণ আমদানির ঝুঁকিতে আমরা রয়েছি। আমাদের প্রত্যেকে যতটা শক্তিশালী, নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে আমরা ততটাই দুর্বল। তাই আমাদের একে অন্যকে সহযোগিতা করতে হবে, অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞদের বিনিময় করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, কোভিড-১৯-এর আগে থেকেই অর্থনীতি চাপে ছিল। এখন তা ভেঙে পড়েছে। নিজেদের ব্যবসা ও কর্মসংস্থান রক্ষার জন্য প্রতিটি দেশের সরকারই সম্ভাব্য সবকিছুই করছে। তাই এ মুহূর্তে শেয়ারবাজার বন্ধ না করাটা জরুরি। আমি এটা জেনে আনন্দিত যে উদ্ভূত পরিস্থিতি ঠেকাতে জি-২০ভুক্ত দেশের অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা আর্থিক ও মুদ্রানীতিতে সমন্বয় আনছেন।

তৃতীয়ত, কোভিড-১৯-এর চিকিৎসা কিংবা এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য আমাদের বিজ্ঞানী ও আমাদের রসদ এক জায়গায় জড়ো করতে হবে। এটি সংকট কমাবে এবং জীবন বাঁচাবে। একসময় এসে কোভিড-১৯ থামবে; তবে এটাই শেষ মহামারি নয়, যার মুখোমুখি হচ্ছে পৃথিবী। কাজেই আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হবে, ভবিষ্যৎ মহামারির জন্য প্রস্তুতি বাড়াতে হবে। যেভাবে এশিয়ার কিছু দেশ সার্স মোকাবিলা করেছিল, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে।

সামনের দিকে তাকিয়ে বলতে পারি, এই সংকট বিশ্বায়ন বদলে দেবে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, দুই মাস আগেও শেনজেন অঞ্চলের (ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো) সীমান্তে বিধিনিষেধ চিন্তাও করা যেত না। আর এখন তা বাস্তবতা। খুব স্বাভাবিকভাবেই দেশগুলোকে বিশ্বায়নের ঝুঁকির মুখে আরও বেশি সুরক্ষার প্রয়োজন। তেমনি অন্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে জাতীয়ভাবে সামর্থ্য বাড়াতে হবে। সরবরাহব্যবস্থার ওপর নির্ভরতার বিষয়ে জোরালো আশ্বাস ও লোকজনের নিরাপদ চলাচলও প্রয়োজন। আরও বেশি বাস্তবসম্মতভাবে আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রশ্ন সামনে আসবে। এই মহামারি আমাদের একে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতার প্রমাণ দেয়, বিশ্বায়নকে দায়ী করে না; এটি আমাদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়।

​শিনজো আবে।
​শিনজো আবে।


জাপান: টিকা আবিষ্কারে গুরুত্ব দিতে হবে
কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
করোনাভাইরাসের (কোভিড–১৯) টিকা আবিষ্কারের ওপর গুরুত্ব দিতে জি-২০ জোটের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ​শিনজো আবে। একই সঙ্গে তিনি এ সংকট মোকাবিলায় নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে জোটের সবার জন্য একটি শক্তিশালী আর্থিক ও মুদ্রানীতি ঠিক করতে জোটের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

কোভিড–১৯–এর মতো বর্তমান শতাব্দীর সবচেয়ে বড় এই সংকট সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে এক বড় ধাক্কা দিয়েছে বলে মনে করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। এই প্রেক্ষাপটে তিনি ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার আলোকে জি–২০ জোটভুক্ত দেশের মুদ্রানীতিতে সমন্বয় আনাটা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মত দেন।

গত বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। তাতে তাঁর পুরো বক্তব্য জাপানের সরকারি প্রচারমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। তবে শিনজো আবের টুইটার ও ফেসবুক পেজ থেকে সম্মেলনের সারকথা পাওয়া গেছে।

এদিকে জাপানের বেসরকারি গণমাধ্যম এশিয়ান নিক্কেই রিভিউর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জি-২০ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভিডিও সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী কোন প্রেক্ষাপটে টোকিও অলিম্পিক পিছিয়ে দিতে হলো, সেটা ব্যাখ্যা করেন।

এ বছরের জুলাই–আগস্টে জাপানের টোকিওতে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে মার্চের ২৪ তারিখ জাপানের প্রধানমন্ত্রী অলিম্পিক এক বছর পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের গ্রীষ্মে অলিম্পিক আয়োজন করা হবে।