দেশে করোনা নির্মূলের দাবি উ. কোরিয়ার, যুক্তরাষ্ট্র ও দ. কোরিয়া বলছে 'অসম্ভব'

উত্তর কোরিয়া থেকে করোনাভাইরাস নির্মূল করা হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে করোনা আক্রান্ত আর কোনো রোগী নেই বলেও দাবি করেছে। কীভাবে তারা এই ভাইরাস প্রতিরোধ করেছে, তার কৌশলও প্রকাশ করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এটা ‘অসম্ভব’।

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত রয়েছে। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার রয়েছে বড় ধরনের সীমান্ত বাণিজ্যিক লেনদেন। দক্ষিণ কোরিয়া এ ভাইরাস কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে তিন হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যদিও বেইজিং এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। সে ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া কীভাবে করোনামুক্ত হয়— তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকেরা।

উত্তর কোরিয়া তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়েছে। দেশটির সেন্ট্রাল ইমারজেন্সি অ্যান্টি-এপিডেমিকের সদর দপ্তরের পরিচালক পাক ইয়ং-সু শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তিনি যত দূর জানেন তাদের দেশে এখন আর কেউ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত নেই। তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, তাদের দেশ বিষয়টি নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক ছিল। তারা বিদেশ থেকে দেশে ফেরা সবাইকে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের পণ্য-সামগ্রী জীবাণুমুক্ত কারার মতো বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপগুলোও হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া তাঁর দেশ সীমান্ত, সমুদ্র এবং আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে।

তবে পাক ইয়ং-সু এর এই দাবি খুব সহজে মেনে নিতে রাজি হননি দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়োজিত মার্কিন সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল রবার্ট আবরামস এবং উত্তর কোরিয়াবিষয়ক মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনকে নিউজের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ওলিভার হোথাম।

জেনারেল রবার্ট আবরামস বলেন, উত্তর কোরিয়ার এই দাবি মোটেও সত্য নয়, এটি অসম্ভব। তিনি সিএনএন ও ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন। এই মন্তব্যের পেছনে তিনি তাঁদের গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দেন। তবে দেশটিতে কতজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন তার ধারণা দিতে পারেননি এই মার্কিন কর্মকর্তা।

এনকে নিউজের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ওলিভার হোথাম বলেন, উত্তর কোরিয়ায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তি থাকার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর যুক্তি, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে দেশটির সীমান্ত রয়েছে। ফলে সেখানে করোনার সংক্রমণ না থাকাটা একেবারেই অসম্ভব। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার বৃহৎ সীমান্ত বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে দেশটিতে এখনো পুরোমাত্রার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

উত্তর কোরীয় এক বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেছেন, দেশটিতে হয়তো এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। তবে এখনো ব্যাপক আকারে ছড়ায়নি।

কীভাবে সংকট মোকাবিলা করছে কিম জংয়ের দেশ

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই অঞ্চলের অনেক দেশের তুলনায় উত্তর কোরিয়া খুব দ্রুত এই ভাইরাসের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছিল। ডিসেম্বরে চীনে এই ভাইরাস ধরা পরপরই জানুয়ারিতেই সব সীমান্ত বন্ধ করে দেয় উত্তর কোরিয়া। পরে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে শত শত বিদেশিকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। অথচ একই সময় চীনে করোনা মহামারি দ্রুত বাড়তে থাকে।

এনকে নিউজের প্রতিবেদন মতে, উত্তর কোরিয়ায় ১০ হাজারের বেশি মানুষকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫০০ জনের মতো।

উত্তর কোরিয়ার জনগণ কি করোনার ব্যাপারে অবগত
ওলিভার হোথাম বলেন, উত্তর কোরিয়ার অধিকাংশ মানুষই এই ভাইরাস সম্পর্কে অবগত। কারণ প্রত্যেকদিন সেখানকার গণমাধ্যমে এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে খবর প্রকাশ হচ্ছে। দেশটির গণমাধ্যমে প্রতিদিন পৃষ্ঠাজুড়ে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরা হচ্ছে।

কুকমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক ফিয়োদোর টার্টিস্কি বলেন, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করতে হবে তা জনগণকে জানাতে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে উত্তর কোরিয়া।

উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেমন

বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্যরা যা ভাবছে বাস্তবে উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থা তার চেয়ে ভালো। ফিয়োদোর টার্টিস্কি ভাষ্য, সম জিডিপির অন্যান্য দেশের চেয়ে উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থা অনেক অনেক ভালো। তারা প্রচুর চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যদিও তারা পশ্চিমা বিশ্বের চিকিৎসকদের তুলনায় কম দক্ষতাসম্পন্ন। তবে তারা দেশের মানুষের মৌলিক সেবা দিতে সক্ষম।

টার্টিস্কির মন্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে ওলিভার হোথাম বলেন, গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে যে ধরনের সরঞ্জাম প্রয়োজন সেগুলোর অপ্রতুলতা রয়েছে। তবে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির পেছনে দেশটির ওপর অন্যান্য দেশের নিষেধাজ্ঞাও একটি কারণ।

কেন করোনা লুকানোর চেষ্টা করবে উত্তর কোরিয়া
করোনা রোগী আছে এমন ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার জন্য বুমেরাং হতে পারে। হোথামের যুক্তি, প্রকৃত তথ্য প্রকাশ না করার মতো প্রচুর ঘটনা আছে উত্তর কোরিয়ার। তিনি মনে করেন, এখন যদি তারা করোনা সংক্রমণের কথা স্বীকার করে তাহলে এটি হবে উত্তর কোরিয়ার জন্য সংকটের কারণ। কারণ এর ফলে দেশের জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হবে। তারা বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করবে। আর ব্যাপকসংখ্যক মানুষ বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে অস্থির পরিবেশের সৃষ্টি হবে। এমনকি এতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে।