কলকাতার এক হাসপাতালের দুই বিভাগ বন্ধ, চিকিৎসক-নার্স কোয়ারেন্টিনে

কলকাতার নীলরতন হাসপাতাল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতার নীলরতন হাসপাতাল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটছে। গত এক সপ্তাহে দেশটিতে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। ১৪ এপ্রিল লকডাউন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে দেশের 'হটস্পট' এলাকাগুলোতে লকডাউনের সময় বাড়ানো হতে পারে। অন্যান্য এলাকায় ধাপে ধাপে লকডাউনের মেয়াদ কমানো হতে পরে। আবার যেসব এলাকায় করোনার প্রভাব নেই সেইসব এলাকা থেকে প্রত্যাহার করা হতে পারে এই লকডাউন।

কলকাতার নীলরতন সরকার বা এনআরএস হাসপাতালে শনিবার এক রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে ওই হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড এবং সিসিইউ বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ভারতে এই মুহুর্তে স্কুল কলেজ খোলা নাও হতে পারে। কিছু কিছু সরকারি দপ্তর খোলা রাখার ঘোষণা হতে পারে।

গতকালকের সর্বশেষ সরকারি হিসাবে বলা হয়েছে, ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৮১ এবং মৃতের সংখ্যা ১১১। আর সংবাদ মাধ্যমের হিসাবে বলা হয়েছে ৪৭৭৮ এবং মৃতের সংখ্যা ১৩৩। গতকাল একদিনেই মারা গেছেন ২৮। আক্রান্ত হয়েছে ৭০৮ জন। আর পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ এবং মৃতের সংখ্যা ৩। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৩ জন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া মৃতের সংখ্যা নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলগুলোর মধ্যে আপত্তি রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা লুকোচ্ছেন।

কলকাতার নীলরতন সরকার বা এনআরএস হাসপাতালে শনিবার এক রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে ওই হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড এবং সিসিইউ বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 'হিমোফেলিয়া' রোগ নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার মহেশতলার ৩৪ বছরের এক যুবক গত ৩০ মার্চ ভর্তি হন এই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে। এরপর এই যুবকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ওই হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা এরপরেই বুঝতে পারেন ওই যুবক সম্ভবত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শনিবারই ওই যুবক মারা যান। এরপরেই এনআরএস রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ও তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন সিসিইউ এবং মেডিসিনের মেল ওয়ার্ডকে বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন । বলা হয়, ওই দুটি ওয়ার্ডকে জীবাণুমুক্ত করা না পর্যন্ত ওখানে রোগী রাখা যাবে না। একইসঙ্গে ওই রোগীর চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ৮১ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

নীলরতন হাসপাতালে গতকাল সোমবার আরেকটি ঘটনা ঘটে। এই হাসপাতালে ফুসফুসে ক্যান্সার নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের এক বাসিন্দা। গতকাল সোমবার তাঁর বুকের এক্সরে করার জন্য জরুরি বিভাগ থেকে নিয়ে যাওয়া হয় এক্সরে দপ্তরে। সেখানেই এক্সরে করার আগেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। চিকিৎসকরা মনে করেন, ওই রোগী সম্ভবত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরেই ওই রোগীর আত্মীয়রা হাসপাতালকে না জানিয়ে রোগীর মরদেহ নিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ এখন ওই রোগীর খোঁজে নেমেছেন। ওই রোগী সত্যি করোনা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কিনা তা যাচাই করতে চাইছেন।