হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা নিয়ে কলকাতায় বিক্ষোভ

দক্ষিণ কলকাতার এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে করোনা হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
দক্ষিণ কলকাতার এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে করোনা হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য কলকাতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নতুন আঙ্গিকে সাজানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এর পাশাপাশি কলকাতার উপশহর রাজারহাটে গড়া চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার ইনস্টিটিউটকেও করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সাজাচ্ছে। সেখানে কোয়ারেন্টিনের জন্য রাজ্য সরকারের ২০০ বিছানা রয়েছে। এটিকে ৫০০ বেডের করোনা হাসপাতালে রূপ দেওয়া হচ্ছে।

রাজ্য সরকার কলকাতার আরও দুটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার নিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দুটি হলো, দক্ষিণ কলকাতার এম আর বাঙ্গুর হাসপাতাল এবং উত্তর কলকাতার কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এই বাঙ্গুর ও সাগরদত্ত হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্তে ওই হাসপাতালের নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং হাসপাতালের কর্মচারীসহ এলাকাবাসীর একাংশ বিক্ষোভ শুরু করেছে। গত শুক্রবার হাসপাতালের নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মীরা এক জোট হয়ে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করে। তারা বলেছে, এই জনবসতিপূর্ণ এলাকার এই হাসপাতালে করোনা হাসপাতাল কেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত তাঁরা মানছেন না।

উত্তর কলকাতার কামারহাটিতে অবস্থিত সাগরদত্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও করোনা কেন্দ্র করা হচ্ছে। প্রতিবাদে এলাকাবাসী সোচ্চার হয়ে এখানে করোনা চিকিৎসাকেন্দ্র না গড়ার দাবি তুলেছে। তাঁরা এই করোনা কেন্দ্র গড়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভও করছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে রাজ্যবাসীকে মানবিক হওয়ার আবেদন জানান। তিনি বলেন, ‘করোনাআক্রান্ত রোগীদেরও আমাদের চিকিৎসা দিতে হবে। তাঁদের বাঁচিয়ে তুলতে হবে। এভাবে তো বাধা দেওয়া যায় না? প্রয়োজনে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য রোগীদের অন্য কোনো হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হবে। তবুও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের আমরা চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে পারি না।’

একইভাবে সাগরদত্ত মেডিকেল কলেজের সামনে স্থানীয়রা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে।

গতকাল শনিবার বীরভূম জেলার পাড়-ই’ তে সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে । এই পাড়-ই’এর তালিবপুর স্কুলের হোস্টেলকে করোনার কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য রাজ্য প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে স্থানীয়রা আপত্তি তোলেন। এই নিয়ে গতকাল এই তালিবপুরে সরকারি দলের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে স্থানীয়দের। এই সংঘর্ষে একজন গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আর গুরুতর আহত হন আরেক যুবক । তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে যারা লকডাউন অমান্য করেছেন তাদের সরাতে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। স্থানীয়রা এক জোট হয়ে পুলিশকে মারপিট করে।

কলকাতায় লকডাউন অমান্য করায় পুলিশ ৮০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাজেয়াপ্ত করেছে ১৪৮টি গাড়ি। এসব গাড়ির চালক ও মালিকেরা কেন লকডাউন অমান্য করে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন তার উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারেননি।

গতকালই তৃণমূল জানিয়েছে, দলটি ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দেবে না।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা আরও বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পর রোগীদের দেহ যাতে কলকাতার ধাপায় সৎকার করা যায় সেদিকে আমাদের যত্নবান হতে হবে। মানুষ মরে গেলে পোড়াতে দেবে না, এটা কেমন করে হয়? মমতা জোর দিয়ে বলেন, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সৎকারস্থল থেকে সংক্রমণের কোনো কারণ নেই।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় প্রথম রোগীর মৃতদেহ সৎকার নিয়ে প্রথম আপত্তি ওঠে। ২৩ মার্চ ওই রোগী কলকাতার বেসরকারি একটি হাসপাতালে মারা যায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচওর গাইডলাইন মেনে মৃতদেহকে প্লাস্টিকের প্যাকেট করে তা কলকাতার নিমতলার মহাশ্মশানে দাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে মৃতদেহ নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিমতলা শ্মশানে যায়। এলাকাবাসী আপত্তি তোলে কিছুতেই তাঁরা এই মহাশ্মশানে ওই মৃতদেহ দাহ করতে দেবেন না। এই নিয়ে বিক্ষোভ হলে পৌরসভার কর্মকর্তা ও লালবাজার থেকে পুলিশ এনে নিমতলা শ্মশানের পূর্বতন ভিআইপি চুল্লিতে ওই মৃতদেহের সৎকার করা হয়।

কলকাতা পৌর করপোরেশন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের দাহ করা হবে কলকাতার বাইপাস এলাকার ধাপায়। ধাপা শহর থেকে অনেকটা দূরে। ওখানেই কলকাতার সব আবর্জনা ফেলা হয়। এখানেই বেওয়ারিশ মৃতদেহ সৎকারের জন্য বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি করা হয়। সেখানেই করোনা রোগীদের দেহ সৎকারের নির্দেশ দেওয়া হয়। আর মুসলিমদের দেহ কলকাতার বাগমারি কবরস্থানের নির্দিষ্ট জায়গায় দাফন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কলকাতায় মৃত দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তির দেহ ধাপায় সৎকার করতে গেলে সেখানের স্থানীয়রা আপত্তি তোলে। আর এর নেতৃত্ব দেয় তৃণমূলের এক নেতা। ফলে এখানের লোকজন দাবি তোলে করোনা রোগীদের দেহ সৎকার করতে দেওয়া হবে না এই ধাপায়। পৌরসভার কর্মকর্তারা বারবার বোঝাতে থাকেন মৃতদেহ দাহ করা হয় ৮০০-১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। ওই উচ্চমাত্রার তাপমাত্রায় কোনো জীবাণুই বেঁচে থাকতে পারে না। আমরা তো জলের জীবাণু মুক্ত করি ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। এরপরে এই নিয়ে বোঝানোর পর সেখানে করোনা রোগীদের দেহ সৎকার করার প্রশ্নে ক্ষোভ অনেকটা প্রশমিত হয়।