জার্মানিতে লকডাউন সংক্রমণ কমাবে: গবেষণা

জার্মানিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন ব্যবস্থা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। দেশটির সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ও লকডাউন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখবে, তা নিয়ে একটি গবেষণা হয়েছে।

জার্মানির ২০০ জন জীবাণুবিজ্ঞানী দেশটির সরকারের নেওয়া লকডাউন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। অন্যদিকে, ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের বিস্তার কোথায় গিয়ে শেষ হবে, সে বিষয়ে তাঁরা অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন। তবে গবেষকেরা জার্মানিতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ইতালি বা স্পেনের মতো হবে না বলে জানিয়েছেন। তাঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে, এই লকডাউন নিঃসন্দেহে জার্মানিতে সংক্রমণের হার কমাবে।

হামবুর্গের অ্যাপেনডর্ফ বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক ও হামবুর্গ ভাইরোলজি সোসাইটি যৌথভাবে গবেষণামূলক জরিপটি করেছে। জরিপের উদ্দেশ্য ছিল জার্মানিতে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে নেওয়া বিধি ও লকডাউন কতটুকু কাজে লাগছে, আর কতটুকু ঝুঁকি রয়েছে, তা বের করা। জরিপে অংশ নেওয়া জার্মানির বিভিন্ন প্রান্তের ২০০ জীবাণুবিজ্ঞানী তাঁদের এই সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে মতামত জানিয়েছেন। জার্মানির বন্দর শহর হামবুর্গ ভাইরোলজি সোসাইটির সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ১০০।

জার্মানির লকডাউনে বিধিতে সব নাগরিককে যা পালনে অনুরোধ করা হয়েছে, তা হলো:

১. তারা যেন নিজের পরিবারের বাইরে খুব প্রয়োজন না হলে অন্য নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে। যোগাযোগ বন্ধ বা ন্যূনতম করতে বলা হয়েছে।

২. কাজের জায়গা, বাজার করতে, জরুরি কাজ বা চিকিৎসকদের কাছে যাওয়া ছাড়া বাইরে সবার চলাফেরা নিষেধ করা হয়েছে। শরীরচর্চা, জগিং, বাতাসে হাঁটতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিষেধ নেই। অফিস, সুপার মার্কেট বা রাস্তায় দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।

৩. দুজনের বেশি মানুষ একসঙ্গে চলাচল করতে পারবে না।

৪. তবে একই পরিবার বা একই ঘরের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না।

৫. জার্মানির গুরুতর পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জনস্বার্থে প্রকাশ্য বা বাড়িতে বা অন্য কোনো স্থানে একসঙ্গে জমায়েত শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

৬. রেস্তোরাঁ, যেকোনো খাবারের দোকান ও বাড়িতে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।

৭. সব ধর্মের ধর্মীয় উপাসনালয় বন্ধ রয়েছে।

৮. এ ছাড়া সমস্ত বার, ক্লাব, থিয়েটার, চিড়িয়াখানা, পাবলিক সুইমিং পুল, শিশুদের খেলার স্থান, খেলার মাঠ বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সব ধরনের অবকাশযাপন ও অন্য দেশে অবকাশভ্রমণ আপাতত বন্ধ রয়েছে।

৯. গণপরিবহনগুলোর ক্ষেত্রে প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

জার্মানিতে জারি করা এসব বিধি ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এই বিধিনিষেধের বাইরে জার্মানির ১৬ রাজ্যে, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সুপার মার্কেট, ওষুধের দোকান, স্যানিটারিজ, পেট্রল পাম্প, ব্যাংক, ডাকঘর, খোলা রয়েছে। এই জায়গাগুলোয় একসঙ্গে সবাইকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

জার্মানির শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টাস্কফোর্স গড়ে তুলতে ১৫ কোটি ইউরো অনুদান দিয়েছে। এই টাস্কফোর্স এখন করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে নতুন নতুন গবেষণাসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রাথমিক পরিকল্পনা হিসেবে বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার পদ্ধতি ও ধরন এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে তথ্যবিবরণী তৈরিসহ অভিজ্ঞতা বিনিময় করছে। এই তথ্যবিবরণী বা ডেটা বিশ্লেষণ করে এই মহামারি রুখতে ব্যবস্থাপনা, ভ্যাকসিন ও কী ধরনের থেরাপি প্রয়োজন, সেই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

করোনা সংকট বা লকডাউন জারির ফলে জার্মানিজুড়ে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, স্বনির্ভর ব্যবসায়ী, নানা পেশার মানুষ এই পরিস্থিতিতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। তাদের সহযোগিতার জন্য বিশেষ স্কিম হাতে নেওয়া হয়েছে। এই খাতে জার্মান সরকার পাঁচ হাজার কোটি ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে।

জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকার পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জনগণের অনেক অসুবিধা সত্ত্বেও লকডাউন মেনে চলার জন্য ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, জার্মানির সংক্রমণ রোগ বিষয়ের গবেষণকেন্দ্র রবার্ট কক ইনস্টিটিউট সংক্রমণের হার নিয়ে কিছুটা আশার কথা শোনাচ্ছে। তবু এত দ্রুত এই বিষয়ে সফলতা আসবে, তা বলার সময় এখনো আসেনি। তিনি সবাইকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের সব বিধি মেনে চলতে অনুরোধ করেন।

জার্মানিতে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৯১ হাজার ১৫৯ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ২৭৫ জন।