করোনা ঠেকিয়ে বিপুল বিক্রমে ফের ক্ষমতায়

দক্ষিণ কোরিয়ার ভোটার সাফল্যের সঙ্গে করোনা মোকাবিলার জন্য এবার সরকারি দলকেই বেছে নিলেন। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ কোরিয়ার ভোটার সাফল্যের সঙ্গে করোনা মোকাবিলার জন্য এবার সরকারি দলকেই বেছে নিলেন। ছবি: রয়টার্স

করোভাইরাস জনিত পরিস্থিতিতে বিশ্বের অনেক দেশের শাসকদের গদি নড়বড়ে হয়ে গেছে। সামলাতে না পেরে জনগণের সমালোচনার মুখে আছেন তাঁরা। ছয় সপ্তাহ আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারও করোনা সামলানো নিয়ে সমালোচনার মধ্যে পড়েছিল। আগের দেড় বছর ধরেও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ছিল। কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণই বদলে দিল সব কিছু। এখন বিপুল বিক্রমে ফিরছে ক্ষমতায়।

করোনাকালের মধ্যেই গতকাল বুধবার দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ভূমিধস জয় পেয়েছে সরকারি দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮০টি আসন পেয়েছে তারা। যদিও এর আগেরবার ১২০টি আসন পেয়েছিল তারা। দেশটির গত ২৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছে করোনাকালে হওয়া এ নির্বাচনে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেকোনো দেশের পরবর্তী নির্বাচনে সরকারি দলের জয়-পরাজয়ের কারণ হতে পারে করোনা।

দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনৈতিক মিনতারো ওবা বলেন, এ নির্বাচন সবাইকে বার্তা দিল, জাতীয় দুর্যোগের সময় স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে দেওয়া নেতৃত্বই জনগণ পছন্দ করে।

নির্বাচনে জয়ের পর প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন বলেছেন, জাতীয় দুর্যোগে সরকারের আন্তরিক ও একাগ্র ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ভোটে তাদের পক্ষে রায় দিয়েছে জনগণ। এ সমর্থন সরকারকে জনগণের প্রতি আরও দায়িত্বশীল করবে। জনগণের কথা শোনায় আরও বেশি মনোযোগী হব আমরা।

দুর্নীতি, তরুণদের জন্য নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করতে না পারার ব্যর্থতাসহ সরকারের বিরুদ্ধে থাকা সব অভিযোগ ভুলে গেছে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ। দেড় বছর ধরে এ সরকারের সমালোচনা করছিল নাগরিকেরা। করোনা পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া বেশ কিছু রাজ্যে স্থগিত করেছে। ফ্রান্স বেশ কিছু স্থানীয় নির্বাচন স্থগিত করেছে। আর এই করোনাকালে প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচন করে বিজয় দেখাল দক্ষিণ কোরিয়া।

নির্বাচনের পর দক্ষিণ কোরিয়াকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইকেল পম্পেও। তিনি বলেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করে দেখিয়েছে কোরিয়া।

প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে জীবাণু প্রতিরোধে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এক মিটার দূরত্ব রেখে ভোটারেরা কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ান। মাস্ক ও গ্লাভস পড়ে ভোটকেন্দ্রে যান। ভোটারদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এর আগে গত শুক্রবার থেকে আগাম ভোটগ্রহণ শুরু হয়। রেকর্ড ৫০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দেন। প্রায় ১৪ হাজার কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হয়। করোনা রোগী ও তাদের চিকিৎসায় দায়িত্বরতদের জন্যও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল আলাদা কেন্দ্রে।

নির্বাচনে জয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান লি হা চ্যান বলেছেন, ‘জনগণ সমর্থন দিয়ে আমাদের পুরস্কৃত করেছে। করোনাভাইরাস যুদ্ধ মোকাবিলা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমাদের সর্বোচ্চটাই আমরা করব।’

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা কুড়িয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশটিতে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৬১৩ জন। ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে গেছেন সাত হাজারের বেশি। আর দেশটিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২২৯ জন।

নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান, ব্লুমবার্গ, আল জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে