করোনায় পশ্চিমবঙ্গে আরও একজনের মৃত্যু

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল রোববার গভীর রাতে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৩ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ২৬ মার্চ তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি হন। এই নারীর বাড়ি দার্জিলিংয়ে। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দুইজনে পৌঁছেছে। প্রথম মৃত্যু হয়েছিল কলকাতার দমদমের বেসরকারি একটি হাসপাতালে। প্রবীণ এক নাগরিক মারা যান।

কলকাতার বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে প্রথম ভর্তি তিনজন রোগীর সর্বশেষ রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় গতকাল স্বস্তি ফিরে এসেছিল চিকিৎসকদের মধ্যে। তাঁদের মনে হয়েছিল যে চিকিৎসায় সাড়া মিলেছে। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৭ জন রোগীর চিকিৎসা তাঁরা এগিয়ে নিতে পারবেন। গতকাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও তিনজন রোগীর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তবু তাঁরা মনে করছেন, তাঁদের চিকিৎসাপদ্ধতি রোগীদের সুস্থ করে তুলতে পারবে।

সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১। মৃত মানুষের সংখ্যা ২। অন্যদিকে ভারতে বেড়েছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। এখন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৯ জন। মারা গেছে ২৭ জন।

দেশব্যাপী লকডাউনে যারা সাড়া দিচ্ছে না, সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল রোববার 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের বিকল্প নেই। এই লকডাউনকে যেকোনো মূল্যে সফল করতে হবে।

ভারতের আন্তরাজ্য সীমানা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে আন্তরাজ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অবাধ যাতায়াত থাকবে। আর লকডাউনের কারণে গোটা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শ্রমিকদের আর সেই রাজ্য ছেড়ে কষ্ট করে নিজের রাজ্যে ঢুকতে হবে না। নিজ নিজ রাজ্যে শ্রমিকদের ক্যাম্প করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার পরিস্থিতি ঠিক হলে তাঁদের নিজ নিজ রাজ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

আন্তরাজ্য সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে কার্যত বন্ধ রাখা হয়েছে আন্তরাজ্য সীমান্ত। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের গাড়ি মুক্ত রাখা হয়েছে তালিকা থেকে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে রয়েছে ওডিশা, বিহার, ঝাড়খন্ড, সিকিম, ভুটান এবং নেপালের সীমান্ত। অন্যদিকে রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে বিস্তীর্ণ স্থল ও নৌসীমান্ত।

করোনাভাইরাস আক্রমণের পর এবার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের এবং নেপাল ও ভুটান সীমান্তের কড়া নজরদারি শুরু করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তারাও গোটা সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে। বিশেষ করে যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই এবং নৌসীমান্ত রয়েছে, সেখানে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। শুরু হয়েছে ত্রিস্তরীয় নজরদারি। বিএসএফের ডিআইজি কুণাল মজুমদার বলেছেন, 'আমরা সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছি। এখন সীমান্তে বন্ধ হয়ে গেছে চোরাচালান। আমরা চাইছি করোনা যেন আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে। এ জন্য বাড়তি বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে।'

২২৮ কিলোমিটার হেঁটে অবশেষে ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মধ্যপ্রদেশের শ্রমিক ৩৮ বছরের রণবীর সিং।
দিল্লির হোটেলে কাজ করতেন তিনি। লকডাউনের জেরে হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি বাড়ি ফিরতে দিল্লি থেকে হাঁটতে শুরু করেন। রণবীরের বাড়ি মধ্যপ্রদেশের মোরেলা জেলার বডফরা গ্রামে। ২২৮ কিলোমিটার আসার পর আগ্রার সিকান্দারার কৈলাস মোড়ে অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। আর যেতে পারেননি ১২৪ কিলোমিটার দূরের নিজের গ্রামে। সংবাদমাধ্যম বলেছে, এভাবে বিভিন্ন রাজ্য থেকে শ্রমিকেরা নিজ রাজ্যে হেঁটে যাওয়ার পথে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫ শিশুও রয়েছে।

প্রবীণ রোগীকে ফেলে চম্পট অ্যাম্বুলেন্স চালকের
উত্তর কলকাতার রাজেন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটের এক প্রবীণ ব্যক্তির জ্বর ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাঁর ছেলে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। বহু কষ্ট করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হলে চালক মনে করেন, এই প্রবীণ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত। অগত্যা কিছু দূর যাওয়ার পর ওই চালক প্রবীণ ব্যক্তিকে রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যান। এরপর ছেলে ফের চেষ্টা করেও অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে ব্যর্থ হন। এ খবর চলে যায় স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে। তিনি ছুটে এসে অ্যাম্বুলেন্সও জোগাড়ে ব্যর্থ হন । তিনি খবর দেন স্থানীয় থানায়। থানার পুলিশ এসেও জোগাড় করতে ব্যর্থ হয় গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স। অগত্যা পুলিশের গাড়িতে আর জি কর হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয় ওই প্রবীণ ব্যক্তিকে। আর জি কর মেডিকেল কলেজে পরীক্ষার পর রোগীকে জানানো হয়, তিনি করোনায় আক্রান্ত নন। তিনি মৌসুমি ভাইরাসের শিকার। এরপরই ওই প্রবীণ ব্যক্তি ফিরে আসেন বাড়িতে।

চিকিৎসক আক্রান্ত
কলকাতায় রোববার এক চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তিনি কলকাতার আলিপুরের সেনা হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান। ১৭ মার্চ তিনি দিল্লি থেকে ফেরেন। এখানে এসে যথারীতি রোগীদের চিকিৎসাও করেন। ২৬ মার্চ তিনি অসুস্থ বোধ করেন। ২৮ মার্চ ভর্তি হন সেনা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে।