ইতালিতে করোনায় মৃতদের ৮৫ ভাগ সত্তরোর্ধ্ব

ইতালির রোমে মাস্ক পড়ে ঘোরাফেরা করছেন পর্যটকেরা। এএফপি ফাইল ছবি
ইতালির রোমে মাস্ক পড়ে ঘোরাফেরা করছেন পর্যটকেরা। এএফপি ফাইল ছবি

বাংলাদেশের মতো তরুণ জনসংখ্যার সংখ্যাধিক্য নেই, বয়স্কদের সংখ্যা অনেক বেশি। আর সে জন্যই করোনায় এত বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে ইতালিতে। পাশাপাশি দেশটির সামাজিক ব্যবস্থার কারণেও এটি ঘটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

পরিসংখ্যানেও তেমনটা দেখা যাচ্ছে। দেশটির ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, ইতালিতে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের ৮৫ দশমিক ৬ শতাংশের বয়স ৭০-এর বেশি। আর দেশটির ২৩ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বয়স ৬৫-এর ওপরে। ফলে, জাপানের পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক মানুষের বসবাস এই ইতালিতে।

এই বয়স্ক মানুষেরা এমনিতেই নানা রোগে ভুগছিলেন। ফলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁরা আর এই রোগ প্রতিরোধ করতে পারেননি। ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, মারা যাওয়া ৪৮ শতাংশ মানুষ আগে থেকেই নানা রোগে ভুগছিলেন।

অন্যদিকে ইতালির সামাজিক ব্যবস্থা ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো না হওয়ায় বুড়ো মানুষদের আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন ইতালির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিকসের কেন্দ্রীয় পরিচালক লরা সাব্বাদিনি। তিনি বলেন, ‘ইতালির বুড়ো মানুষদের সিংহভাগ আলাদা তাকলেও অনেকেই পরিবারের সঙ্গে থাকেন। নাতি-নাতনি ও তরুণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁদের নিবিড় সংযোগ আছে।’ অনেকটা এশীয় অঞ্চলের মতো। যেহেতু ইতালিতে পরীক্ষা অত বেশি হয়নি এবং এই রোগের উপসর্গ দেখা যেতে অনেক সময়, ১৪ দিন, লেগে যায়, সেহেতু দেশটিতে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। আর বুড়োরাও সহজে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের মৃত্যুর হার তরুণদের চেয়ে অনেক বেশি।

লরা সাব্বাদিনি আরও মনে করেন, এই ধরনের ছোঁয়াচে রোগের সংক্রমণ যখন হয়, তখন বুড়োদের সঙ্গে তরুণদের এই সংযোগ হ্রাস করার বিকল্প নেই। এমন সময়ে বুড়ো মানুষদের বিচ্ছিন্ন করাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

এখন অবধি সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ইতালিতে। দেশটিতে ৬১ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইতালিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ডক্টরস। এঁদের মধ্যে ৪০ জন কাজ করতেন লম্বার্ডিতে। আক্রান্ত ৮ হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। মোট আক্রান্ত এখন এক লাখ পেরিয়ে গিয়েছে।

এরপরেই রয়েছে স্পেন। সেখানে করোনায় মৃত মানুষের সংখ্যা ৭ হাজার ৩৪০। তবে দৈনিক মৃত্যুর হার সামান্য কমেছে। ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৫৩৭ জনের। আক্রান্ত ৮৫ হাজারের ওপরে।

ইউরোপের অন্যান্য দেশে করোনায় মৃত্যু সব মিলিয়ে এখন ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে। নেদারল্যান্ডসে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ জন মারা গেছেন। সেখানে মৃত মানুষের সংখ্যা ৮৬৪।