করোনাকালে নির্বাচনের সাহস দেখাল দক্ষিণ কোরিয়ায়

বুধবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা থেকে আগাম ভোটের ব্যবস্থা করেছে দেশটি। গত শুক্রবার থেকে আগাম ভোট শুরু হয়। ছবি: রয়টার্স
বুধবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা থেকে আগাম ভোটের ব্যবস্থা করেছে দেশটি। গত শুক্রবার থেকে আগাম ভোট শুরু হয়। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রায় গোটা পৃথিবী। লকডাউনের কবলে পড়ে ফাঁকা হয়ে আছে বিশ্বের ব্যস্ততম সব শহর। ২৫০ কোটির বেশি মানুষ এখন ঘরবন্দী। তবু মহামারি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার তুমুল শক্তিধর দেশগুলো। এরই মধ্যেও এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। এই করোনাকালে প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচন করছে দেশটি।

করোনার কালে একের পর এক দেশ লকডাউনের মেয়াদ বাড়াচ্ছে। আর আগামীকাল বুধবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা থেকে আগাম ভোটের ব্যবস্থা করেছে দেশটি। গত শুক্রবার থেকে আগাম ভোট শুরু হয়। ইতিমধ্যেই রেকর্ড ৫০ লাখের বেশি আগাম ভোট পড়েছে। ছোট ছোট জটলায় ভোটের প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা। মাস্ক পরেই দিয়েছেন ভাষণ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি, বেতন-ভাতা এবং উত্তর কোরিয়ার নিউক্লিয়ার কর্মসূচি নির্বাচনে প্রভাব রাখার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জে ইনের নেওয়া পদক্ষেপ বাকি সবকিছুকে আড়াল করে দিয়েছে।

প্রাথমিক সুরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমেই ভোটাররা কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি পান। দেশটির প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। অন্য সবার মতোই মাস্ক পরে একটি ভোটকেন্দ্রে আসেন তিনি। তাঁর শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এরপর তিনি হাত ধোয়ার পর প্লাস্টিক গ্লাভস পরে নেন।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা কুড়িয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্বের এক ডজনের বেশি দেশ কোরিয়ার কাছে পরামর্শ চাইছে। দেশটির কাছ থেকে কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধের ব্যবস্থা এবং পরীক্ষার জন্য টেস্ট কিট নিতে চায় তারা। এক জরিপে মহামারি মোকাবিলায় নেওয়া মুন জে ইনের পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ।

দেশটির রাজধানী সিউলের ইয়ুন্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইয়াং সেয়ুং হাম বলছেন, জাতীয় দুর্যোগ বা সংকটের সময় সাধারণত ক্ষমতাসীন দল রক্ষণশীল আচরণ করে। কিন্তু করোনা মহামারির গতি কমিয়ে আনতে পারায় সরকারি দলের পক্ষে চলে গেছে স্রোত।

দক্ষিণ কোরিয়ায় দিনে এখন করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৫০ জনের কম। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে এটি ৯০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ব্যাপক হারে পরীক্ষা, নজরদারি, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক সঙ্গনিরোধ নিশ্চিত করে এ সফলতা পেয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, আজ মঙ্গলবার বেলা একটা পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫৬৪ জন। ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে গেছে সাত হাজারের বেশি। আর দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২১৭ জন।

বুধবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা থেকে আগাম ভোটের ব্যবস্থা করেছে দেশটি। গত শুক্রবার থেকে আগাম ভোট শুরু হয়। ছবি: রয়টার্স
বুধবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা থেকে আগাম ভোটের ব্যবস্থা করেছে দেশটি। গত শুক্রবার থেকে আগাম ভোট শুরু হয়। ছবি: রয়টার্স

এক বছর আগেও নানা কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন প্রেসিডেন্ট মুন। এক জরিপ বলছে, গত ১৬ মাসের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। তাঁর দল ডেমোক্রেটিক পার্টি জনপ্রিয়তায় এখন প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেড ফিউচার পার্টির চেয়ে ১৫ শতাংশ এগিয়ে আছে। দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ আগেও আমাদের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। করোনা মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপের কারণে আমরা নির্বাচন নিয়ে যা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে অনেক ভালো করব।’

নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সাড়ে তিন হাজারের বেশি জীবাণুমুক্ত কেন্দ্রে ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাপমাত্রায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে ভোটারের প্রবেশাধিকার মিলবে না। তবে তাঁদের জন্য বিশেষ বুথে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত তিন হাজারের বেশি রোগী এবং ৯০০ স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য সিউল ও দায়েগু শহরে আলাদা কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নির্বাচনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কায় আছেন দেশটির লাখো নাগরিক। তবে কেন্দ্রে লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করতে হলেও ভোট চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন অনেক নাগরিক। ৫৫ বছর বয়সী জিওন ইয়ং গাইয়ুন বলেন, ‘সব ধরনের সতর্কতা ব্যবস্থা নিয়ে হলেও নির্বাচন এগিয়ে নেওয়া উচিত। তবে ৭৯ বছর বয়সী লি ইয়ং জু বলেন, আক্রান্তের হার কমেছে, কিন্তু বয়স্কদের মৃত্যুহার উদ্বেগজনক। তাই সারা জীবন সব নির্বাচনে ভোট দিলেও এবার ঝুঁকি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত নই।’

তবে দেশটির তরুণ ভোটার পার্ক সিওন মিন বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে দলগুলো বিভিন্ন প্রণোদনার ঘোষণা দিচ্ছে, যার কোনোটাই ভালো লাগছে না। মহামারির কারণে আমি আমার শিক্ষকতার চাকরি হারিয়েছি। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা ভালোই থাকবেন।’

দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে