এক শর নিচে নামল টোকিওর দৈনিক করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চলতি মাসের ১৩ তারিখে জাপানের রাজধানীতে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে গত প্রায় দুই সপ্তাহে দৈনিক হিসাব ঊর্ধ্বমুখী ছিল। গত দুদিনে তা কিছুটা নেমে গেলেও আজ প্রথমবারের মতো হিসাব ১০০–এর নিচে নেমেছে।

টোকিওতে আজ রোববার করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা ছিল ৭২। গতকালের (১০৩) চেয়ে যথেষ্ট কম। ফলে জাপানের উদ্বিগ্ন প্রশাসন ও চিকিৎসাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের মনেও কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে কেউই অবশ্য একে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার সাফল্যের সুনির্দিষ্ট চিহ্ন হিসেবে দেখছেন না। কারণ, চলমান গোল্ডেন উইকের ছুটিতে নাগরিক আচরণ কোন দিকে মোড় নেয়, তার ওপর হিসাবের ওঠানামা অনেকাংশে নির্ভর করবে। ফলে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হবে, নাকি আরও কিছুদিনের জন্য তা বাড়িয়ে নেওয়া হবে, প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের প্রশাসন সেই সম্ভাবনা এখন সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করে দেখছে।

এরই মধ্যে প্রয়োজন দেখা না দিলে ঘরের বাইরে না যাওয়ার বিষয়ে প্রশাসনের জানানো আহ্বানে নাগরিকেরা দৃশ্যত সাড়া দিতে শুরু করেছেন। মোবাইল ফোন কোম্পানি এনটিটি দোকোমোর সংগ্রহ করা উপাত্তে দেখা গেছে, দেশের বড় নগরকেন্দ্রগুলোতে পথচারী সমাগম চলতি সপ্তাহান্তে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। টোকিওর ব্যস্ত এলাকা শিনজুকুতে পথচারী চলাচল হ্রাস পেয়েছে ৭৮ শতাংশ; অন্যদিকে ইয়োকোহামা, কিওতো ও নাগোইয়া স্টেশনের আশপাশের এলাকায় হ্রাসের হার হচ্ছে ৭০ শতাংশের বেশি। গোল্ডেন উইক শুরু হওয়ার মুখে রোববার টোকিও থেকে অন্যান্য বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা করা শিনকানসেন বুলেট ট্রেনে প্রায় ৯০ শতাংশ আসন খালি ছিল বলে রেল কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এই প্রবণতা চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার দৈনিক হিসাব আরও কমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন।


তবে পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি কিছুটা লক্ষ করা গেলেও অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে সবকিছু বন্ধ থাকলে, তা আগামী দিনে আরও মারাত্মক প্রতিক্রিয়া অর্থনীতির ওপর ফেলতে পারে—যা কিনা জাপানের সমাজ জীবনকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। বিনা মূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসা ফ্রি নামের একটি নাগরিক গ্রুপের চালানো এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ পার্টটাইম কাজের আয় কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ৪০ শতাংশ জানিয়েছে যে বাবা-মায়ের আয় কমে যাওয়ার তাদের আর্থিক দিক থেকে অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে। সে রকম অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি ১৩ জনের মধ্যে ১ জনকে লেখাপড়ায় ইতি টানার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।

মাস্ক–সংকটে জাপানের প্রধানমন্ত্রী
জাপানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে দেখা দিয়েছিল ফেস মাস্কের সংকট। এই মারাত্মক ঘাটতি পূরণ করে নিতে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দেশের প্রতিটি পরিবারকে বিনা মূল্যে দুটি করে একাধিকবার ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের তৈরি মাস্ক সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই পদক্ষেপে তখন জনগণের প্রশংসা কুড়ালেও এখন সেই মাস্ক জাপানের প্রধানমন্ত্রীর জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত সপ্তাহে মাস্কের সরবরাহ ডাকযোগে বিভিন্ন ঠিকানায় পৌঁছাতে শুরু করার পর থেকে নতুন এই সমস্যার মুখে আবে প্রশাসনকে পড়তে হয়। দেশের প্রায় ৫ কোটি তালিকাভুক্ত ঠিকানার প্রতিটিতে দুটি করে মাস্ক পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার চারটি কোম্পানির কাছে ক্রয়াদেশ দিয়েছিল।


অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫ লাখ মাস্ক পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি নার্সিং সেবা ও বৃদ্ধদের কল্যাণকেন্দ্রের জন্য প্রায় ২ কোটি মাস্ক এবং সেই সঙ্গে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনুমানিক ৮০ লাখ মাস্ক শুরুতে পৌঁছে দেওয়ার মধ্য দিয়ে গত মাসের শেষ দিকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। তবে প্রথম দফার চালানে ত্রুটিপূর্ণই কেবল নয়, একই সঙ্গে অপরিষ্কার মাস্ক দেওয়ার পর থেকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সরকারকে পড়তে হচ্ছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর এই অগ্রাধিকার কর্মসূচি এখন বন্ধ করা হয়েছে এবং পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।


জাপানের পার্লামেন্টেও, বিশেষ করে মাস্ক সংগ্রহের ঠিকাদারি দায়িত্ব কীভাবে বণ্টন করা হয়, তা নিয়ে বিরোধী দলের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। বিরোধী সাংসদেরা মাস্ক সরবরাহ করা চার কোম্পানির নাম প্রকাশের দাবি জানানোর পর সরকারের পক্ষ থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে চতুর্থ কোম্পানির নাম আড়াল করে রাখা হচ্ছে। ফলে মাস্ক নিয়ে অসাধু তৎপরতায় সরকারের ভেতরের কিছু লোকজনের জড়িত থাকা নিয়ে সন্দেহ করছেন বিরোধীদলীয় সাংসদেরা এবং চতুর্থ সেই কোম্পানির পরিচয় তুলে ধরার জোর দাবি তোলা হচ্ছে।