কিউবান চিকিৎসকদের চাহিদা বাড়ছে

কিউবার চিকিৎসকেরা করোনাভাইরাসের চিকিৎসা দিতে বিশ্বজুড়ে কাজ করছেন। ছবি: রয়টার্স
কিউবার চিকিৎসকেরা করোনাভাইরাসের চিকিৎসা দিতে বিশ্বজুড়ে কাজ করছেন। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা যেমন বাড়ছে, তেমনি কিউবান চিকিৎসকদের চাহিদাও বাড়ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৫৯টি দেশে ২৯ হাজারের বেশি পেশাদার চিকিৎসক কাজ করছেন। লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে হাজারো চিকিৎসক পাঠাচ্ছে দেশটি।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিউবার চিকিৎসকদের চাহিদা বেড়েছে বলে দেশটি থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মেডিকেল টিম সাহায্য হিসেবে পাঠানো হয়েছে।

চীনের সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া জানিয়েছে, ২৮ মার্চ ৩৯ জন চিকিৎসক ও নার্সের একটি দল অ্যান্ডোরায় পাঠিয়েছে কিউবা। করোনা মহামারি মোকাবিলায় এটি তাদের ১৩তম মেডিকেল ব্রিগেড, যা বিদেশে কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। অ্যান্ডোরায় ৩০৮ জন করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন এবং চারজন মারা গেছেন।

কিউবার জনস্বাস্থ্য উপমন্ত্রী মার্সিয়া কোবাস বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনভাইরাসকে মোকাবিলায় শুধু মানুষের মধ্যে সংহতি কার্যকর হতে পারে।

কিউবার সর্বশেষ চিকিত্সা সহায়তা হিসেবে দেশটির হেনরি রিভ ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল ব্রিগেডের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনা বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউরোপে কাজ করেছেন। ২০০৫ সালে কিউবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মহান নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো এ ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৯ সালে কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে বিপ্লবের পর থেকেই সমাজতান্ত্রিক দেশটিকে শেষ করার মরিয়া চেষ্টা করে গেছে আমেরিকা; এখনো করছে। অর্থনৈতিক অবরোধসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাখা হয়েছে। পশ্চিমের উন্নত ধনী দেশগুলোও সমাজতান্ত্রিক কিউবার বিরুদ্ধে সেই পদক্ষেপকেই কার্যত সমর্থন করেছে। বিপরীতে এই ভয়ংকর সংকটের মোকাবিলায় কিউবা দ্বিতীয়বার ভাবেনি।

অ্যান্ডোরায় চিকিৎসক পাঠানোর আগে কিউবা থেকে ভেনেজুয়েলাসহ প্রতিবেশী লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে চিকিৎসক পাঠানো হয়েছে। এর বাইরে ইতালিতে কিউবান এবং চীনা স্বাস্থ্যকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত লম্বার্ডি অঞ্চলে স্থানীয়দের সহায়তা করছে।

চিকিত্সা সহযোগিতার জন্য কিউবান কেন্দ্রীয় ইউনিট পরিচালক জর্জ হিদালগো বলেন, ‘তারা অনেক পরিশ্রম করছে ও ইতালির মানুষকে কঠিন অবস্থার মধ্য থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করছে। এখন পর্যন্ত দেশটি থেকে ৮৫০ জন চিকিৎসক বিদেশে গেছেন। এসব চিকিৎসকদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কলেরা ইবোলার মতো রোগে চিকিৎসা দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমাদের যা আছে, তা আমরা ভাগ করে দিই।’

কিউবার হেলথ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের মহাসচিব সান্তিয়োগে বাদিয়া বলেছেন, ৪৫টি দেশ থেকে করোনাভাইরাস মহামারিতে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

কিউবার চিকিৎসক দল ইতালিতে মহামারির চিকিৎসার জন্য যাওয়ার ঘটনায় গোটা দুনিয়ায় সাড়া পড়ে যায়। কিউবা অবশ্য আগেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল অন্যতম ধনী ও শক্তিশালী দেশ ব্রিটেনের দিকেও। করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ায় যাত্রীবাহী জাহাজ এম এস ব্রেইমারকে যখন কোনো দেশ তাদের তটে ভিড়তে দিচ্ছিল না, তখন কিউবাই তাদের বন্দর খুলে দেয়। জাহাজটিতে এক হাজার যাত্রী ছিলেন।

দেশে দেশে মহামারি বা ভয়ংকর স্বাস্থ্য সংকট, ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়ে কিউবার চিকিৎসকদের ভূমিকা সুবিদিত। সাম্প্রতিক সময়ে হাইতির কলেরা বা পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা মোকাবিলায় তাদের অনবদ্য ভূমিকার কথা সবাই জানে। এ ছাড়া ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়া, জ্যামাইকা, সুরিনাম ও গ্রেনাডাতেও চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে তারা।

কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় গড়ে উঠেছিল কিউবার স্বাস্থ্যব্যবস্থা। বিশ্বে কমিউনিস্ট ব্লক ভেঙে পড়লে তার কিছু ক্ষতি হয়। আমেরিকাসহ পশ্চিমা দুনিয়ার অবরোধেও অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যেও কিউবা চিকিৎসক তৈরি করে গেছে; বিপ্লবী চিকিৎসক, যাঁরা শুধু নিজের কথা ভাবেন না। শুধু নিজের দেশের কথাও ভাবেন না তাঁরা। গোটা দুনিয়াটাকেই নিজের ঘর মনে করার কমিউনিস্ট মতাদর্শের তাগিদে ছুটে চলেন নানা প্রান্তে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিউবাও। জনস হপকিনসের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ১৭০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। নিজের দেশেও করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে কিউবা। তা সামাল দিয়েই চলছে অন্য দেশে রোগমুক্তির লড়াই। মানবতাকে রক্ষা করতে হবে যে। এটাই বৈপ্লবিক কর্তব্য—বিশ্বাস করে কখনো হার না মানা চে গুয়েভারার উত্তরসূরিরা।