ভারতে করোনা মৃত্যু এক শ ছাড়াল

আইসোলেশন ইউনিট ঘোষিত ট্রেন জীবাণুমুক্ত করতে স্প্রে করছেন দুই কর্মী। ০৬ এপ্রিল, কলকাতা, ভারত, ছবি: রয়টার্স
আইসোলেশন ইউনিট ঘোষিত ট্রেন জীবাণুমুক্ত করতে স্প্রে করছেন দুই কর্মী। ০৬ এপ্রিল, কলকাতা, ভারত, ছবি: রয়টার্স

ভারতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এক শ পেরিয়ে গেল। আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়ে গেল ৪ হাজারের সীমা। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আজ সোমবার বিকেলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯। আক্রান্ত ৪ হাজার ৬৭ জন।

আক্রান্তদের মধ্যে সবার আগে যে রাজ্যটি, দেশের অর্থনৈতিক ভরকেন্দ্র সেই মহারাষ্ট্রে সোমবারেই দু শ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাঁদের নিয়ে এই রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৯০। শুধু এই রাজ্যেই মারা গেছেন ৪৫ জন। মৃতদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গুজরাট (১১)। যদিও ওই রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ১২২। আক্রান্তদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু (৫৭১), তৃতীয় স্থানে দিল্লি (৫০৩)। উল্লেখযোগ্যভাবে দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, কর্ণাটক, বিহার, আসাম, জম্মু-কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গ সহ মোট ১৯টা রাজ্যে সোমবার বিকেল পর্যন্ত নতুন করে একজনও করোনায় আক্রান্ত হননি। এটা একটা ইতিবাচক দিক বলে মনে করা হচ্ছে।

কিন্তু আশঙ্কা বাড়ছে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, কেরালা, রাজস্থান, অন্ধ্র প্রদেশ ও হরিয়াণা নিয়ে। হুট করে এই রাজ্যগুলোয় আক্রান্তদের সংখ্যা কয়েকদিন ধরে বেড়ে গেছে। দিল্লির নিজামুদ্দিনের তবলিগ জামায়াতের সমাবেশকে এ জন্য দায়ী করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদাধাকারীরা সরাসরি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, তবলিগ জামায়াতের জন্য ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ দশমিক ১ দিনে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। তবলিগ সমাবেশ না হলে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হতো ৭ দশমিক ৪ দিনে। তাঁরা বলছেন, মোটা ৪ হাজার আক্রান্তের মধ্যে তবলিগ জামায়াতের কারণে অসুস্থ হয়েছেন দেড় হাজার জন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, হরিয়ানায় ৫টি গ্রাম পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হয়েছে। তবলিগ জামায়াত কর্মীরা ওই গ্রামগুলোয় ছিলেন। সারা দেশে ২৫ হাজার ৫০০ তবলিগ অনুগামীকে কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়েছে। সরকারি মতে, দিল্লি, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা ও কেরালায় মাত্রাছাড়া আক্রান্তের একটা প্রধান কারণ দিল্লির তবলিগ সমাবেশ।

ভারতে এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় জিজ্ঞাসা, ১৪ এপ্রিলের পর লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে কি না। জনপ্রিয় ধারণাটা হলো, মেয়াদ সম্ভবত বাড়বে না। তবে তাই বলে দেশ ফের আগের মতো স্বাভাবিক হয়েও উঠবে না। সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত, দেশের যে যে এলাকায় করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, সেই অঞ্চলগুলোয় লকডাউন জারি থাকবে। সোমবারের সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দেশের মোট ২৭৪টি জেলায় করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। ওই জেলাগুলোতেই দেশের মোট ৮০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত। এই অঞ্চলগুলোকে ‘হট স্পট’ বলা হচ্ছে। দিল্লিতে এমন একটা হট স্পট নিজামুদ্দিন এলাকা। দিল্লির লাগোয়া নয়ডাও আর একটা হট স্পট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব, এমন হট স্পট অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করে বাকি এলাকা থেকে তাদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা হবে। জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করা হবে। কিন্তু জনজীবন স্তব্ধ থাকবে। এই ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘অ্যাগ্রেসিভ কনটেনমেন্ট’। মুম্বাইয়ের ওখার্ড হাসপাতাল সোমবার সম্পূর্ণভাবে ‘কনটেনমেন্ট জোন’ বা সংক্রামক এলাকা ঘোষণা করে অন্য সব রোগীর জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসক ও ২৬ জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

করোনার মোকাবিলায় এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রুজি রোজগার হারানো লাখ লাখ শ্রমিক ও প্রান্তিক মানুষদের রক্ষা করা ও রোগের মোকাবিলায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এক অরডিন্যান্স আনার সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী দেশের রাষ্ট্রপতি, উপ রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, উপরাজ্যপাল, প্রধানমন্ত্রীসহ সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদেরা আগামী এক বছরের জন্য ৩০ শতাংশ বেতন কম পাবেন। চলতি মাস থেকেই তা কার্যকর হবে। এ ছাড়া সাংসদ উন্নয়ন তহবিলও আগামী দুই বছর বন্ধ থাকছে। এই টাকাও (৭ হাজার ৯০০ কোটি) করোনার মোকাবিলায় খরচ হবে। মন্ত্রী, বিধায়ক ও সরকারি কর্মীদের বেতন ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত প্রথম নেয় তেলেঙ্গানা সরকার। এখন দেখার, কেন্দ্রীয় সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোতে কর্মীদের বেতন ছাঁটাই হয় কি না।

সোমবার ছিল শাসক দল বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস। সেই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এক ভাষণে বলেন, করোনার বিরুদ্ধে সামনে কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে। জয় আসা পর্যন্ত সেই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দান করার আহ্বানও তিনি জানান।