লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণ-মৃত্যু বাড়ছে

এখন করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, পেরু, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ কয়েকটি দেশে। ছবি: রয়টার্স
এখন করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, পেরু, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ কয়েকটি দেশে। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে। তবে চীনের বাইরে যে দেশগুলোয় সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছিল, সেসব দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এখন মহামারি প্রকট হয়ে উঠছে অন্য দেশগুলোয়। এর মধ্যে লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমেই বাড়তির দিকে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সর্বশেষ তথ্য প্রতিমুহূর্তে হালানাগাদ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। তাদের তথ্যমতে, আগের দিন শনিবার বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৬৯ জনের। গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা নাগাদ বিশ্বে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল দুই লাখ চার হাজারের বেশি। আর আক্রান্ত ২৯ লাখ ৩৫ হাজার।

গত জানুয়ারির শুরুর দিকে চীন থেকে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গত প্রায় চার মাসে দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৩০ লাখ ছুঁই ছুঁই।

চীনের বাইরে ইউরোপ হয়ে উঠেছিল করোনা মহামারির উপকেন্দ্র। ওই অঞ্চলের দেশ ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। মৃত্যুও এখনো পর্যন্ত বেশি এই অঞ্চলে। পরে ইউরোপের বাইরে মহামারি প্রকট হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রে। তবে এই দেশগুলোয় এখন মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সংক্রমণ বেড়েই চলেছে রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, পেরু, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ কয়েকটি দেশে।

সিএনএন জানায়, স্পেনে গতকাল রোববার থেকে শিশু-কিশোরদের ঘরের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইউরোপের এই দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সোয়া দুই লাখ। মৃত্যু হয়েছে ২৩ হাজারের বেশি। তবে দেশটিতে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে। গত শনিবার স্পেনে মারা গেছেন ৩৭৮ জন।

ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, স্পেনে ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৯৬১ জনের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে দৈনিক মৃত্যুর হার নিম্নগামী। আর গত ২৬ মার্চ সর্বোচ্চ ৮ হাজার ২৭১ জন সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে দেশটিতে সংক্রমিত রোগীর দৈনিক শনাক্ত হার কমছে।

ইউরোপে করোনাভাইরাসের মহামারি প্রথম প্রকট হয়ে ওঠে ইতালিতে। এই দেশটিতেও এখন সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে। শনিবার দেশটিতে মারা গেছেন ৪১৫ জন। এ নিয়ে মৃত্যু ২৬ হাজার ছাড়ায় ইতালিতে। দেশটিতে গত ২৭ মার্চ করোনায় সর্বোচ্চ ৯১৯ জনের মৃত্যু হয়। তারপর থেকে মৃত্যু কমতে শুরু করেছে ইতালিতে। আর ২১ মার্চ সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৫৫৭ জন সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে এই সংখ্যাও কমছে।

এখন করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, পেরু, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ কয়েকটি দেশে। ছবি: রয়টার্স
এখন করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, পেরু, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ কয়েকটি দেশে। ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সে মৃত্যু ২৩ হাজার ছুঁই ছুঁই। দেশটিতে শনিবার মারা যান ৩৬৯ জন। ১৫ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৩৮ জন মারা যান। এরপর থেকে দৈনিক মৃত্যুহার কমছে। ৩ এপ্রিল ১৭ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। এদিনই দেশটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে দৈনিক রোগী শনাক্ত হওয়ার হার কমছে। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে জার্মানিতেও।

যুক্তরাজ্যে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দেশটিতে গত শনিবার করোনায় মোট মৃত্যু ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তবে দেশটিতে নতুন সংক্রমণের হার কমছে। ১০ এপ্রিল দেশটিতে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে দৈনিক রোগী শনাক্তের হার অপেক্ষাকৃত কম।

যুক্তরাষ্ট্রেও এখন থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও দেশটিতে শনিবারও দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। দেশটিতে মোট মৃত্যু এরই মধ্যে ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত রোগী রয়েছে ৯ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। দেশটিতে গত শুক্রবার সর্বোচ্চ ৩৮ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। তবে যে নিউইয়র্কে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি, সেখানে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এই অঙ্গরাজ্যে শনিবার মৃত্যু হয় ৬১৭ জনের। সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে তুরস্কেও। দেশটিতে ২ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন এ পর্যন্ত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানেও সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে এসেছে।

তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে রাশিয়া, ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশে। রাশিয়ায় রোগীর সংখ্যা ৮১ হাজার ছুঁই ছুঁই। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৭৫০ জনের। লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে মৃত্যু ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। ব্রাজিলে রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর দৈনিক হার ঊর্ধ্বমুখী। এই অঞ্চলের দেশ পেরু ও ইকুয়েডরেও রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বাড়ছে চিলি ও কলম্বিয়াতেও।

এনডিটিভি জানায়, ভারতে গতকাল পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ২৭ হাজার। এর মধ্যে গতকালই শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ২ হাজার। এ পর্যন্ত এ দিনই ভারতে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন। দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮২৬ জন।

পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন-এর অনলাইনের তথ্যানুসারে, সেখানেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৩ হাজারের বেশি। মারা গেছেন ২৭৭ জন। সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে ইন্দোনেশিয়ায়ও। দেশটিতে এ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ছুঁই ছুঁই। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৭৫০ জনের।

এদিকে সিএনএন জানায়, গতকাল হংকংয়ে সংক্রমিত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ বলেছে, হংকংয়ে রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৭ থেকে বাড়েনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জনগণের প্রতি সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন মেনে চলা অব্যাহত রাখতে আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

আর চীনের উহান শহরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সব রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ৩১ ডিসেম্বর এই শহরেই মানুষের অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের মুখপাত্র মি ফেং গতকাল বলেন, উহানে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সব রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সবার সর্বাত্মক চেষ্টায় গতকাল নাগাদ এটি সম্ভব হয়েছে।