লকডাউন নয়, সামাজিক দূরত্বে গুরুত্ব দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। রোববার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। তারপরও কেন লকডাউন হচ্ছে না, কেন বন্ধ হচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কিসের ওপর ভরসা করে সরকার বলছে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে করোনাভাইরাস? বিভিন্ন ফোরামে এসবের জবাব চাইতে চাইতে জনগণ ক্লান্ত। সরকারও তার মতো করে উত্তর দিয়েই যাচ্ছে, জনগণ সন্তুষ্ট হলেও হচ্ছে, না হলেও নয় এর মাঝেই চলছে অস্ট্রেলিয়ার করোনাভাইরাসের মহামারি ঠেকানোর প্রবল যুদ্ধ।

সপ্তাহখানেক আগে করোনাভাইরাসের প্রকোপ যখন দ্রুত গতিতে বাড়ছে তখন একদিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ফেডারেল সরকার অন্যদিকে রাজ্য সরকারদের পরিকল্পনায় কিছুটা বিভ্রান্ত ছিল দেশটির আপামর জনসাধারণ। এখন সরকার থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে কণ্ঠ কিছুটা একরকম-সামাজিক দূরত্ব, সামাজিক দূরত্ব, এবং সামাজিক দূরত্ব। পুরোপুরি লকডাউন না করে প্রতিনিয়ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দীর্ঘমেয়াদি লড়াই করার প্রস্তুতি-ই যেন শ্রেয়। এটাই অনুধাবন করছে পুরো অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে, গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্টকে। ফলে, অস্ট্রেলিয়া আজ পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য টেস্ট করেছে ১ লাখ ৮৪ হাজার মানুষকে যা পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি টেস্টের উদাহরণ। এর মাঝে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২ শতাংশেরও নিচে। এক পরিসংখ্যান বলছে, কিছু দেশের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও অস্ট্রেলিয়ার পরিষেবা দেওয়ার সামর্থ্য থেকে সংকটপূর্ণ রোগী অনেক কম। ফলে অস্ট্রেলিয়া সরকারও রোগ বিস্তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেক আত্মবিশ্বাসী। বলছে, কঠোর নজরদারিতে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার করোনাভাইরাস। সার্বক্ষণিক পরিমাপের মধ্যে রয়েছে পরবর্তী পদক্ষেপ। জনগণ যেন শান্ত থাকে এবং নিয়মকানুন যেন কঠোরভাবে মেনে চলে।

সংকটপূর্ণ আক্রান্ত মানুষ ২৩, আইসিইউ পরিষেবা রয়েছে ২ হাজারেরও বেশি:

অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসে প্রায় ৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত হলেও সংকটপূর্ণ আক্রান্ত রোগী রয়েছে মাত্র ২৩ জন। যাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) প্রয়োজন। বর্তমানে সমগ্র অস্ট্রেলিয়াতে আইসিইউ রয়েছে ২ হাজার ২২৯টি। এর মাঝে নিউ সাউথ ওয়েলসে রয়েছে সবচেয়ে বেশি ৮৭৪ টি। অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি ১ লাখ মানুষে রয়েছে ৮ দশমিক ৯টি বেড, পার্শ্ববর্তী দেশ নিউজিল্যান্ডে রয়েছে ৫ দশমিক ১টি এবং মহামারিতে পর্যুদস্ত ইতালিতে রয়েছে আরও বেশি ১২ দশমিক ৫। ফলে, অস্ট্রেলিয়া কম করে হলেও আরও ৫ হাজার ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ আইসিইউ বেড দ্রুত সংযোজন করতে যাচ্ছে সঙ্গে নিয়োগ করতে যাচ্ছে ১০ হাজার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র পারদর্শী নার্স। কিন্তু এত দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র পারদর্শী নার্স পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে এ নিয়ে বিকল্প চিন্তাও করছে সরকার।

অন্যদিকে, সবকিছু মিলে অস্ট্রেলিয়া সরকার দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে এটা স্পষ্ট। এ জন্য পুরোপুরি লকডাউনে না গিয়ে অপরিহার্য নয় এমন পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে এবং প্রতিনিয়ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর কঠোর গুরুত্ব দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (এবিসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষেধক তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এ রকম ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে রেখে এগিয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়া এবং গভীর পরিমাপে রাখবে পরিস্থিতি যেন খারাপ কিছু হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে। তাই আপাতত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত আকারে অপরিহার্য কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সরকার। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার প্রফেসর পল কেলি বলেন, কেউ ভাববেন না যে আমরা দুই বা তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউন আরোপ করলাম এবং এরপর করোনভাইরাস মুক্ত সাধারণ জীবনে ফিরে গেলাম। তিনি আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেম রয়েছে এবং আমরা এই প্রাদুর্ভাবের জন্য খুব ভালোভাবে প্রস্তুত।

কমছে প্রাদুর্ভাবের মাত্রা:

রোববার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ১০ জন সমবেত হওয়ার পরিবর্তে ২ জনে সীমাবদ্ধ করেছেন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার চিফ মেডিকেল অফিসার ব্রেন্ডন মারফিও কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়ানো কমার দিকে। সংক্রমণের হার প্রথম দিকে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হলেও এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনসহ আমাদের পদক্ষেপগুলো কঠোরভাবে মানলে স্বল্প সময়ে করোনাভাইরাসের আক্রান্তের হার আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

ভার্চুয়াল হাসপাতাল:

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ভার্চুয়াল হাসপাতাল শুরু হতে যাচ্ছে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সিডনিতে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এর পরিষেবা শুরু হবে। তখন করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ঘরে বসেই নিতে পারবেন। এ ছাড়া, এখন থেকে কেউ দেশের বাইরে থেকে প্রবেশ করলে সরকারি তত্ত্বাবধানে হোটেলে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

করোনাভাইরাসের সর্বশেষ অবস্থা:

এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৩ হাজার ৯৬৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে। এই রাজ্যে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৭৯১। এ ছাড়া, ভিক্টোরিয়াতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬৯, কুইন্সল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫৬, সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় ২৮৭, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় ৩১১, ক্যানবেরায় ৭৭, তাসমানিয়ায় ৬১ এবং নর্দান টেরিটরিতে ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় কোনো বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।