করোনাকালে রেকর্ড ভোট পড়েছে কোরিয়ায়

ভোটগ্রহণে পালা শেষ, চলছে গণনার প্রস্তুতি। আছে করোনা প্রতিরোধের প্রস্তুতি। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে। ছবি: রয়টার্স
ভোটগ্রহণে পালা শেষ, চলছে গণনার প্রস্তুতি। আছে করোনা প্রতিরোধের প্রস্তুতি। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে বিশ্বজুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যেই বিরল নজির দেখাল দক্ষিণ কোরিয়া। আজ বুধবার দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা গত ২৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত দেড় বছর ধরে নানা সমালোচনার মধ্যে থাকা ক্ষমতাসীন দলটি এবার বড় জয়ে পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

করোনা নিয়ে বিশ্বের নানা দেশের সরকার হিমশিম খাচ্ছে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সমালোচনাও আছে সরকারের। এর ব্যতিক্রম দেখা গেল দক্ষিণ কোরিয়ায়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ভোটারদের মন জয় করে নিয়েছে সরকার। ফলে আগের চেয়ে অনেক বেশি আসন নিয়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দুর্নীতি, তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে না পারার ব্যর্থতাসহ সরকারের বিরুদ্ধে থাকা সব অভিযোগ ভুলে গেছে কোরিয়ার মানুষ।

গত দুই মাস ধরে লকডাউনের কবলে পড়ে ফাঁকা হয়ে আছে বিশ্বের ব্যস্ততম সব শহর। ২৫০ কোটির বেশি মানুষ এখন ঘরবন্দী। হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার তুমুল শক্তিধর দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া বেশ কিছু রাজ্যে স্থগিত করেছে। ফ্রান্স বেশ কিছু স্থানীয় নির্বাচন স্থগিত করেছে। আর এ করোনাকালে প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচন করে দেখাল কোরিয়া।

প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে জীবাণু প্রতিরোধে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এক মিটার দূরত্ব রেখে ভোটারেরা কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ান। মাস্ক ও গ্লাভস পড়ে ভোটকেন্দ্রে যান। এর আগে ভোটারদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এর আগে গত শুক্রবার থেকে আগাম ভোটগ্রহণ শুরু হয়। রেকর্ড ৫০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দেন। আজ স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। প্রায় ১৪ হাজার কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হয়। করোনা রোগী ও তাদের চিকিৎসায় দায়িত্বরতদের জন্যও ভোট দেওয়ার আলাদা ব্যবস্থা ছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি, বেতন-ভাতা এবং উত্তর কোরিয়ার নিউক্লিয়ার কর্মসূচি নির্বাচনে প্রভাব রাখার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় দেশটির বর্তমান রাষ্ট্রপতি মুন জে ইন এর নেওয়া পদক্ষেপ বাকি সবকিছুকে আড়াল করে দিয়েছে। বুথ ফেরত জরিপ বা এক্সিট পোল বলছে, অন্তত ১৫৫টি আসন পেতে পারে সরকারি দল ডেমোক্রেটিক পার্টি। যদিও এর আগের নির্বাচনে ১২০টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করেছিল দলটি।

২৯ বছর বয়সী ভোটার কায়ুং ইয়ুন লি বলেন, করোনার কারণে সৃষ্ট সংকট সমাধান করে দেশটিকে জোরালো কাঠামোর মধ্যে আনার তাগিদ থেকে ভোট দিতে গিয়েছি।

২১টি রাজনৈতিক দলের ১১০০ প্রার্থী ২৫৩ আসনের সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। বাকি ৪৭ আসনের জন্য দলীয় সমর্থন পেয়ে জয়ী হতে আরও ৩০০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভারিস্ক ম্যাপলক্রপ্টের এশিয়ার ঝুঁকি বিশ্লেষণ বিভাগের প্রধান মিয়া হিবারনিক বলেন, অনেক দেশ করোনা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনে এসব দেশের সরকার বিপর্যয়ে পড়তে পারে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের ভূমিকা বিরল দৃষ্টান্ত। তাই ভোটাররা সরকারের অতীতের সব অপকর্ম ক্ষমা করে দিয়েছে।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা কুড়িয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্বের এক ডজনের বেশি নেতা কোরিয়ার কাছে পরামর্শ চাইছে। দেশটির কাছ থেকে কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধ ব্যবস্থা ও পরীক্ষার জন্য টেস্ট কিট নিতে চান তাঁরা। ব্যাপক হারে পরীক্ষা, নজরদারি, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও বিদেশ থেকে আগতদের বাধ্যতামূলক সঙ্গনিরোধ নিশ্চিত করে এ সফলতা পেয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশটিতে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫৯১ জন। ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে গেছেন সাত হাজারের বেশি। আর দেশটিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২২৫ জন।

দ্য গার্ডিয়ান, ব্লুমবার্গ, আল জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে