সংক্রমণের রাশ হয়তো টানতে পেরেছে স্পেন

স্পেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ছবি: রয়টার্স
স্পেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ছবি: রয়টার্স
>সংক্রমণের রাশ টানার প্রচেষ্টায় এখন এক নতুন বাধা তৈরি হয়েছে চিকিৎসাসামগ্রী সংগ্রহ করা নিয়ে।

স্পেনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর দ্বিতীয় দিনের মতো মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। কমেছে সংক্রমণও। সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বমুখী যাত্রা একটানা প্রায় তিন সপ্তাহ অব্যাহত থাকার পর এখন মনে করা হচ্ছে, সংক্রমণ তার শিখরে স্থিতিশীল হয়েছে। তবে রাশ টানা সম্ভব হলেও তা কমিয়ে আনার প্রচেষ্টায় এক নতুন বাধা তৈরি হয়েছে চিকিৎসাসামগ্রী সংগ্রহে তৃতীয় একটি দেশের বাধার কারণে। চীন থেকে আমদানি করা দেড় শ ভেন্টিলেটর মাঝপথে তুরস্ক আটকে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী সংগ্রহের প্রতিযোগিতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পর এখন তুরস্কের বিরুদ্ধেও এ ধরনের অভিযোগ উঠল।

আল–জাজিরা জানিয়েছে, চীন থেকে কেনা জীবনরক্ষার জন্য জরুরি ভেন্টিলেটরের চালানটি তুরস্কের আঙ্কারা হয়ে স্পেনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তুরস্ক সেগুলো তাদের সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন হতে পারে বলে রেখে দিয়েছে। এর আগে ৩ এপ্রিল গার্ডিয়ান পত্রিকা জানায়, এন নাইন্টিফাইভ মাস্কের জার্মানগামী একটি চালান মাঝপথে থাইল্যান্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের থ্রিএম কোম্পানির কাছ থেকে এই দুই লাখ এন নাইন্টিফাইভ মাস্ক কিনেছিল। এ ঘটনাকে বার্লিনের স্থানীয় সরকার ‘আধুনিককালের দস্যুতা’ বলে অভিহিত করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোরীয় যুদ্ধের সময়ে প্রণীত প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইনে যুক্তরাষ্ট্রের সব কোম্পানির ওপর অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের আগে বিদেশে রপ্তানি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটে।

শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮০৯ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশটিতে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৭৪৪। আর নতুন করে ৭ হাজার ২৬ জন সংক্রমিত হওয়ায় মোট সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রাণহানির মতো সংক্রমণের সংখ্যাও এদিন কিছুটা কমার তথ্যে সংক্রমণ শিখরে পৌঁছানোর আভাস মিলছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিফলন পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ শনিবার স্পেনের লকডাউন এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন। ১৪ মার্চ এই লকডাউন শুরু হয়।

এখন পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যানগুলোতে ইউরোপে সংক্রমণের ভয়াবহতার দিক থেকে স্পেন আর ইতালি প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে। ইতালিতে অবশ্য মৃত্যুর সংখ্যা স্পেনের চেয়ে কিছুটা বেশি। স্পেনের পরিস্থিতি এতটা গুরুতর হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার গুণগত মান এবং অবকাঠামোয় পার্থক্য থাকার কথা বলেছেন। কিছু কিছু এলাকায় অবকাশকালীন নিবাসের প্রাধান্য থাকলেও সেসব এলাকায় যথেষ্ট চিকিৎসাসেবার সুবিধা নেই। স্পেনের সমুদ্রতট পর্যটকদের বিপুল আগ্রহের কেন্দ্র হওয়ায় সেসব জায়গায় বৃহদাকারের জনবসতি গড়ে উঠেছে, যেখানে জনঘনত্ব অনেক বেশি। আল-জাজিরার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইউনিভার্সিটি অব কর্ডোবার সমাজবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক হোসে হার্নান্দেজ মহামারির ঝুঁকিকে প্রথম দিকে খুব একটা গুরুত্ব না দেওয়াকেও দায়ী করেন।

চীন থেকে কেনা টেস্টিং কিট নিয়েও স্পেন কিছুটা বিপত্তির মুখে পড়ে, যখন দেখা যায় যে প্রায় ৯ হাজার ব্যাচের কিট নির্ভরযোগ্য নয়। চিকিৎসকদের সুরক্ষাসামগ্রী নিয়েও সংক্রমণের শুরুর দিকে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সুরক্ষাসামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য স্পেনের স্টেট কনফেডারেশন অব মেডিকেল ইউনিয়নস (সিইএসএম) গত ২৫ মার্চ দেশটির সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়। স্পেনে চিকিৎসাসেবীদের মধ্যে এই করোনা সংক্রমণের হার গত সপ্তাহেও ছিল ১৫ শতাংশের বেশি।

স্পেনের অর্থনীতিতে পর্যটনের ভূমিকা অনেক বেশি হওয়ায় সেবা খাতের অস্থায়ী বা সাময়িক কাজে জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ নিয়োজিত। আবার এদের একটি বড় অংশ অভিবাসী, যাঁদের মধ্যে বাংলাদেশিরাও রয়েছেন। স্পেনে প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যুর কথা জানা গেলেও তাঁদের সঠিক সংখ্যা কত, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীদের জন্য ওয়েবসাইটে সময়ে সময়ে বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরামর্শ দিচ্ছে। তবে অভিবাসীদের মধ্যে যাঁদের কাজগপত্রে অনিয়ম বা সমস্যা আছে, তাঁরা বাড়তি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের কিছু সংগঠন বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতার উদ্যোগ নিলেও চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণের কারণে তা কঠিন হয়ে পড়ছে।

স্পেনে প্রাণহানি এবং সংক্রমণের এত উচ্চহারের মধ্যেও শনিবার আশাজাগানো আরেকটি খবর ছিল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ৯৪ বছর বয়সী এক নারী আট দিনের চিকিৎসাশেষে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।