করোনাকে হারিয়ে বাড়ি ফিরলেন ৯৫ বছরের বৃদ্ধা

হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে কথা বলছেন ৯৫ বছর বয়স্ক গেট্রুড ফেটন। মার্চ ২৭, লে লোকল, সুইজারল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স
হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে কথা বলছেন ৯৫ বছর বয়স্ক গেট্রুড ফেটন। মার্চ ২৭, লে লোকল, সুইজারল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স

সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যায় বয়স্ক ব্যক্তিদের সংখ্যাই বেশি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন বয়স্করাই। কিন্তু এবার ৯৫ বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধা করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে একেবারে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সুইজারল্যান্ডের নাগরিক গেট্রুড ফেটন নামের ৯৫ বছর বয়সী ওই নারীর কাছে হার মেনেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহ আইসোলেশনে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে গত শুক্রবার বাড়ি ফিরেছেন গেট্রুড ফেটন। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও এখনো ২১ জন নাতি-পুতির সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি তাঁর। অনলাইনের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন ফেটন।

বাসায় ফিরে হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকার বর্ণনা দিয়েছেন ফেটন। তিনি বলেন, হাসপাতালের একটি আইসোলেশন কক্ষে তাঁর চিকিৎসা চলে। সেখানে তাঁকে কৃত্রিম অক্সিজেন দেওয়া লেগেছে। কিন্তু একপর্যায়ে তিনি চিকিৎসকদের কাছে অনুরোধ করেন, তাঁকে যেন কৃত্রিম অক্সিজেন না দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ফেটন বলেন, ‘এই বয়সে আমাকে আর কৃত্রিম অক্সিজেন দেবেন না। আমি জীবনটা কাটিয়ে ফেলেছি, উপভোগ করেছি। এখন আমাকে শান্তিতে মরতে দিন।’

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেও নাতির সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছেন গেট্রুড ফেটন। মার্চ ২৭, লে লোকল, সুইজারল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেও নাতির সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছেন গেট্রুড ফেটন। মার্চ ২৭, লে লোকল, সুইজারল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স

করোনার সঙ্গে লড়াই করা সুইজারল্যান্ডের লে লোকল শহরের এই নারী বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ তাঁকে আইসোলেশনে থাকতে হয়েছে। সেখানে তাঁকে অ্যান্টিবায়োটিক ও ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইন দেওয়া হয়েছে। তবে বাসায় ফিরে এখন তিনি খুব আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘এখন আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট মানসিক শক্তি পাব। আমার অনেক নাতি-পুতি আছে। এত দিন কেবল আইপ্যাডে তাদের সঙ্গে চ্যাট করেছি। এখন তাঁদের সশরীরে দেখতে চাই, সামনাসামনি তাদের কথা শুনতে চাই।’

গেট্রুড ফেটন বলেন, হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় বেশ কিছু দিন অসুস্থ হয়ে বাসায় বিছানা বন্দী ছিলাম। অবস্থার অবনতি হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে স্থানীয় লা চক্স-দে-ফন্ডস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমেই চিকিৎসকেরা রক্তচাপ মেপে পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা নিয়ে নেয়। দিনে তিনবার শিরায় অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। এটা খুব কষ্টের ছিল।

নবতিপর ফেটন আরও বলেন, ‘মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো ভয় নেই। অন্তত এই ৯৫ বছর বয়সে এসে ভয়টা একেবারেই নেই। এখনই আমার চলে যাওয়ার সময়, মৃত্যুর সময়। কিন্তু হাসপাতালে থাকার সময় আমি কখনোই ভাবিনি যে, আমি মরে যাচ্ছি। আমি একটুও ভয় পাইনি।’

করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার পর বাসার সামনে ওয়াকার নিয়ে হাঁটছেন গেট্রুড ফেটন। মার্চ ২৭, লে লোকল, সুইজারল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার পর বাসার সামনে ওয়াকার নিয়ে হাঁটছেন গেট্রুড ফেটন। মার্চ ২৭, লে লোকল, সুইজারল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স

প্রতিবেদনে বলা হয়, গেট্রুড ফেটন ওয়াকারের মাধ্যমে চলাফেরা করেন। তিনি জীবনের প্রায় সময় সুস্থই ছিলেন। তিনি কেবল উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ছাড়া মাঝে মাঝে ব্রঙ্কাইটিসের কারণে কাশির সিরাপ খেতেন।

ফেটনের মেয়ে জ্যাকুলিন ফেটন বলেন, ‘চিকিৎসক আমাকে জানালেন, মায়ের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার আগে কোনো কিছু নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। এ কথা শোনার পর অনেক ভয় পেয়েছিলাম। পরদিন চিকিৎসকেরা জানালেন, তাঁরা মায়ের শরীরে ওষুধ প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন। তৃতীয় দিন থেকে ওই ওষুধ কাজ করতে শুরু করে। দিনে দুইবার মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছি। যখন দেখলাম কোনো কাশি ছাড়াই মা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছেন, তখনই বুঝে গেছি আমরা করোনার বিরুদ্ধে জিতে যাচ্ছি।’

সুইজারল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে গত শুক্রবার পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ১৯৭ জনের। আর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ১৬১ জন।