করোনা-উত্তর বিশ্বের নেতৃত্বে কে

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

পৃথিবীতে হারজিত চিরদিন থাকবে। তবে করোনাভাইরাস-উত্তর পৃথিবীর হিসাবটা হবে আলাদা। ওই সময় বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে কে—সেই প্রশ্নের উত্তর এখনই খোঁজা শুরু হয়ে গেছে।

বিশ্বনেতা, কূটনীতিক এবং ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা করোনা–উত্তর বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে নানা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ যেমন পূর্বাভাস দিয়েছেন, ‘এ সময়টা আমাদের অনেক কিছু শেখাবে। অনেক দৃঢ়বিশ্বাসে চিড় ধরবে এবং প্রত্যয় নড়বড়ে হয়ে যাবে। অসম্ভব বলে মনে করা অনেক জিনিস ঘটবে।’ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ নাটকীয়ভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে, হয় আমরা একত্র হব অথবা আমরা হেরে যাব।’

পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় চীন নাকি যুক্তরাষ্ট্র—নেতা হিসেবে কে আবির্ভূত হবে, তা নিয়েই আলোচনা বেশি হচ্ছে। তবে যে দেশগুলো করোনা মহামারি সবচেয়ে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারবে, তারা এই দৌড়ে কিছুটা এগিয়ে থাকবে।

করোনাভাইরাস কীভাবে স্থায়ীভাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পরিবর্তন ঘটাবে, তা মূল্যায়ন করেছে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুটি শিক্ষা গ্রহণ করার মতো। একটি হচ্ছে, কোভিড-১৯কে আরও ভালোভাবে পরাস্ত করার জন্য একত্রে কাজ করা। আরেকটি হচ্ছে, নিজেদের সুরক্ষার জন্য আরও কঠোরভাবে পৃথক হওয়া। বর্তমান এ পরিস্থিতি তাই শুধু জাতিসংঘ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সক্ষমতার পরীক্ষা নেবে না, বরং মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক দর-কষাকষির সাধারণ বিষয়গুলোরও মূল্যায়ন হবে।

ইতিমধ্যে অনেকে দাবি করছেন, প্রতিযোগিতামূলক বিবরণের এই যুদ্ধে পশ্চিমাদের তুলনায় ‘পূর্ব’ এগিয়ে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার দার্শনিক বাইয়ুং-চুল হানের যুক্তি, জাপান, কোরিয়া, চীন, হংকং, তাইওয়ান বা সিঙ্গাপুরের মতো এশীয় অঞ্চলকে জয়ী বলা যেতে পারে। কারণ, এদের মধ্যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা রয়েছে। ইউরোপের তুলনায় মানুষ কম বিদ্রোহী এবং বেশি বাধ্য। তারা রাষ্ট্রকে বেশি বিশ্বাস করে।

কোরীয় দার্শনিকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চীন এখন মহামারির বিরুদ্ধে সাফল্যের মডেল হিসেবে তার ‘ডিজিটাল পুলিশ’ মডেল ধারণা বিক্রি করতে সক্ষম হবে। চীন তার ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব আরও গর্বের সঙ্গে তুলে ধরবে। এ কারণে হয়তো পশ্চিমা ভোটাররা তাদের অনেক কিছুই বিসর্জন দেবে।

হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের বিশেষজ্ঞ স্টিফেন ওয়াল্ট মনে করছেন, চীন বিজয়ী হতে পারে। ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে তিনি বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে শক্তি এবং প্রভাবের পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করবে। দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর সেরা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং চীন তার প্রাথমিক ভুলগুলো শুধরে ভালো ব্যবস্থাপনা দেখিয়েছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত সংশয়যুক্ত এবং সম্ভবত তা পশ্চিমা ব্র্যান্ডের শক্তি দুর্বল করে তুলেছে।’

অন্যদিকে হেরে যাওয়ার তালিকায় নাম থাকবে ইইউর। দেনা-পাওনা নিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ ইউরোপের মধ্যে কুৎসিত লড়াই আরও বিস্তৃত হয়েছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জোসেপ কন্তে বলেছেন, ইইউ যদি ব্যর্থ হয়, তবে এটি ভেঙে পড়তে পারে। জ্যাক ডিলার্স ইনস্টিটিউটের থিঙ্কট্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোল গেনস্টো বলেছেন, ইইউর প্রস্তুতির অভাব, তার শক্তিহীনতা এবং এর ভীতি বিস্ময়কর।

ইউরোপের প্রধান সান্ত্বনা হতে পারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সন্ধ্যাকালীন সংবাদ সম্মেলনে প্রতিদিনের বিশৃঙ্খলা দেখা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের উপদেষ্টা নাথালি টোকি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘১৯৫৬ সালে যুক্তরাজ্যের বৈশ্বিক ক্ষমতা যেমন সুয়েজ সমস্যার কারণে কমে গিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য করোনাভাইরাস সেই “সুয়েজ মুহূর্ত” ফিরিয়ে আনতে পারে।’