দুশ্চিন্তা কাটাতে নিতে পারেন ২০ মিনিটের 'ন্যাচার পিল'

প্রকৃতির সংস্পর্শে ২০ মিনিট সময় কাটালে আপনার দুশ্চিন্তা সংশ্লিষ্ট হরমোনের মাত্রা কমে আসবে। ছবি: এএফপি
প্রকৃতির সংস্পর্শে ২০ মিনিট সময় কাটালে আপনার দুশ্চিন্তা সংশ্লিষ্ট হরমোনের মাত্রা কমে আসবে। ছবি: এএফপি

যদি আপনি বিশেষ করে আজকের দিনে উৎকণ্ঠা বোধ করেন, তাহলে এই গবেষণা আপনার জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণাটি বলছে, উৎকণ্ঠা কাটাতে দিনের সময় থেকে আপনি ২০ মিনিট সময় শুধু নিজের জন্য বের করে নিন। এমন একটি জায়গায় বসুন, যেটা আপনাকে প্রকৃতির সংস্পর্শ থাকার উপলব্ধি দেয়।

২০১৯ সালের ওই গবেষণা বলছে, প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকার ওই ২০ মিনিট উল্লেখযোগ্যভাবে দুশ্চিন্তা সংশ্লিষ্ট হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

উদ্বেগ কমিয়ে মনকে প্রফুল্ল রাখার জন্য ওই ২০ মিনিটকে ‘ন্যাচার পিল’ বা 'প্রাকৃতিক দাওয়াই' উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইতিবাচক খবরের সাইট গুড নিউজ নেটওয়ার্ক। এতে বলা হয়, এই প্রথমবার কোনো গবেষণায় প্রকৃতির ছোঁয়ায় ঠিক কতক্ষণ সময় কাটানো প্রয়োজন সেটি জানা গেছে।

আধুনিক সময়ের দুশ্চিন্তা কাটাতে শহরের মানুষের জন্য এই ‘প্রাকৃতিক দাওয়াই’কে সবচেয়ে কার্যকরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ফ্রন্টইয়ার্স ইন সাইকোলজি এই গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশ করে তা স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের প্রয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের সহযোগী অধ্যাপক ম্যারি ক্যারল হান্টার ওই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জানি যে, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটালে দুশ্চিন্তা কমে। তবে এটা স্পষ্ট ছিল না যে সেটার জন্য কতক্ষণ সময় কাটানো যথেষ্ট, কতবার কাটাতে হবে বা কী ধরনের প্রকৃতির সংস্পর্শে আসার অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। আমাদের গবেষণা দেখিয়েছে, দুশ্চিন্তা উদ্রেককারী হরমোন করটিসলের মাত্রা কমিয়ে আনতে আপনাকে ২০ থেকে ৩০ মিনিট এমন একটি জায়গায় বসতে বা হাঁটতে হবে, যা আপনাকে প্রকৃতির সংস্পর্শে আসার বোধ দেবে।’

গবেষকেরা জানিয়েছেন, সারাক্ষণ স্ক্রিনে চোখ রাখা ঘরে আবদ্ধ শহুরে জীবন যাপন প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা কাটাতে ‘ন্যাচার পিল’ বা ‘প্রাকৃতিক দাওয়াই’ স্বল্পমূল্যের একটি সমাধান হতে পারে। অধ্যাপক হান্টার ও তাঁর সহকর্মীরা গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ওপর আট সপ্তাহ ধরে সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন ১০ মিনিট বা এর বেশি সময়ের ‘ন্যাচার পিল’ প্রয়োগ করেছেন। প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করটিসল হরমোনের মাত্রা পরীক্ষায় ‘ন্যাচার পিল’ নেওয়ার আগে ও পরে অংশগ্রহণকারীদের সালিভা (মুখের লালা) নমুনা নেওয়া হয়।

অধ্যাপক হান্টার বলেন, ‘অংশগ্রহণকারী কোন সময়ে, কত ক্ষণ এবং কোথায় তাঁদের প্রকৃতির সংস্পর্শে আসার অভিজ্ঞতা নেবেন সে স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ওই সময়টায় দুশ্চিন্তা বাড়ায় এমন কিছু জিনিস থেকে তাঁদের দূরে থাকতে বলা হয়। অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়, দিনের আলোতে ন্যাচার পিল নিন, ওই সময়টায় অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করবেন না এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইন্টারনেট, ফোন, আলাপ–আলোচনা ও বই পড়া থেকে বিরত থাকুন।’

অধ্যাপক হান্টার আরও বলেন, ন্যাচার পিল প্রয়োগের পর চার ধাপে অংশগ্রহণকারীদের করটিসলের মাত্রা পরীক্ষা করা হয় এবং এতে মাত্রা পরিবর্তনের পার্থক্য ধরা পড়ে। করটিসল মাত্রায় এই প্রাকৃতিক ছোঁয়া কতটুকু প্রভাব ফেলে তা নির্ণয় এবং কতক্ষণ সময় কাটালে তা কার্যকর হবে সেটা শনাক্ত করা সম্ভব হয়। পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, করটিসলের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে মাত্র ২০ মিনিটই যথেষ্ট। তবে যদি কেউ আরও একটু বেশি সময় নেন, ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় বসেন বা হাঁটেন, তাহলে করটিসলের মাত্রা সর্বোচ্চ হারে কমে আসে।

চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা দানকারীরা তাঁদের ওষুধের ব্যবস্থাপত্রে এই নেচার পিল যুক্ত করতে পারেন উল্লেখ করে অধ্যাপক হান্টার জানান, দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবন যাপনের প্রেক্ষাপটে দুশ্চিন্তা দূর করতে প্রকৃতিতে কত ক্ষণ সময় কাটাতে হবে সেটা এই প্রথম কোনো গবেষণায় উঠে এসেছে।এটার ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে আরও গবেষণার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, বয়স, লিঙ্গ, ঋতু, শারীরিক সক্ষমতা এবং সংস্কৃতি কিভাবে প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোর এই বিষয়টিতে প্রভাব ফেলে তা দেখা হবে। এসবের ওপর ভিত্তি করে ন্যাচার পিল পরামর্শের ধরনেও পরিবর্তন আনা যাবে। পাশাপাশি এর ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ হতে পারে শহর, নেওয়া যেতে পারে জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন কর্মসূচি।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াইয়ে মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে আপনিও গ্রহণ করতে পারেন ন্যাচার পিল গ্রহণের এই পরামর্শ। প্রকৃতির সংস্পর্শে আসার বোধ হয় এমন কিছুতে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। খোলা বারান্দায় গিয়ে প্রাণভরে শ্বাস নিন। বাগানে বা ছাদে হাঁটুন। গাছ থাকলে গাছের সঙ্গে সময় কাটান। দুশ্চিন্তা কাটিয়ে মনকে চাঙা করতে খুব বেশি সময় তো আপনার লাগবে না। মাত্র ২০ মিনিট।