করোনা নয়, টোকিওতে তুষারপাত ঘরবন্দী করল মানুষকে

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঘরে থাকতে সরকারের আহ্বানে সাড়া না দিলেও তুষারপাতের কারণে এখন বাধ্য হয়েই ঘরে থাকছে মানুষ। প্রায় ফাঁকা টোকিওর রাস্তা। ২৯ মার্চ, টোকিও। ছবি: এএফপি
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঘরে থাকতে সরকারের আহ্বানে সাড়া না দিলেও তুষারপাতের কারণে এখন বাধ্য হয়েই ঘরে থাকছে মানুষ। প্রায় ফাঁকা টোকিওর রাস্তা। ২৯ মার্চ, টোকিও। ছবি: এএফপি

জাপানের টোকিওতে শনিবারের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় টোকিওসহ বড় শহরে জনসমাগম এড়িয়ে চলার সরকারি আহ্বানেও সাড়া দেয়নি মানুষ। তবে চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নেমে যাওয়ায় শহরে তুষারপাত শুরু হয়। আর এতেই বাধ্য হয়েই রোববার ছুটির দিনে ঘরবন্দী জীবন কাটাচ্ছে মানুষ।

অসময়ের এই তুষারপাত টোকিওতে বিরল ঘটনা। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল এটাকে প্রকৃতির আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছেন। কারণ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাড়িতে থাকার নির্দেশ অমান্য করছিল মানুষ। আর তুষারপাতের কারণে এবার বাধ্য হয়েই মানুষ তা মেনে নিচ্ছে।

জাপানের আবহাওয়া এজেন্সি বলছে, রাজধানী টোকিওর পশ্চিমাঞ্চলসহ কান্ত অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় তুষারপাত আগামীকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

অন্যদিকে আবার তাপমাত্রার হঠাৎ এতটা পতন নিয়ে কিছুটা উদ্বেগও নাগরিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে। এর কারণ আবহাওয়ার সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যগত অবস্থার সম্পর্ক। তাপমাত্রার হঠাৎ এত বড় ওঠানামা সাধারণত অনেক ক্ষেত্রেই সর্দি-কাশির কারণ হয়ে দেখা দেয়। আর ঠান্ডা লাগলে করোনাভাইরাস আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হতে পারে।

এদিকে গতকাল শনিবার জাপান প্রথমবারের মতো সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার হিসাব দিয়েছে। এর মধ্যে টোকিওতে ৬৩টি সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। আর টোকিওর পার্শ্ববর্তী জেলা চিবায় শনাক্ত হয় ৬০ জন। টোকিওর তাইতো ওয়ার্ডের একটি হাসপাতালে রোগী, চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীসহ আরও ২৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে ওই একই হাসপাতালে ২০ জনের বেশি রোগী ও চিকিৎসা কর্মীর করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবর দিয়েছিল টোকিওর মেট্রোপলিটন সরকার। এ কারণে তাইতো ওয়ার্ডের এইজু জেনারেল হাসপাতালকে এখন রাজধানীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্লাস্টার হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অন্যদিকে চিবা জেলায় শনিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ জন। এর মধ্যে ৫৭ জন হলেন তনোশো শহরে অবস্থিত মানসিক প্রতিবন্ধীদের একটি সেবাদান কেন্দ্রে। এঁদের মধ্যে ৩১ জন হচ্ছেন কেন্দ্রের কর্মী। অন্যরা মানসিক প্রতিবন্ধী।

শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জাপানে ডায়মন্ড প্রিন্সেস প্রমোদ তরীর ৭১২ জনের বাইরে ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। প্রমোদ তরীর ১০ জনসহ মোট ৬৫ জনের এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, শুক্রবার পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত ৯৭৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

জাপানে এখন চেরিফুল ফুটছে। এই সময়ে চেরিফুল দেখতে প্রায় সবাই পার্ক কিংবা অন্যান্য জায়গায় যান। তবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এবার বাইরে না যেতে বারবার আহ্বান জানাচ্ছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে বন্ধুদের নিয়ে চেরিফুলের শোভা উপভোগের একটি পার্টিতে উপস্থিত হয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী আকিয়ে আবে। বিষয়টি নিয়ে পার্লামেন্টের অধিবেশনেও প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে হয়েছে।
জনপ্রিয় সাময়িকী শুকান পোস্টের অনলাইন সংস্করণে ছবিটি ছাপা হওয়ার পর গত শুক্রবার পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের বাজেট কমিটির অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধীদলীয় একজন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলে আবে বলেছেন, সেটা ছিল একটি রেস্টুরেন্টের ভেতরে আয়োজিত ব্যক্তিগত পার্টি এবং ছবিটি রেস্টুরেন্টের বাগানে তোলা।

বিরোধীদলীয় ওই সংসদ সদস্য অবশ্য উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, নিজের স্ত্রীর এ রকম একটি ছবি চারদিকে প্রচারিত হতে থাকা অবস্থায় সাধারণ নাগরিকদের ঘরে বসে থাকার উপদেশ তিনি কীভাবে দিতে পারেন তা তাঁর বোধগম্য নয়।